ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশী। ঈদ মানে কোলাকুলি, ঈদ মানে ভ্রাতৃত্ব আর সম্প্রীতির জয়গান। ঈদ মানে ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, মালিক-চাকর, ভদ্র-ইতর সব মানুষের এক কাতারে মিলনমেলার দিন। এই কথাগুলো ছেলেবেলা থেকে বইয়ে পড়ে কিংবা বাবা-মায়ের কাছে শুনে শিখেছি। আজ মনে হয় একটু হলেও বয়স বেড়েছে। এই বছরের শেষের দিকে আটাশ ফেলে উনত্রিশে পা রাখবো। সামনের দিকে গোটা দুয়েক চুলে পাকও ধরেছে। চশমাটা এখনো চোখে ওঠেনি, কিন্তু ত্রিশ পার হলেই মনে হয় সেটাও উঠবে। আজ বইয়ের পাতায় ঈদ নিয়ে লেখা সেই কথাগুলো মনে হয় যেন বাস্তবতার অবিশ্রাম প্রহারে কিছুটা হলেও ম্লান কিংবা ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে।
আজ যখন আমার আপনার সন্তান দাদাবাড়ি কিংবা নানাবাড়ি গিয়ে নতুন জামা, সমবয়সী বন্ধু আর শেকড়ের গন্ধ পেয়ে আনন্দের আতিশয্যে হৈ হুল্লোড়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আজ অগনতি-অসংখ্য ফিলিস্তিনী শিশুর হৃৎপিণ্ড ব্যাবচ্ছেদ হচ্ছে। আপনি আমি হয়ত ঈদের নামাজ পড়েই খালাশ, কিন্তু ফিলিস্তিনে ঈদের নামাজের পাশাপাশি অসংখ্য জানাজার নামাজও অনুষ্ঠিত হবে। আপনার আমার হয়ত ঈদের আলিঙ্গনটি উষ্ণই হবে, কিন্তু ফিলিস্তিনীদের আলিঙ্গন হবে রক্তস্নাত। তাজা রক্তে ভিজে যাবে ঈদের নতুন জামাটি, জঙ্গি বিমান থেকে ধেয়ে আসা বোমার আওয়াজে হয়ত শোনাই যাবেনা ঈদের খুশীতে ফোটানো পটকার শব্দ।
আজ যখন আমি আপনি সপরিবারে গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে বাবার হাতে একটা সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী আর মায়ের হাতে তার শুভ্র শাড়ীটি তুলে দেবার পর তাদের চোখের কোণে আনন্দের চিকচিক অশ্রু দেখে পুলকিত হচ্ছি, ঠিক তখন কত বাবা আর কত মা বৃদ্ধাশ্রমের ঐ জানালার গ্রীল ধরে ঝাপসা চোখে চেয়ে চেয়ে ভাবছেন, খোকা তার কখন আসে, কখন আসে। ভাবতে ভাবতে এক সময় তাঁদের চোখে চৈত্রের রোদ পুড়িয়ে দেয় স্বপ্নের শকুনীদের।
আমার ক্লান্ত আঙ্গুলেরা বারবার ফসকে যাচ্ছে কী-বোর্ড থেকে। আমার বুকের বামপাশে অবিশ্রাম কে যেন হাতুড়ী পেটাচ্ছে। আমার বিবেক নামক অদৃশ্য সেই মাংসপিণ্ডখানি আমায় অক্টোপাসের মত আঁকড়ে ধরেছে। আমায় ক্ষমা করবেন, আমি আর লিখতে পারছিনা।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারাক।