আমি গত জুলাই মাসে আরব দেশে ভ্রমন ও জব সংক্রান্ত কিছু কাজে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার দেয়া স্ট্যাটাস গুলো অনেকের ই ভালো লেগেছিল। আশাকরি আপনাদের ও ভাল লাগবে। আমি শুরুতে নেট নিই নি, কারন এক গিগা নেট ৮০ এস আর বা প্রায় ১৭০০ টাকা, পরে এক ফ্রেন্ডের মোবাইল দিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর নেট ইউজ করতে পেরেছিলাম। ধারাবাহিক ভাবে আপনাদের সামনে সেই বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা তুলে ধরার এই প্রয়াস! লেখা গুলোও জমা রইল, আবার ফেসবুকের লাইকের যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাওয়া গেল!
২০ জুলাই ২০১৪ ইং
পিতারা সব কিছুতেই এগিয়ে থাকেন। উনারা পথ প্রদর্শক। গতকাল ফজরের নামায পড়েছি মক্কায়, দেন বাপ ব্যাটা মিলে এক ছিক্কা টাইপ গাড়ী তে গেলাম মদিনা, আনুষাংগিক কাজ শেষে গেলাম বাস কাউন্টারে, নাজরানের বাস ধরব, আমরা পিতা পুত্র সেই মিতব্যয়ী, কেউ বুথ থেকে টাকা তুলিনি, উঠালেই খরচ হয়ে যাবে এই ভয়ে!
নাজরানের বাস পেলাম না, অনেক চিন্তা ভাবনা শেষ করে জেদ্দার বাস ধরলাম, ওখান থেকে বাস চেঞ্জ করব এই আশায়। টানা ৫ ঘন্টা পর পিতা-পুত্র পৌছালাম মরুভূমি মাঝে এক মসজিদে, ক্ষিধে-তেস্টা-রোজায় প্রান যায় যায় অবস্থা, পকেটে টাকা নাই, এদিকে ইফতারীর সময় আসন্ন। নিজেরে খুব অসহায় লাগছিল, সপ্রশ্নভাবে পিতার দিকে তাকালাম, হ্যা, পিতা ততক্ষনে ম্যাজিক রেডি করে ফেলেছেন, ৫ রিয়াল দিয়ে উনি দুই লিটার বেবসি (পেপ্সি, আরবীতে প নাই) খরিদ করে মুসল্লীদের মাঝে বিলানো শুরু করেছেন, দেখতে দেরি, কিস (পলিথিন) হাতে আমি চো চো দৌড়, আরবের প্রথানুযায়ী কেউ আপনাকে কিছু সাধলে আপনিও তাকে কিছু সাধতে বাধ্য! মুহুর্তে আমার কিস ভরে গেল!!!পিতা চোখ মেরে বল্লেন -ইন্ডিয়ার এক হিরোর(এস আর কে) এর এরকম একটা এড আছে না? আমি এক হাতে বেবসি আর এক হাতে খ্যাপসা নিয়ে বল্লাম কি জানি, টিভি-টুভি তেমন দেখিনা!!!
পিতাজী রক্স!!!
৩১জুলাই ২০১৪ ইং
মুসলমান সমাজের ব্রাম্মন হইল সৌদিরা, অনেকটা আমাদের দেশের সৈয়দ বংশের মত, বাঞ্চুদ্রে জিগাছি কি কাজ করেন?
আমারে কয়
- আনা সৌদ, লে আনা শুগল? মাফি শুগল ...(আমি সৌদি, আমি কাজ করব কেন?)
বিলিভ মি, রাজ্যের সবচাইতে বড় ভিখারী এই চুতিয়া আনা সৌদেরা, দুই দিন পর পর আসবে, আমারে সার্টিফিকেট দাও, আমি কাজ করে খেতে পারব না, ঐ সার্টিফিকেট দেখায়ে সে ভাতা-ভিক্ষা তুলবে। আমিও কই ঠিকাছে, কাজ করেই খাও বাঞ্চুদ!!
২রা অগাষ্ট ২০১৪ ইং
আরব দেশের একটা খুব সুন্দর দৃশ্য আছে। আপনি নামাযে গেলেন, দাঁড়ালেন, ডান বাম তাকালে অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখবেন। আপনার কাতারে আপনার সাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, ইয়েমেনীয়, সুদানী, আরব, ফিলিপিনা, ইন্দোনেশীয়, নেপালী, শ্রীলংকান ইত্যাদি বহু সংখ্যক দেশের লোক, সোজাকথায় আপনি একটা আন্তর্জাতিক কাতারে দাঁড়িয়ে, সেখানে কোন বৈষম্য নেই, তখন আপনি উপলব্ধি করবেন নিশ্চিতভাবে আল্লাহ মহান, তাই সবাই ইসলামে আলোকিত!!
৪ই অগাষ্ট ২০১৪ ইং
আরব দেশের সরকার খুব মজারু, উনাদের ভিক্ষা দেয়ার একটা স্টাইল আসে। মিউনিসিপালিটির ৫০০ সৌদ মেট্রিক পাস করছে, বেশ কয়েকবার এক্সাম দিয়ে, তাদের স্বপ্ন বড় অফিসার হবে, তারা এপ্লিকেশন দিছে, কারন বড় অফিসারেরা এটিএম কার্ড দিয়া ভাতা তুলে।
এদিকে সরকারের বড় অফিসারদের পুষ্ট ফাকা নাই, রাজার টেনশন, এলাকার কাজীর টেনশন, অনেক চিন্তা করে সরকার এক মাসের নোটিশে বনবিভাগ বানালেন।
কথা হইল মরুভুমিতে বনবিভাগ কিভাবে? হুকুম দেয়া হইল ১৫০০ খেজুর বাবলা ইত্যাদি আমেল দ্বারা নগদ লাগাইতে, উনারা আনা সৌদ, উনারা লাগাইলে বেইজ্জতি! এক সপ্তাহে লাগানো শেষ। এখন বনে খালি গাছ থাকেনা, পশু পাখিও লাগে, শত হইলেও বন বিভাগ বলে কথা!!
নগদ অর্ডার দিয়ে পঞ্চাশেক হরিণ আফ্রিকা থেকে উড়ায়ে আনা হল। এখন এতখানি জমি, গাড়ী ছাড়া স্যারেরা নজরদারি করবেন কি করে? আবার মরুভূমি, উচু-নিচু রাস্তা, সবার জন্য সরকার ফোর হুইল ড্রাইভ ল্যান্ড ক্রুজার দিলেন একটা করে, সৌদ কেন কষ্ট করবে? এত সৌদ আবার এই মরুভুমিতে আইসা থাকবে, খাওয়া দাওয়ার একটা ব্যাপার আছে, নাকি?
তিন জন আমেল (কাজের লোক) রাখা হল, রান্না করবে! আবার এত গুলা গাড়ী দেখাশুনা করতে একটা ওয়ার্কশপ লাগে না? লাগাও আমেল!
অবশেষরূপে ৫০০ মেট্রিক পাস সৌদ মরুভূমি তে বনবিভাগ এর ৫০ টা হরিণ দেখাশুনা করে ফার্স্টক্লাস অফিসার হইল!!
সেলুকাস!! কি বিচিত্র এই দেশ!!
ইংশাল্লাহ আগামী দিন নেক্সট পর্ব!!