ছেলেবেলায় ঈদের দিনটির জন্য যেমন অনেক দিন ধরে অধীর প্রতীক্ষায় থাকতাম, পূজার দিনগুলোর জন্যেও আমার আগ্রহ আর দিনগোনার কমতি ছিলনা। একটি অত্যন্ত রক্ষনশীল ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও বাবা মায়ের কাছ থেকে কোনদিন ভুল শিক্ষাটি পাইনি, এদিক দিয়ে আমি কিছুটা ভাগ্যবানই। বাবা মা এবং পরিবারের সবার কাছ থেকে অসাম্প্রদায়িক হবার শিক্ষাই পেয়েছি। একদিকে যেমন নিজের ধর্মের প্রতি অগাধ আস্থার শিক্ষা পেয়েছি অন্যদিকে তেমনি অন্য ধর্ম ও বিশ্বাসকে সমান শ্রদ্ধা করতে শিখেছি।
ঈদের দিনে যেমন পবিত্র -প্রবীর-সুমিত-দীপ-গোবিন্দ-বিপ্লবেরা সারাদিন আমার বাড়িতে পড়ে থাকত, আমার মা খাবার পরিবেশন করতে আর প্লেট পরিস্কার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেত, ঠিক একইভাবে পূজা পার্বণে আমিও ওদের বাড়িতে গিয়ে কম জ্বালাতাম না। পবিত্র আমার বাড়িতে এসে কোনদিন খাবার চেয়ে খেত না, নিজেই হাঁড়ি থেকে বেড়ে খেত। আমিও তাই।
একবার আমি আর পবিত্র মিলে স্কুলে সরস্বতী পূজার সময় সরস্বতীর হাত থেকে সন্দেশ চুরী করে খেয়ে ফেলেছিলাম। এই নিয়ে বন্ধু মহলে আমরা যে কত বাহাদুরি ফলাতাম, বলে বুঝানো যাবে না।
এরকম একটি দেশের স্বপ্নই আজন্ম দেখে এসেছি। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল গোত্রের, সকল পেশার সকল মতবাদের, সকল বিশ্বাসের, সকল চামড়ার রঙের পারস্পারিক সহাবস্থানের একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। যেখানে ধর্ম মানুষকে মানুষ মারতে নয় মানুষকে ভালবাসায় বুকে টানতে বলবে। যেখানে রাজনীতি মানুষকে বোমা ছুড়তে নয়, আকাশের দিকে বজ্রমুষ্টি ছুঁড়ে বলতে শেখাবে "আমি-ই বাংলাদেশ"।
সবুজ বাংলাদেশের বুকে লাল রক্তের ঝর্ণাধারা নয়, ঘরে ঘরে-পাড়ায় পাড়ায়- তল্লাটে তল্লাটে লাল সবুজের পতাকার সমাহার দেখতে চাই।
অত্যাচারীর আঘাতে নিপীড়িতের আর্তনাদ নয়, সমবেত কণ্ঠে "আমার সোনার বাংলা" শুনতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮