দ্বিতীয় পর্ব
(৫.) ‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি, জাগতে দাও, জাগতে দাও’...ব্যতিক্রমী অনুভবের শিহরণ জাগানো গান
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে আমরা যতো গান শুনেছি, তার মধ্যে অনেকগুলো গানই ছিল একাধিক শিল্পির গাওয়া সমবেত সংগীত। এমনিতে যে কোন গানের রিহার্সেলের ক্ষেত্রে আমরা সচরাচর দেখি যে একটি সমবেত সঙ্গীত সবার কণ্ঠে সমান তাল ও লয়ে সঠিকভাবে গাওয়ানো খুব কঠিন ব্যাপার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ে, স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই ক্ষুদ্র পরিসরে, নানা অনিশ্চয়তা, প্রতিবন্ধকতা ও টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতার মাঝেও যেভাবে অসাধারণ সব ‘রক্তে অণুরণন জাগানো’ সমবেত সংগীত গীত হয়েছে ও রেকর্ড করা হয়েছে, তা ভাবলে অবাকই হতে হয়। স্বাধীন বাংলা বেতারের অনেক শিল্পীরাই তাদের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনায় খুব অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে এক একটি অসাধারণ গান কীভাবে সমবেত কন্ঠে ধারণ করা হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়েছেন।
আমি নিজে এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের যতোগুলো সমবেত সংগীত শুনেছি তার মধ্যে অসাধারণ মনে হয়েছে ‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি, জাগতে দাও, জাগতে দাও......বজ্রের তালে তালে কন্ঠ মিলায়ে শপথ নাও, শপথ নাও...’ গানটি। এ গানটির দ্বিতীয় লাইনের ‘বজ্রের তালে তালে কন্ঠ মিলায়ে শপথ নাও, শপথ নাও...’ আহ্বানটি আমার কাছে খুবই অসাধারণ মনে হয়। সমবেত কন্ঠের ‘শপথ নাও, শপথ নাও...’-এই দৃপ্ত চীৎকারটিকে একটি ঐতিহাসিক শপথের সুদৃঢ় উচ্চারণ বলেই মনে হয়েছে বারবার। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে প্রকাশিত STEREO লং প্লে রেকর্ডে সুরকার সমর দাশ-এর পরিচালনায় এ গানটিকেও নতুন করে রেকর্ড করা হয়। আমি যতোবার সে রেকর্ড থেকে এ গানটি শুনেছি, একটি অসাধারণ দৃপ্ত শপথের ঐতিহাসিক অণুরণণের শিহরণ আমাকে বারবার ছুয়ে গেছে!
আমি যতোদূর জেনেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোলকাতার কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের উদ্যোগে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের গান ও ধারা বর্ণনা সমন্বয়ে একটি লং প্লে বের করা হয়েছিল যেখানে প্রথম এ গানটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কোলকাতার সেই লং-প্লের সম্পূর্ণ অংশটি স্বাধীনতার পর খুব সম্ভবতঃ ১৯৮৫ সালের দিকে একুশের বইমেলা থেকে কেনা একটি ক্যাসেটের মধ্যে আমি পেয়ে যাই। সেই ক্যসেটটি আমি যতোবার শুনেছি- এক অপরূপ মোহনীয় মুগ্ধতায় আমি আবিষ্ট হয়েছি। .... সেই ক্যাসেটে মরহুম গোলাম মোস্তফার কণ্ঠে ‘রক্ত চোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো....’ শীর্ষক অসাধারণ আবৃত্তিটিও সংযোজিত ছিল।
ক্যাসেটটি একসময় আমার কাছ থেকে হারিয়ে যায়। এই ক্যাসেটটি আমি এখনও মাঝে মধ্যেই খুঁজে বেড়াই। প্রায়ই ভাবি, কারো কাছ থেকে কোলকাতা থেকে ১৯৭১-এ প্রকাশিত অরিজিনাল লং-প্লে টি পাওয়া গেলে আরো ভালো হতো। গানগুলোকে এমপিথ্রি-তে কনভার্ট করে ই-স্নিপ্স-এ আপলোড করা যেত! বিশেষ করে এই গানটি এবং গোলাম মোস্তফার কণ্ঠের অসাধারণ আবৃত্তি ‘রক্ত চোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো....’ ইন্টারনেটের আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে দেবার ইচ্ছে আমার অনেকদিনের!
(৬.) একজন আপেল মাহমুদ এবং একটি ফুলকে বাঁচানোর কালজয়ী এক গান
যদি বলা যায়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কোন গানটি এ দেশের যে কোন মানুষ একটি লাইন হলেও অবলীলায় সঠিক সুরে গেয়ে শোনাতে পারবে, তবে নিশ্চয়ই সবাই আপেল মাহমুদ এর কণ্ঠে গাওয়া ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ গানটির কথাই বলবেন। এই গান এমন এক গান, যা কথার সৌকর্য্যে, সুরের মোহনীয়তায় আর শিল্পীর দরদী কন্ঠের আবেগে এক দ্বিধাহীন অমরত্ব পেয়েছে এ দেশের মানুষের মধ্যে বহু আগেই! আমি অনেক স্থানে দেখেছি এই গানটি গাইতে গিয়ে অনেক শিল্পীই প্রথমে শুরু করেন মাঝখানের সেই অসাধারণ লাইনটি দিয়ে- “যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা, যার নদী-জল ফুলে-ফলে মোর স্বপ্ন আঁকা...”।...
১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে প্রকাশিত লং প্লে রেকর্ডে সেই কালজয়ী গান ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ র পুনঃ রেকর্ডিং এর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ও বিশিষ্ট সুরকার সমর দাশ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আপেল মাহমুদ-কে দিয়েই গানটি পুনরায় রেকর্ড করান।
ইতিহাস হয়ে যাওয়া একটি কালজয়ী গান কেমন অবয়ব পেলো স্বাধীনতার ১৬ বছর পরের সেই পুনঃ রেকর্ডিং- এর সময়? একটি ফুলকে বাঁচানোর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া লক্ষ- কোটি মানুষেরা কী একাত্তরের মতোই কোন অসাধারণ আনন্দ-প্রত্যয় অথবা ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ আবেগ-আপ্লুত অনুভবের মুখোমুখী হয়েছিলেন এ গানে?
যতোদূর মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর আপেল মাহমুদের গাওয়া একটি আধুনিক গান ‘লিখেছো আর না আসিতে, রজনী কেটে গেল ভাবিতে ভাবিতে’ ঢাকা বেতারের বিজ্ঞাপন তরঙ্গে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু তারপরই বেশ কিছুদিনের জন্য আপেল মাহমুদ অনেকটাই সংঙ্গীত জগত থেকে হারিয়ে যান।.... এবং সম্ভবতঃ সুরকার সমর দাশ-ই ১৯৮৭ সালে তার সেই লং-প্লের গান-রেকর্ডিং এর সময় আবার আপেল মাহমুদকে নতুন উদ্যমে গান গাইবার প্রেরণায় উজ্জীবিত করেন। সুরকার সমরদাশের পরিচালনায় নতুনভাবে রেকর্ড করা এ গানটির মিউজিক কম্পোজিশানেও সেসময় কিছুটা বৈচিত্র্য আনা হয়েছিল। তবে আপেল মাহমুদকে ১৯৭১-এ গাওয়া তার মূল গানের মতো এই রেকর্ডের গানে ততোটা স্বাচ্ছন্দ্য মনে হয়নি।
(৭.) “তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে...” অন্তহীণ সুতীব্র বাঁধা অতিক্রমের শপথে উজ্জীবিত গতিময় এক গান
‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবোরে...’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনুভব অনুভূতির সাথে একাকার হয়ে যাওয়া আরেক অসাধারণ গান। এই গানের মধ্যম অংশে রয়েছে অসাধারণ কথা আর সুরের সংমিশ্রনে এরকম চারটি অনবদ্য লাইন-
জীবনের রঙে মনকে টানেনা........ (মনকে টানেনা....)
ফুলের ঐ গন্ধ কেমন জানিনা.... (জানিনা.... জানিনা.... জানিনা.....)
জ্যোছনার দৃশ্য চোখে পড়েনা..... ( না..... না...... না.....)
তারাও তো ভুলে কভু ডাকে না.....
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আমাদের সার্বিক অবস্থা বোঝানোর জন্য এই গানের চারটি লাইনই বোধহয় যথেষ্ট। যখন জীবনের রঙ, ফুলের গন্ধ, আর জ্যোছনার অপরূপ সৌন্দর্য্যও তাকিয়ে দেখার মতো অবকাশ কারো ছিলো না, যখন বৈশাখের রুদ্র ঝড়ে আকাশ ভেঙে পড়লে, খেয়া পাল আরো ছিড়ে গেলে, দিন-রাত্রি আর ঘড়বাড়ির ঠিকানা না জানা মানুষ অসহায়ভাবে বুঝতে পেরেছে-
জানি শুধু চলতে হবে....খেয়া পাড়ে নিতেই হবে
আমি যে সাগর মাঝি রে.....।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে একবার এক নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সাহস করে এই গানটি গাইলাম। এই গানটি গাওয়ার সময় গানের মাঝখানে ‘বৈশাখেরই রুদ্র ঝড়ে আকাশ যখন ভেঙে পড়ে, খেয়া পাল আরো ছিঁড়ে যায়..’ এই লাইনটির পর যে উচ্চস্বরের টানটি রয়েছে (যেটি মূল গানের ক্ষেত্রে রথীন্দ্রনাথ রায় খুব সুন্দরভাবে দিয়ে থাকেন), আমি সেটাও বাদ দিলাম না।যদিও এই টানটি দেওয়ার সময় দম খুব কঠিন এক পর্যায়ে চলে যায়, তবুও আমি মূল গানের ধারার সাথে মিল রেখে টানটি দিয়ে বসলাম....। গানে আমি অপটু বলেই ঐ টান দিতে গিয়ে তবলার তাল টাল এর সাথে মিল রাখা আর সম্ভব হল না...।
কোনমতে গান শেষে স্টেজ থেকে নীচে নামলাম। কী আশ্চর্য্য! পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তদানীন্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডঃ হারুণ অর রশীদ এসে আমার পিঠে হাত দিলেন। ‘ভালো হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে, খুবই সুন্দর হয়েছে!’ আমি আমতা আমতা করে বলতে চাইলাম, ‘স্যার, মাঝে মাঝে তাল কেটে গেছে!’ কিন্তু স্যার আমার কোন কথাই শুনতে চাচ্ছেন না। তিনি তখন আবেগ নিয়ে পাশের আরেক শিক্ষককে বলে যাচ্ছেন, ‘দেখেছেন, ওর গলাটা কত উঁচুতে উঠেছিল, দেখেছেন?’
বহুদিন পর আজ এ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, আমার গান তেমন ভালো না হওয়া সত্ত্বেও হারুন স্যারের কাছে যে কারণে সেদিন এতো ভালো লেগেছিল সেটি হচ্ছে, এসব গানের প্রতি তাঁদের মতো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের অপরিসীম ভালো লাগা বোধ। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই আসামান্য গানগুলো মোটামুটি সুর বজায় রেখে (খালি গলাতে হলেও) যে কেউই গেয়ে শোনাক না কেন, আজীবন তা দেশপ্রেমিক মানুষদের ভালোলাগায় ও ভালবাসায় সিক্ত হবেই....। এ গানগুলোর অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তি ও মুগ্ধ করে দেবার ক্ষমতা এমনই শাশ্বত প্রবল।
(৮.) “চাঁদ, তুমি ফিরে যাও....” প্রত্যাশার অপরূপ চাঁদও যেভাবে অনাকাঙ্খিত হয়ে উঠেছিল একাত্তরে...
যদি বলা যায় এ দেশের বেশিরভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের কোন গানটির বিষয়ে সবচেয়ে কম অবগত, তবে এই গানটির কথাই বলতে হয়। আজকের প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গানের কথা বলতে গেলে আমি এই গানটির কথা একবার হলেও বলি। গত ১৬ই ডিসেম্বরে অ্যরিল ও জানা আপা সহ আমরা বেশ কয়েকজন ব্লগার যখন বিজয় র্যােলী শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়েছিলাম, তখন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমি এই গানটির কথাই বলেছিলাম এবং খেয়াল করেছিলাম অনেক ব্লগারই এ গানটির কথা ইতিপূর্বে কখনো শোনেননি।
১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের জীবনে ঈদ এসেছিল বর্ষপঞ্জীর স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু গোটা জাতী যখন পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচার আর নিপীড়নে বিপর্যস্ত, মানুষের আর্তনাদ আর হাহাকারে যখন ভারী হয়ে উঠেছে এ দেশের বাতাস, যখন ক্ষোভ আর প্রতিশোধের অগ্নিশিখায় বিপন্ন নীলের আকাশ হয়ে উঠেছে রক্তলাল, তখন ঈদের একফালি আনন্দের চাঁদও যেন গীতি-কবির কাছে হয়ে উঠলো অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত কোন বিষয়। তাই তীব্র এক হাহাকার আর বেদনার আবেগ নিয়েই যেন তিনি লিখে ফেললেন –
চাঁদ তুমি ফিরে যাও, ফিরে যাও, ফিরে যাও, ফিরে যাও
চাঁদ তুমি ফিরে যাও,
দেখো বাংলার মানুষের হাহাকার-
আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঈদের আগের দিন রাতে এ গানটি কেবল একবার শুনেছিলাম। আমি সেসময় মাত্র চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধ কী এবং কেন, তা সঠিকভাবে আমি বুঝতামনা, তবে যেহেতু আমি খুব বেশী রেডিও শুনতাম, এবং বিভিন্নজনের কাছে শুনেছিলাম ঢাকা রেডিওর ৭০০ মিটার ব্যান্ড মার্কিং-এর একটু ডান দিকে ‘কখনো আসে কখনো আসেনা’ ধরনের একটি বেতার কেন্দ্র থেকে সুন্দর সুন্দর বাংলা গান, কথিকা ইত্যাদি শোনা যায় (যা আবার ভলিউম কমিয়ে শোনার বিষয়ে সেসময় সবার পরামর্শ ছিল), তাই স্বাধীনতার কোনকিছু না বুঝলেও স্বাধীন বাংলা বেতারের অনেক অনুষ্ঠানই আমার শোনা হয়েছিল।...
স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে ছোটবেলার স্মৃতিচারণে এ গানটির কথা যখনই আমার মনে হয়েছে, তখনই আমি ভেবেছি, সত্যিই কী এটা স্বাধীন বাংলা বেতারের গানই ছিল? নাকি নিছকই আমার কোন কল্পনা? গানটির কেবলমাত্র দুলাইন আমার মনে ছিল এবং দ্বিতীয় লাইনে ‘দেখো বাংলার মানুষের হাহাকার’ এর শেষ অংশে ‘হাহাকার’ নাকি অন্য কোন শব্দ ছিল সে বিষয়ে আমি এখনো দ্বিধান্বিত। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীনতার পর প্রায় বিশ-বাইশ বছর পার হয়ে যাওয়া সময় পর্যন্ত আমি এ গানটি আর কখনো কোথাও দ্বিতীয়বার শুনতে পাইনি।...
এরপর এলো নব্বই এর দশকের কোন এক বিজয় দিবস অথবা ২৬ শে মার্চের রাত (সঠিক সাল ও তারিখ মনে নেই)। সম্ভবতঃ বিটিভি থেকেই প্রচারিত হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের গান নিয়ে কোন এক অনুষ্ঠান। আর সে অনুষ্ঠানেই আমাকে চমকে দিয়ে একজন শিল্পী গাইতে লাগলেন সেই গান- ‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও...’।
আমার সমস্ত শরীর দিয়ে যেন বিদ্যুত বয়ে গেল। দীর্ঘ বাইশ বছর পর ছোট্টবেলায় একবার মাত্র শোনা একটি গান আমি আবার শুনছি। এইতো, এইতো সেই গান! প্রথমে একক কণ্ঠে শিল্পি গেয়ে ওঠেন প্রথম লাইন, ‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও...’, তারপর সমবেত কণ্ঠে সবাই গাইতে থাকেন ‘ফিরে যাও, ফিরে যাও, ফিরে যাও....’। সেই একই নিয়মে, একই সুরে, সেই একই আবেগ দিয়ে গাওয়া গান। শুনে আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।... আমার মুখে কোন কথা নেই। আমি যেন এক ঘোর লাগানো আবিষ্কারের মধ্যে আছি! এক তীব্র নতুন উপলব্ধির মধ্য আছি!
একটি জাতীর জন্য , একটি ফুলকে বাঁচানোর জন্য কতো মানুষের কতোরকম প্রচেষ্টাই না ছিল! কেউ জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন যুদ্ধের রক্তলাল সংগ্রামী প্রাঙ্গনে, কেউ ঢেলে দিয়েছেন অনুপ্রেরণার অসীম আবেগ- রক্ত গরম করা গানের কথায় আর সুরের অসামান্য উত্তাল স্রোতধারায়।
তুচ্ছ ছিলো না কোনটাই।
হয়তো ভুলে গিয়ে আমরাই তুচ্ছ করেছি তাদের, অবজ্ঞা করেছি অমূল্য আত্নদানে পাওয়া অসামান্য এক স্বদেশ !
.............................................................................
২৬ শে মার্চ, ২০১০