somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনুষ্যত্বের চরম অবক্ষয়!! এরা কি মানুষ??!!

২৫ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হতভাগ্য মা ও অনাগত এক শিশু
প্রথম আলোর এই খবরটি আমার ব্লগে কপি করে রাখলাম শ্রেফ অনেকটা নিজের ডাইরীতে কোন ঘটনা লিখে রাখার মত করে... ইনশাল্লাহ একদিন এরা সঠিক পথে ফিরে আসবে... আমিন।

হাসপাতালে মাতৃত্বের গর্ব আর তৃপ্তি নিয়ে শুয়ে থাকার কথা ছিল তাঁর। পাশে থাকত সদ্যজাত স্বাস্থ্যবান একটি শিশু। পরম নির্ভরতায় মায়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকার কথা ছিল শিশুটির। আর মাও তাঁর সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে শিশুটিকে আগলে রাখতেন। কিন্তু এসবের কোনোটিই হয়নি—হতে দেওয়া হয়নি। যা ঘটেছে তা ভয়ংকর। হাসপাতালেই শুয়ে ছিল চীনের সেই মা। জীবিত তবু যেন মৃত। এলোমেলো চুল ছড়িয়ে ছিল মুখে। পাশে তাঁর অচেতন কন্যাসন্তান। শিশুটি বেঁচে নেই। তাকে বেঁচে থাকতে দেওয়া হয়নি। বেঁচে আছেন মা। তবে অচেতন, অনেকটা জড় পদার্থের মতো।



চীনের হতভাগ্য এই মায়ের নাম ফেনজ জিয়ানমেই। চীনা সরকারের এক সন্তাননীতির শিকার তিনি। দ্য ইকনোমিস্টে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, চীনের স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে গর্ভে থাকতেই হত্যা করেছে শিশুটিকে। সাত মাসের সন্তানসম্ভবা ফেনজ জিয়ানমেইকে ইনজেকশন দিয়ে মৃত সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করেছে চীনের সরকার।

ফেনজ চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাংহাই প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন। তিন বছর আগে হলেও তাঁর এই দুর্ভোগের কথা অজানাই থেকে যেত। কিন্তু এখন যুগটা তথ্যপ্রযুক্তির। ইন্টারনেট এখন সারা বিশ্বকেই আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। আর তাই ফেনজের স্বজনেরা তাঁর ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। আর সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট, ব্লগের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায় সেই ছবি। এই ঘটনা দেখে চীনের অধিবাসীরাও ইন্টারনেটে তাদের উদ্বেগের কথা জানায়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এটি ফেনজের একার দুর্দশা নয়। চীনের সরকারের এক সন্তাননীতির কারণে এমন দুর্দশার শিকার ফেনজের মতো আরও অনেক মা-বাবা।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট টুইটারের চীনা সংস্করণ সিনা উইবোতে লিয়াং জিয়ানঝাং বলেন, শুধু সাংহাইয়ে নয়, শুধু ফেনজের সঙ্গে নয়, অনেককেই এ ধরনের ভয়ংকর ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। গর্ভপাতে বাধ্য করা হয়েছে অনেক মাকে।

চীনা সরকারের এক সন্তাননীতির আরেক সমালোচক হি ইয়াফু বলেন, এটি কেবল একজনের ঘটনা নয়। ১৯৮৩ সালে পরিবার পরিকল্পনা কমিটি চীনের এক কোটি ৪০ লাখ মাকে গর্ভপাতে বাধ্য করে। ২০০৯ সালে জোর করে ৬০ লাখ মায়ের গর্ভপাত করানো হয়। তবে সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা এই সংখ্যা প্রকাশে আপত্তি জানান।

চীনে একের বেশি সন্তান থাকলে সরকারকে জরিমানা দিতে হয়। এই জরিমানার সরকারি নাম হলো ‘সামাজিক ভরণপোষণের ব্যয়’। হি ইয়াফুর মতে, ১৯৮০ সাল থেকে সরকার ৩১ হাজার ৪০০ কোটি ইউয়ান জরিমানা আদায় করেছে। এই টাকা না দিলে সরকার দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত সন্তানটির জন্য বাসস্থান বা শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করে না। সাংহাইয়ে স্বামী ও স্ত্রীকে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য ১৭ হাজার ৩০০ ডলার জরিমানা দিতে হয়। আয় বাড়লে জরিমানাও বাড়ে।

প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসী ফেনজের জন্য জরিমানার পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। তাঁর জরিমানা ছিল ৪০ হাজার ইউয়ান। শর্ত ছিল, সরকারকে এই জরিমানা দিলেই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে পারবে ফেনজে। কিন্তু দরিদ্র মা ফেনজের পক্ষে তা ছিল একেবারে অসম্ভব। ফেনজের স্বামী দেং জিউয়ান স্থানীয় জল বিদ্যুেকন্দ্রের স্বল্প-বেতনের একজন কর্মচারী। মাসে তাঁর আয় চার হাজার ইউয়ান। জরিমানা দিতে হলে আয় করতে হবে আরও বেশি। তাই ৩০ মে জিউয়ান মঙ্গোলিয়ার কয়লা খনিতে কাজ নেন। লক্ষ্য একটিই। যদি আরও কিছু অর্থ পাওয়া যায়। যদি বাঁচানো যায় শিশুটিকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। অনাগত শিশুকে বাঁচাতে সন্তানসম্ভবা ফেনজ লুকিয়ে ছিলেন তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে হানা দেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা। তাঁরা দরজা ভেঙে বাড়িটিতে ঢোকেন। ফেনজ কাছের এক পাহাড়ে পালান। সেখানে এক বন্ধুর বাড়ির খাটের নিচে লুকান ফেনজ। কিন্তু শিশুকে বাঁচানোর এই চেষ্টাটিও ব্যর্থ হলো। ফেনজের স্বামী দেং জানান, সে সময় পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা ফেনজকে দেখে হাসতে থাকেন। একজন জোর করে ফেনজকে একটি ফর্মে সই করান। এরপর ফেনজের তলপেটে জোর করে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এর ৩০ ঘণ্টা পর ফেনজ মৃত শিশুর জন্ম দেয়। অনাগত সন্তানকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্ন ভেঙে যায় তাঁর। কোনো আইনি সংস্থা হতভাগ্য এই মায়ের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। ১৪ জুন প্রাদেশিক সরকার ফেনজের কাছে ক্ষমা চায়। বলা হয়, ঘটনার জন্য দায়ী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। তবে কোনোটিই হয়নি। যে শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখতে দেওয়া হয়নি, তার বাবা ও ফেনজের হতভাগ্য স্বামী দেং জানতে চেয়েছেন, ‘অতিরিক্ত সন্তানের জন্য জরিমানা দেওয়ার মতো অর্থ আমার কাছে ছিল না। আর তাই সারা জীবন সন্তান হারানোর দুঃখ বয়ে বেড়াব আমরা? সরকারের কাছে এটাই কি আমাদের প্রাপ্য?’
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×