নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের কিন্তু বরাবর ই আগ্রহ ছিল। পর্ণো গ্রাফী কিন্তু শুধু আমাদের মুসলিম সমাজেই নিষিদ্ধ নয়, একজন সুস্থ মানুষ, তা সে যেই সমাজ গোত্র কিংবা বর্ণের হোকনা কেন, তার এই আজকের আলোচ্য বিষয় পর্নোগ্রাফীর প্রতি এই আগ্রহ কিন্তু একধরণের মানসিক বিকার! যেটাকে ইঙ্গরেজি ভাষায় বলা হয় পার্ভার্শন!
পর্নো গ্রাফীর শুরুটা কিন্তু অনেক দিনের, ঠিক যেসময় মোশন পিকচার বা ভিডিও প্রযুক্তি তৈরি হয়, সেই ১৮৯৫ সালের থেকেই পর্ণো গ্রাফীর জন্ম! পর্নো গ্রাফির প্রথম দিকের পাইয়োনিয়ার হল ইউজিন পিরু এবং এলবার্ট ক্রিচনার। পৃথিবীর প্রথম ভিডিও পর্নের নাম হল ''লিয়ার', এরপরে ১৮৯৬ সালের চলচ্চিত্রন ' Le Coucher de la Mariée ' তে প্রথম স্ট্রিপটিজ (নাচার ভঙ্গীতে শরীর কে নিরাভরণ করা) দেখান লুইজ উইলি নামের এক মহিলা, সেিথেকেই মোটামুটি পর্ণোগ্রাফী শুরু। প্রথম দিকে এর উদ্দেশ্য তেমন বানিজ্যিক ছিল নয়া, মূলত কিছু মানুষ শখের বসে তাদের রতিক্রিয়া ভিডিও চিত্রে প্রথম ধারণ করেন, এবং পরবর্তীতে প্রদর্শন করে তারা বুঝতে পারেন, আর কোন ব্যবসাই এতটা লাভ জনক নয়, যতটা এই ব্যবসায় ইনকাম হচ্ছে! ১৯২০ সালের দিকে প্রথম বানিজ্যিক ভাবে পর্নোগ্রাফীর প্রচলণ শুরু হয়, এবং এইসব মুভির কলাকুশলী সবাই ছিলেন হয় ফ্রেঞ্চ অথবা আমেরিকান, পৃথিবীর দুই সভ্য সভ্যতায় শুরু হয় অসভ্যতা!
তবে প্রথম দিকে বেশ বাধার মুখে পড়ে পর্ণোগ্রাফি। যেমন উতপাদনে আইনের নিষোধজ্ঞা ছিল, তেমন ই বাধাঁ ছিল পরিবেশন এবং প্রদর্শনে! একদম ই প্রাইভেটভাবে মিলত এই পর্ণোগ্রাফি তখন। ১৯৬৯ সালে প্রথম আইন করে অনেক দেশে ব্যান করা হয় এই নীল ছবি। সবার আগে ডেনমার্কে ১৯৬৯ সালে নিষিদ্ধ হয় নীল ছবি। প্রথম এডাল্ট ইরোটিক মুভি হিসেবে বেশ বিখ্যাত ছবির নাম হল Blue Movie যার নির্মাতা Andy Warhol, এই মুভি সর্বপ্রথম হলে প্রদর্শিত হয়। আর প্রথম ইরোটিক ড্রামা হিসেবে Last Tango in Paris কিন্তু এখনো বেশ সমাদৃত।
পর্ন এবং ইরোটিক শব্দ দুটি কিন্তু ভিন্ন। পর্ণ মূলত যৌন ক্রিয়ার দৃশ্য, সেখানে সিনেমার কাহিনী, চরিত্রের আবেগ অনুভূতির উপস্থাপন তেমন মুখ্য নয়, কিন্তু একটি ইরোটিক মুভির ব্যাসিক হল আবেগ-অনুভূতির ফোকাস। ১৯৭০ এর দশক কে বলা হয় গোল্ডেন এরা অফ পর্ণোগ্রাফী, সেসময় আমেরিকার পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির আনুমানিক বাণিজ্য ছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের উপর।
আবার ১৯৯৮ সালের Forrester Research এর পাবলিকেশনে বলা হয় ''প্রাপ্ত বয়ষ্কদের'' জন্য উপভোগ্য চলচিত্রের বাণিজ্যের পরিমান বার্ষিক প্রায় সাড়ে সাতশত মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন ইউ এস ডলার। ২০০১ সালে তা এসে দাড়ায়ঁ ৮-১০ বিলিয়ন ইউ এস ডলার। এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে শুধু আমেরিকায় এই সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে তেরো বিলিয়ন ইউ এস ডলারের এও বেশী। পশ্চিম বিশ্বে মাদক এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে পর্ন ব্যবসা!
CNBC এর হিসাব অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে আমেরিকায় তিন হাজার পচাত্তর ডলার ব্যয় হয় এই পর্ণ ব্যবসায়, আরো মজার একটি পরিসংখ্যান হল প্রতি ৩৯ মিনিটে তৈরি হচ্ছে একটি নতুন পর্ণ মুভি। আমেরিকার সান ফার্নান্ডো ভ্যালি (লস এঞ্জেলস) নামক এক স্থান পর্ণ মুভি তৈরির জন্য বেশ বিখ্যাত। সেই বাণিজ্যিক নির্মাণের দশক ১৯৭০ থেকেই এখানে পর্ণ উতপাদন করা হয়। ভিসিয়ার ক্যাসেট থেকে বর্তমানে ব্লু রে, এইচ ডি সব ফরম্যাটেই এখানে বানিজ্যিক ভাবে পর্ণ বিপনন করা হচ্ছে! প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সাথে সাথে এখন থ্রিডি পর্ণ ও দেদারসে তৈরি এবং প্রদর্শন হচ্ছে! এপ্রিল ২০১১ তে দুনিয়ার প্রথম থ্রিডি পর্ণ প্রদর্শিত হয় হংকং এ, মুভির নাম ছিল - 3D Sex and Zen: Extreme Ecstasy
আমেরিকার পর্ন ব্যবসা এতটাই লাভজনক এখন কে বলা হচ্ছে গোল্ড মাইন। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির মোট সম্পদের পরিমান ৯৭ বিলিয়ন ডলারের ও বেশী যার সিংহভাগ ই আমেরিকার! তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই পর্ণোগ্রাফী এখন নিষিদ্ধ। যেমন চায়নায় প্রচুর লোক কে গ্রেফতার এবং কারাদন্ড দেয়া হয় সাম্প্রতিক সময়ে, কারণ তারা পর্ণ উতপাদন এবং বিপননে জপড়িত ছিল। উত্তর কোরিয়ায় পর্ণ দেখা কিংবা রাখার প্রমাণ পেলে মৃত্যুদন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। [img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/sundance/sundance-1471114879-190202e_xlarge.jpg
আরেকটি মজার তথ্য হল, ইন্টারনেট পর্ণ কে এতটাই সহজ লভ্য করেছে, বলা হয়, ইন্টারনেটের শতকরা ৫০ ভাগ কন্টেন্ট হয় পর্ণ কিংবা পর্ণ রিলেটেড! পৃথিবীর শতকরা চার ভাগ ভাগ ওয়েবসাইট পর্ণ ব্যবসায় জড়িত-এই তথ্য সিনটেফ নামক এক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান জরিপ সংস্থার! ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত উতকর্ষের সুযোগে একটি শিশু গড়ে দশ বছর বয়সেই পর্ণ জগতে প্রবেশ করে অথচ যে বয়সে তার এগুলো বুঝে ওঠার ই কথা নয়!
সাধারনত, একজন মহিলা পর্ণ আর্টিস্ট অন্য যেকোন ক্ষেত্রে অভিনেত্রীদের তুলনায় পাচঁ গুন বেশী অর্থ আয় করেন। ছেলেদের মাঝে যারা গে পর্ণ এ অভিনয় করেন, তারা স্ট্রেইট পর্ণ আর্টিস্টদের তুলনায় আয় করেন প্রায় তিন গুন বেশী। মুলত চাহিদা এবং প্রাপ্যতার মাপকাঠিতেই এই কম বেশী আয় হয়ে থাকে। পর্নের প্রতি এই আকর্ষণের কারণে প্রতিবছর একটি মোটা অঙ্কের মানুষ বিষন্নতায় ও কিন্তু ভোগেন। আমেরিকান সমাজে একটি সাইকিয়াট্রিক ডিজ অর্ডার হিসেবে এখনো অন্তর্ভুক্ত নয়া হলেও, পর্ণ এডিকশন কে আমেরিকান ডক্টররা আর হালকা ভাবে নিতে রাজি নন, কারণ প্রতিদিন এই সমস্যা বেড়েই চলছে। নানান ধরণের মানসিক বিকৃতির জন্য এখন পর্ন কে দায়ী করে চলেছেন তারা। একজন আমেরিকান টিন এজার সপ্তাহে গড়ে ১১ ঘন্টা পর্ন দেখেন! মাঝে মাঝে এই সঙ্খ্যা দ্বিগুন থেকে তিন গুন হয়ে ওঠে। এই মানসিকভাবে অসুস্থ তরুণ দের মাঝে শারিরীকভাবে পরবর্তীতে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন নামক সমস্যায় ভোগে।
শিশু পর্নোগ্রাফী অনলাইনে সবচাইতে লাভজঙ্ক ব্যবসার একটি। তথ্যটিও হরিবল হলেও সত্য! বছরে প্রায় তিন বিলয়ন ইউ এস ডলারের চাইল্ড পর্ণ ব্যবসা হয় যার আশিভাগ ক্রেতা আমেরিকার! একবার ইন্টারনেটে একটি ভিডিও আপ্লোড হলে তা আদতে আর রিমুভ করা সম্ভব হয় নয়া, তাই চাইল্ড পর্ণোগ্রাফী একটি শিশুর সারাজীবনের মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়! (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৭