ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা
-----------------------------------------------
কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি
মাহবুব উল আলম চৌধুরী
------------------------------------------------
যারা আমার মাতৃভাষাকে নির্বাসন দিতে চেয়েছে
তাদের জন্য আমি ফাঁসি দাবি করছি।
যাদের আদেশে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের জন্য
ফাঁসি দাবী করছি।
ফাঁসি দাবী করছি যারা এই মৃতদেহের ওপর দিয়ে
ক্ষমতার আসনে আরোহণ করেছে
সেই বিশ্বাসঘাতকদের জন্যে।
আমি তাদের বিচার দেখতে চাই
খোলা ময়দানে সেই নির্দিষ্ট জায়গাতে
শাস্তিপ্রাপ্তদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায়
আমার দেশের মানুষ দেখতে চায়।
ওরা চল্লিশজন কিংবা আরও বেশি
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে,রসনার রৌদ্রদগ্ধ কৃষ্ণচূড়ার গাছের তলায়
ভাষার জন্য, মাতৃভাষার জন্য, বাংলার জন্য
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে
একটি দেশের মহান সংস্কৃতির মর্যাদার জন্য
আলাওলের ঐতিহ্য
কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের
সাহিত্য ও কবিতার জন্য
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে
পলাশপুরের মকবুল আহমদের
পুঁথির জন্য, রমেশ শীলের গাঁথার জন্য
জসীমউদ্দীনের সোজন বাঁধিয়ার ঘাটের জন্য
যারা প্রাণ দিয়েছে
ভাটিয়ালি বাউল কীর্তন গজল
নজরুলের ‘খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
আমার দেশের মাটি’।
হে আমার মৃত ভাইরা,
সেইদিন নিস্তব্ধতার মধ্য থেকে তোমাদের কণ্ঠস্বর
স্বাধীনতার বলিষ্ঠ চিৎকার
ভেসে আসবে
সেইদিন আমাদের দেশের জনতা
খুনি জালিমকে ফাঁসির কাষ্ঠে
ঝুলাবেই ঝুলাবে
তোমাদের আশা অগ্নিশিখার মতো জ্বলবে
প্রতিশোধ এবং বিজয়ের আনন্দে।
চট্টগ্রাম, সন্ধ্যা সাতটা, একুশে ফেব্র“য়ারি, ১৯৫২।