আজকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল https://bangla.bdnews24.com/ এ একটি লেখা এসেছে, স্কুলেই ‘কোচিং বাণিজ্য’, বাড়তি চাপে শিক্ষার্থী-অভিভাবক
সেটার প্রেক্ষিতেই আমার কিছু কথা।
বাংলাদেশে এই কোচিং সংস্কৃতির অনাচারটা বন্ধ হওয়া দরকার। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরে ছাত্রদের কিছু বিষয় বোঝার ঘাটতি থাকতে পারে। সেজন্য বাহিরে একাডেমিক কোচিং এর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। কিন্তু, স্কুলে কোচিং থাকাটা Conflict of interest এর আওতায় পরে যায় বিধায় সেটা বর্জনীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।
স্কুলের বাইরে যে কোচিং সেন্টারগুলো আছে, সেখানে চলছে দুধরণের আপত্তিকর (ব্যক্তিগত মতামত) কার্যক্রমঃ
১। ক্যাডেট কলেজ ভর্তি কোচিং
২। রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল/কলেজ , ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল/সেন্ট জোসেফ বা এ জাতীয় বিখ্যাত স্কুল ভর্তি কোচিং
কেমন এই ভর্তি পরীক্ষাগুলো?
৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে থাকছে ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম শ্রেণির বই থেকে প্রশ্ন! তাই যে ছেলেটা ৫ম শ্রেণিতে পড়ছে, তাকে তার নিজ শ্রেণির পড়ার বাইরে ঐ কোচিং সেন্টারগুলোতে গিয়ে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির বই থেকে জটিল বিষয়গুলো পড়তে হচ্ছে যা তার ওপর একটি অগ্রহণযোগ্য বাড়তি চাপ। একই কথা ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সেখানে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য একজন ছাত্রকে ৭ম, ৮ম এবং হয়ত ৯ম শ্রেণির বই থেকেও কিছু বিষয় পড়তে হচ্ছে!
প্রশ্ন হল, কেন? এটাই কি মেধা যাচাইয়ের নিয়ম হওয়া উচিৎ?
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, যে ছাত্র ৫ম শ্রেণিতে পড়ছে, তাকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় যদি ৫ম শ্রেণির সিলেবাসের ওপর পরীক্ষা নেয়া হয়, সেটাই তার যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট। আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনি যদি ৫ম শ্রেণির সিলেবাসের ওপরই ১০০ জন ছাত্রের পরীক্ষা নেন, তারা ১০০ রকম ফলাফল করবে। এটাই শাশ্বত! আমরা যারা এসএসসি বা এইচএসসি পাশ করে আজকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছি, তারা কিন্তু আমাদের সিলেবাসের ওপরেই পরীক্ষা দিয়ে মেধা যাচাই করে এসেছি। এসএসসি পাশ করতে গিয়ে আমাকে কিন্তু এইচএসসি’র সিলেবাস পড়তে হয় নি। তাহলে কেন এই কোমলমতি শিশুগুলোর ওপর আমরা বাড়তি মানসিক এবং শারীরিক চাপ দিচ্ছি??
তাই এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর হওয়া উচিৎ। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য একেবারে বন্ধ করা উচিৎ। বাচ্চাদের একটা সুন্দর শৈশব উপহার দেয়া আমাদের দায়িত্ব। গবেষণায় দেখা গেছে, খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের মেধার বিকাশ হয়, এমন কি এটা প্রাণীকূলের জন্যও প্রযোজ্য। কেনিয়ার মাসাইমারা সাফারি পার্কে আমি দেখেছি, সিংহী মায়েরা সকালে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে একত্রিত হয়, বাচ্চারা খেলে আর মায়েরা তাদের পর্যবেক্ষণ করে। এখন বিকেল বেলায় আমরা বিভিন্ন কোচিং এ জড়িয়ে রেখে আমাদের বাচ্চাদের শৈশব নষ্ট করে দিয়েছি। ফলাফল, তারা যখনই সুযোগ পায়, বাবা-মায়ের মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। বিকেলে সে কোচিং এ আর সন্ধ্যায় বাসায় এসে আবার পড়ার চাপ, সুযোগ পেলেই সে মোবাইলের স্ক্রিনে! আমরা যে কি এক ভয়াবহ আগামী প্রজন্ম বানাতে যাচ্ছি সেটা আমরা হয়ত অনেকেই বুঝছি না!
আর স্কুল, কোচিংগুলোতে এখন পরীক্ষার ছড়াছড়ি! দুই দিন পর পর স্কুল থেকে পরীক্ষার ফি নেয় বেতনের সাথে। বুঝতে পারি, এটা স্কুলের বাড়তি আয়ের উৎস। বাচ্চা সারা দিন শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। বরেণ্য শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটি উক্তি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে খুব দুঃখজনকভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে এখন আর শিক্ষার্থী নেই, আছে শুধু পরীক্ষার্থী”!
শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।