চারু আজ সকাল থেকেই মায়ের পিছু ছাড়ছে না। লাল সাদা একটা সোয়েটার পড়ে ঘুরঘুর করছে। কি একটা কারনে আজ চারুর স্কুল ছুটি।
: মা দেখ দেখ, ফুলকপি টা কেমন দেখাচ্ছে।
: কই কেমন দেখাচ্ছে? ঠিকই তো আছে।
: না মা, একটুও ঠিক নেই, এটাকে ঝুরিঝুরি করতে হবে।
: ও বুঝেছি, হাত গুলো আর ঠিক থাকতে পারছে না, তাই না?
চারুর খুব শখ ও রান্না করবে আর ওর মা কিছুতেই ওকে রান্না করতে দেবে না। তাই নিয়ে মাঝে মাঝে যে চারুর মায়া মায়া চোখগুলো একটু আধটুক জল তৈরী করে না তা নয়, তবে মায়ের আদর ভরা কোল টুকু ওর সব কান্নার জলগুলো নিমেষে মুক্তো বানিয়ে দেয়।
আজ চারু প্রথম রান্নার পারমিশন পেয়েছে, রান্না হবে আলু ভাজি - চারুর হাতের প্রথম যাদু। কাটাকুটি সব হয়ে গেছে এখন শুধু মিষ্টি হাতের মিষ্টি কারুকাজ। হাটু গেঁড়ে বসে হাসির ঝর্নার পাশ দিয়ে যেতে যেতে একবার মায়ের মুখের দিকে আরেকবার আলুকুচির দিকে তাকায় আর ভাবে এত সহজ কাজ মা যে কেন করতে দেয় না কে জানে।
চুলাটা অবশ্য চারুর মা কেই জ্বালাতে হলো। শুধু চুলা জ্বালানোটাই কঠিন আর সব কোন ব্যপারই না, আপাতত এইটুকু চারুকে মেনে নিতেই হলো। মা কে আর একটা কিচ্ছু করতে দিবে না, এই পণ করে মহা উদ্যমে যুদ্ধ শুরু হলো।
মন যেখানে শিশির ভেজা ফুল কলি রান্না কি আর সেখানে উল্টোপথে যাত্রা করতে পারে !! মায়ে-ঝিয়ের আদর সোহাগে আলুকুচি লালচে রঙে রাঙা হয়ে পূর্নতার স্বাদ নিল। চারুর রান্নায় হাতেখড়িটা মনের কোন এক গহীন স্থানে সারা জীবনের জন্য জায়গা করে নিল।
চারু আজ অনেক বড়। প্রিয় মানুষটি আর একমাত্র মেয়ে কলি কে নিয়ে ছোট্ট সংসার। অনেক মান-অভিমানের পর কলির আজ রান্নায় হাতেখড়ি। মনের ওই গহীন স্থানটি আজ মনে হয় একটু নাড়া দিয়ে গেল, ভাল লাগা ভালবাসার মূহুর্তটুকু নিজেকে নিয়ে গেল অনেক পেছনে, রঙ তুলিতে আঁকা সেই দিনগুলিতে।