বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ডায়েট করে ওজন কমাতে বাদ দিতে হয় নিজের পছন্দের খাবার। সেই খাবারের পরিমাণও থাকে কম। কিন্তু ভাবুন তো, সপ্তাহে মাত্র একদিন ডায়েট করলেই যদি ঝরে যায় ৩/৪ কেজি ওজন, তবে কেমন হয়?
বস্টন মেডিক্যাল সেন্টারের ডক্টর ক্যারোলাইন অ্যাপভিয়ানের মস্তিষ্ক থেকে বের হয়েছে এই “ওভারনাইট ডায়েট”। এমন নাম হবার কারণ হলো, ঘুমের মাঝেই অনেকটা ওজন ঝরে যাবে। বিশ্বাস না হবারই কথা। এই ডায়েট চলাকালীন সময়ে আপনি স্বাস্থ্যকর যে কোনো খাবার খেতে পারবেন সপ্তাহের ৬ দিনই, ফলে ক্ষুধার্ত হবার কষ্ট থাকবে না। শুধুমাত্র একদিন আপনাকে নিয়ম মেনে পান করতে হবে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা একটি স্মুদি। এই ডায়েট অনুসরণ করে সপ্তাহে ৩ থেকে চার কেজি ওজন কমানোর নজির দেখা গেছে। ডক্টর অ্যাপোভিয়ান বিগত ২৫ বছরের সাধনায় তৈরি করেন এই ডায়েট প্ল্যান। শুধু তাই নয়, নিজের ক্লায়েন্টদের ওপর এর প্রভাব পরীক্ষা করেই এর কার্যকারিতার ব্যাপারে নিশ্চিত হন তিনি।
এই ডায়েট অন্যান্য ডায়েটের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। কারণ বয়সের সাথে আমাদের পেশী ক্ষয় হয় আর সাধারণ ডায়েটে কম খাওয়ার কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। কিন্তু ওভারনাইট ডায়েটে এই ব্যাপারটিকে রোধ করার ব্যবস্থা রয়েছে। শরীরে লিন মাসল বেশি থাকলে শরীরে মেদ জমার তেমন সুযোগ পায় না। ওভারনাইট ডায়েটে এমন মাসলের পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন খেতে হয়, তেমনি নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাওয়ারও সুযোগ আছে। ফলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মেদ দূর হয়ে আপনার ওজন কমে যায়। ডায়েটের একটি দিন শুধুমাত্র স্মুদি পান করতে হয়, এটি আমাদের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা ভীষণভাবে কমিয়ে দেয়। ফলে পেট ও কোমরের আশেপাশের মেদ কমে যায়। সারা সপ্তাহ ধরেই এসব জায়গায় মেদ ঝরার প্রক্রিয়া অব্যহত থাকে। শুধু তাই নয়, ইনসুলিন কমে যাবার ফলে বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি কমে এবং আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানিও কমে যায়।
কীভাবে করবেন ওভারনাইট ডায়েট?
- এই ডায়েটের দুইটি অংশ। প্রতি সপ্তাহে একদিন সাধারণ খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। এই দিনে তিন বেলা তিন গ্লাস স্বাস্থ্যকর স্মুদি পান করতে হবে আপনাকে। এইদিন রাত্রেই ঘুমের মাঝে আপনার ওজন পুরো এক কেজি কমে যাবে। ফ্যাট কমানোর প্রক্রিয়াটিও শুরু হবে এই দিনে।
- সপ্তাহের অন্য ছয় দিন আপনি সাধারণ স্বাস্থ্যকর একটি ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করবেন। এই খাদ্যভ্যাসের মূল বিষয় হলো, মাংস, মাছ এবং ডিম খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের পেশী সুস্থ রাখা এবং ফ্যাট ঝরানোকে উৎসাহিত করা। এ সময়ে ডায়েট প্ল্যান ফলো করলেও আপনি মজাদার খাবারগুলো খেতে পারবেন, যেমন পিনাট বাটার, আলু, পাস্তা ইত্যাদি।
- এক সপ্তাহ পার হলে আবার একদিন অন্য কিছু না খেয়ে শুধু স্মুদি পান করতে হবে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে স্মুদি-দিবস পালন করলে আপনার শরীরে নতুন করে শুরু হবে ফ্যাট ঝরানোর প্রক্রিয়াটি।
- এভাবে প্রতি সপ্তাহে এই প্ল্যান অনুসরণ করলে আপনার ওজন কমে যাবে এবং আপনার উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজনে ফিরে আসতে পারবেন আপনি।
- দীর্ঘ সময়ের জন্যেও এই ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা যাবে। তবে স্মুদি দিবসে আপনি মাঝে মাঝে দিনে দু-একবার স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন, যাতে আপনার ওজন বেশি কমে না যায়।
- শুধু স্মুদি পান করে থাকার ব্যাপারে অনেকে ভাবতে পারেন, সারাদিন শক্ত খাবার না খেলে ক্ষুধা লাগবে। কিন্তু এসব স্মুদিতে এতো বেশি স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে যে আপনার ক্ষুধা লাগার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ওভারনাইট ডায়েট সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলে শরীরের হরমোন কার্যকারিতা ঠিক থাকে ফলে শরীরে আবার পানি জমতে পারে না। শুধু তাই না, এই ডায়েটে পুরো একদিন তরল খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে শরীরকে মাঝে মাঝে শক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।এতে আমাদের শরীর বুঝে যায় মেদ জমা বন্ধ করে এই মেদ পোড়ানোর সময় হয়েছে।
কীভাবে তৈরি করবেন স্মুদি?
১) প্রোটিন: এক চামচ প্রোটিন পাউডার বা এক কাপ ফ্যাট ফ্রি টক দই
২) লিকুইড (যে কোনো একটি): আধা কাপ ফ্যাট ফ্রি দুধ, আধা কাপ সয়া দুধ, এক কাপ আমন্ড দুধ, সোয়া কাপ নারিকেলের দুধ, আধা কাপ ডাবের পানি অথবা সোয়া কাপ ফলের রস আপনার পছন্দমত।
২) ফল (যে কোনো দুইটি): অর্ধেকটি আপেল, কলা, নাশপাতি, একটি লেবু বা কমলা, আধা কাপ আঙ্গুর, আম, পেঁপে, আনারস বা স্ট্রবেরি।
৩) সবজি (যে কোনো তিনটি): ছোট একটি গাজর, আধা কাপ শসা, আধা কাপ পুদিনা পাতা, এক কাপ লেটুস, এক কাপ পালংশাক বা একটি ছোট টমেটো।
৪) এগুলোর পাশাপাশি যোগ করতে পারেন এক চা টেবিল অ্যাভোকাডো, এক চা চামচ চিনিমুক্ত কোকো পাউডার, এক চা চামচ পিনাট বাটার অথবা এক টেবিল চামচ ওট। এগুলোর যে কোনো দুইটি যোগ করা যাবে স্মুদিতে।
৫) স্বাদ বাড়াতে যে কোনো একটি উপাদান ব্যবহার করতে পারেন: আধা কাপ কফি বা চা, লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া, বরফ বা পানি।
৬) কোনোভাবেই চিনি অথবা চিনিযুক্ত কোনো উপাদান স্মুদিতে দেবেন না।
এই সব উপাদান একত্রে ব্লেন্ডারে মিশিয়ে তৈরি করে নিন স্মুদি। প্রতি বেলায় ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি ব্যবহার করে পান করতে পারেন।
সপ্তাহের বাকি ৬ দিন কী খাবেন?
১) সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে খাওয়ার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো Daily Protein Requirement (DPR) মেনে প্রোটিন খাওয়া। বাংলাদেশের নারীদের জন্য মূলত দিনে ৩৫০-৪৫০ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য দিনে ৪০০-৫৭০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়াটা জরুরী। এই ডায়েট চলাকালীন এর কম পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া যাবে না।
২) যতো খুশি ফল খান।
৩) স্টার্চ-মুক্ত শাক-সবজি খেতে পারেন ইচ্ছেমত। যেমন ব্রকোলি, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি, টমেটো, পালংশাক, মাশরুম ইত্যাদি।
৪) দুই বার করে ২৪০ মিলি. পরিমাণে ফ্যাট ফ্রি অথবা লো ফ্যাট টক দই বা পনির খেতে পারেন প্রতিদিন।
৫) শর্করা খাবার সময়ে তা হতে হবে হোল গ্রেইন। প্রতি বেলায় এক স্লাইস হোল গ্রেইন রুটি, দুইটি হোল গ্রেইন ক্র্যাকার, ৩০ গ্রাম ওট, লাল চালের ভাত এগুলোর যে কোনো একটি খেতে পারেন।
৬) আলু, মিষ্টিকুমড়া, ডাল, মটরশুঁটি বা সীমের বিচি খেতে পারেন দিনে ১০০ গ্রাম।
৭) দিনে ৪ চা চামচ অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল বা লো ফ্যাট মেয়োনেজ খেতে পারেন।
৮) দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরী। এর পাশাপাশি পান করতে পারেন চিনিমুক্ত কালো কফি, রঙ চা বা কোনো ডায়েট ড্রিঙ্ক।
৯) অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন, ফুল-ফ্যাট ডেইরি খাদ্য, সাধারণ ময়দার তৈরি খাবার এবং চিনি বর্জন করে চলুন।
প্রতিদিনের আরো তথ্যপূর্ণ খবর জানতে আমার ব্লগ একবার ঘুরে আসতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৪২