২০০৮ সালের অক্টোবর মাস। গ্রামীনফোনে চাকুরি করি তখন। সেই সময় মোবাইল কমিউনিকেশন্স টেকনোলজিতে কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন আসাতে অনেকেই তখন বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি নিয়ে যেত। সেই স্রোতে আমিও গা ভাসালাম, ২৮ অক্টোবর জব এজেন্ট কল দিয়ে জানাল এরিকসন উগান্ডা আমাকে তাদের MTN Uganda প্রোজেক্ট এর জন্য সিলেক্ট করেছে, এখনই উড়াল দিতে হবে টাইপ অবস্থা! দুই দিনের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে ১ নভেম্বর ২০০৮ এমিরেটস এর সুপরিসর বিমানে চড়ে এনটেবে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বিমান থেকে সূর্যাস্ত...
পাখির চোখে ভিক্টোরিয়া হ্রদ
এনটেবে বিমানবন্দর
পোস্টের মূল প্রসংগ সেটা নয়! কাম্পালাতে গিয়ে কিছু দিন পরেই কোরবানির ইদের সময় চলে এল। অগ্রজ মুত্তাকিম ভাই বেড়াতে নিয়ে গেলেন ব্র্যাক উগান্ডার কান্ট্রি অফিসে। গল্প হল বাংলাদেশী কান্ট্রি হেড ভাইয়ার সাথে যিনি মাত্র কাবুল থেকে বদলি হয়ে এসেছেন।
ভাইয়া আফগানিস্তানের গল্প করলেন, যেদিন প্রথম অফিসে গিয়েছেন, দেখেন গেইটে দারোয়ান অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে! একটু অবাক হলেন, ভেতরে গিয়ে অন্য অফিসারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, ওটা নাকি ঐ দারোয়ানের ব্যক্তিগত অস্ত্র! ওখানে নাকি সবজির মত বাজারে অস্ত্র আর গুলি বিক্রি হয়! আর উৎসবে ওরা ফাঁকা গুলি ফোটায়। আফগানিস্তানের রাস্তার গতিরোধক অনেক জায়গায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ফেলে যাওয়া ট্যাঙ্কের শেকল দিয়ে তৈরি। সেখানে আছে অনেক ‘ওয়ার লর্ড’, যাদের নিজেদের ক্যান্টনমেন্ট আছে, সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই সেখানে। এ যেন অন্য রকম এক জগত!
কৌতুহলভরে গল্পগুলো শুনেছিলাম আর ভাবছিলাম যদি কোন দিন যেতে পারতাম ওখানে সচক্ষে দেখতে! ব্র্যাকের কর্মীদের যেহেতু মাঠে-ঘাটে কাজকর্ম করতে হত, দুষ্কৃতিকারীদের হাতে তারা মাঝে মধ্যে কিডন্যাপ হতো, পরে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা লাগত। মূল কথা হল, আফগান জনগণকে অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াতে দেখলে আমরা যতটা ভয় পেয়ে যাই, ওদের দেশে সেটা অতটা অস্বাভাবিক নয়। যুগে যুগে ঐ দেশের ওপর বিদেশী আগ্রাসনের কারণে সেখানে এসব ডালভাতের মতই!
পিনাকী ভট্টাচার্যের এই অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখে সেই স্মৃতিগুলোই মনে পড়ে গেল…