সদালাপে জনাব আবু সাঈদ জিয়াউদ্দিন ব্লগের চিরন্তন ছাগু ট্যাগিং এবং এই "ছাগু" শব্দটিকে পুজি করে নাস্তিকদের ইসলাম ধর্মকে হেয় করার অপচেষ্টার একটি সুন্দর বিশ্লেষন করেছেন। একইভাবে তিনি সমাজের ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বরুপও উন্মোচন করেছেন। এক কথায় একটি চমৎকার বিশ্লেশন!! সচেতন পাঠকদের জন্য এই লেখাটি হুবহু কপি পেস্ট করে দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।
হুমাযুন আহমেদের ছাগু হওয়া বনাম অন্তর্জালে নাস্তিকতা আর কিছু কথা
হুমায়ুন আহমেদের “ব্ল্যাক ফ্রাইডে” সম্পর্কিত লেখা আর সেখানে কবি শহীদ কাদরী সম্পর্কিত কিছু তথ্য উপস্থাপনের পর নিশ্চিত ছিলাম বাংলাভাষী নাস্তিককুলে তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের মাঝে বিলাপ শুরু হবেই। বিশেষ করে শহীদ কাদরীর নাস্তিকতার অবসানের খবর হজম করার ক্ষমতা যে নাস্তিক নামধারী ইসলাম বিদ্বেষীদের নেই তা নিশ্চিত ছিলাম একশত ভাগ। আর যদি তথ্যটা আসে হুমায়ুন আহমেদের লেখার মাধ্যমে – তাহলে তো তাদের মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়বেই – তা বুঝার জন্যে জ্যোতিষ শাস্ত্র অধ্যয়নের দরকার হয় না। কারণ – নাস্তিকদের যে যুক্তিতর্ক তাতো সবই ধর্মের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত – যা যুগযুগ ধরে শুধু মাত্র পুনঃপৌনিক ভাবে উচ্চারিত হচ্ছে – যার কোন উত্তর এরা জানেও না বা জানতে চায়না। নাস্তিকতার মূল মন্ত্র হলো প্রশ্ন করো – কিন্তু উত্তরের দিকে নজর দেবে না। যে যত বেশী প্রশ্ন করতে পারবে সে তত বড় জ্ঞানী – উদাহরণ আরজ আলী মাতুব্বর। আর যারা উত্তর জানে – তারা বেআক্কেল শ্রেণীভূক্ত।
যাই হোক বাংলাভাষী আন্তর্জালিক নাস্তিকতার চর্চা দেখছি গত দশ বছর ধরে। তার থেকে যা বুঝেছি – তা হল -
১) ইন্টারনেটে – বিশেষ করে ব্লগগুলোতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী নাস্তিকের সংখ্যা খুবই কম। সৃষ্টি রহস্য নিয়ে বিতর্ক করার মতো মেধাবী নাস্তিক নাই বললেই চলে।
২) বাংলা ব্লগের নাস্তিকরা মূলত ইসলাম বিদ্বেষী – এদের বিতর্ক বা কুৎসা মূলত ইসলামকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খায়। কি মুক্তমনা – কি সচলায়তন কি আমারব্লগ – সবই এই প্যাটার্নে চলে। সব জায়গায় বাক স্বাধীনতার নামে ইসলামের সমালোচনা করা যতটা আদৃত হয় – অন্যকোন ধর্মের সমালোচনা করাকে তেমনি সমানভাবে ধিক্কার দেওয়া হয়। উদাহরণ – সচলায়তনে তানবীরা তালুকদার নামের উঠতি নাস্তিক যখন হিন্দু ধর্মকে বর্ণবাদী বললেন – তখনই তীব্র বিতর্ক শুরু হল – তাকে সাম্প্রদায়িক হিসাবে হৈ চৈ করে উঠেছে অনেক মুক্তমনার আড়ালে সনাতন-পন্থীরা। বাংলা ব্লগগুলোর মোটামুটি অঘোষিত নীতি হল ইসলাম ছাড়া যে কোন ধর্মের সমালোচনা বা আলোচনা হবে "সাম্প্রদায়িকতা"। আর সুশীলদের জন্যে সাম্প্রদায়িক চিহ্নিত হওয়া আত্মহত্যার শামিল।
৩) ইসলামের পক্ষে যারা ইতিবাচক লেখালেখি করে তাদের মুখবন্ধ করার জন্যে একটা বিশেষ অস্ত্র ব্যবহার করে নাস্তিক তথা ইসলাম বিদ্বেষীরা। তা হল "স্বাধীনতা বিরোধী" ট্যাগ – যা ব্লগের পরিভাষায় "ছাগু"।
৪) ব্লগের নাস্তিকরা সাধারণত নিকের আড়ালে লেখালেখি করে – গালিগালাজ দেয়। এদের অনেকের আবার সুশীল নিক আছে যা দিয়ে ভাল ভাল কথা বলে। যেমন আমারব্লগের কর্তাব্যক্তি তাদের মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হয়ে আছে। উনার স্বনামে নিকের বাইরেও নিশ্চিত আরেকটা ইউজার আইডি (নিক) আছে যা শুধু মাত্র ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। ব্লগে হিট যখন কমে আসে উনি সেই নিকটা ব্যবহার করে ইসলামকে বিতর্ক করার জন্যে পোস্ট দেন। এখানে সহজেই বোধগম্য যে – ব্লগের এলিট বন্ধুরা জেনেশুনেও চুপচাপ থাকেন কারণ উনারা হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে ব্লগ চালায় – তাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। যারা আমারব্লগে ইসলামের পক্ষে লেখালেখি করতে গিয়ে ছাগু ট্যাগিং পেয়েছেন – এরা অত্যন্ত নির্ভুল একটা প্রবাদ ভুলে গিয়েছিলেন – “জলে নেমে কুমীরের সাথে বিবাদ করতে নেই”।
৫) ইসলাম সম্পর্কে কম জানার কারণে অনেকেই নাস্তিকদের ইসলাম সম্পর্কিত বিতর্কগুলো এড়িয়ে চলেন – এর মানে এই না যে উনারা নাস্তিকদের পছন্দ করেন।
৬) অনেকগুলো প্রতিষ্ঠিত নাস্তিক নিক আছে যারা আসলে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী। ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ধার্মিক – দেশে গিয়ে দুর্গাপূজা করেন – গ্রামের বাড়ীতে মন্দির নির্মাণ করেন – আর অন্তর্জালে ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি করে নাস্তিকতা প্রসার করেন।
৭) ব্লগের নাস্তিকদের সাথে ধর্ম নিয়েও বিতর্ক করা যায় না – কারণ এদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান মকসুদুল মোমেনিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
অন্তর্জালের নাস্তিকরা আসলে বাংলাদেশে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চায় যেন নতুন প্রজন্ম ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বড় হয়। আর আগেই বলেছি নাস্তিকতার ভিত্তি যেহেতু খুবই দুর্বল – স্বাভাবিক ভাবেই এরা গালাগালি আর ট্যাগিংকে প্রধান অস্ত্র বানায়। এবার এই অস্ত্রের আঘাতে আহত হলেন হুমায়ুন আহমেদ।
(২)
অবশেষে হুমায়ুন আহমেদ ছাগু হলেন – যিনি মুক্তিযুদ্ধে বাবাকে হারিয়েছেন। শুধু তাই না – বাংলাদেশের অন্ধকারাচ্ছন্ন ৭৫ থেকে ৯০ সালের সময়কালে রেডিও-টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। রাজাকার শব্দটা নিষিদ্ধ ছিল আর আজকের অনেক সুশীলই সেই সময় এই নিষেধাজ্ঞা মেনেই নাটক বানাত – সেখানে দেখানো হতো মুক্তিযোদ্ধা মানেই একজন জীবন-যুদ্ধে পরাজিত পঙ্গু নয়তো পাগল। সেই সময় হুমায়ুন আহমেদ একটা ধারাবাহিক নাটকে "তুই রাজাকার" বাক্যটি ব্যবহার করতে দিতে টিভি কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেছিলেন – সেই থেকে “রাজাকার” শব্দটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন যুব-সমাজের মাঝে। উনার বই, নাটক আর সিনেমা সবই মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। তা হলে কী হবে – উনার অপরাধ উনি ইসলামকে একটু প্রশ্রয় দিয়েছেন – নাস্তিকদের বিশ্বাসকে হালকা করে দিয়েছেন। সুতরাং উনাকে ছাগু হতেই হবে।
শুধু হুমায়ুন আহমদে কেন – স্বয়ং শেখ মুজিবকেও প্রায় ছাগু বানিয়েছে মুক্তমনা অভিজিত। এক লেখায় উনি বলেছেন যে – ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্রের সব ধর্মকে নিষিদ্ধ করা- মানে একটা নাস্তিক-ল্যান্ড তৈরি করা। শেখ মুজিব ওআইসি সম্মেলনে গেলেন – ইসলামী ফাউন্ডেশন বানালেন – কাজটা ধর্মনিরপেক্ষতাকে অনুসরণ করে না।
মোদ্দা কথা হল মৌলবাদী চরিত্রের যে প্রধান বৈশিষ্ট্য তারই প্রকাশ হল ভিন্নমতের যে কোন মানুষকে ঘৃণা করা। একদিকে জামায়াত-শিবির যেমন যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রার্থী বা তার পক্ষের যে কোন মানুষকে নির্বিচারে "আওয়ামী", "বাকশালী" বা "ভারতের দালাল" হিসাবে চিহ্নিত করে – তেমনি ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-নামধারীরা ইসলামের পক্ষের যে কোন মানুষকে "মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী" হিসাবে চিহ্নিত করে। এরা আসলে মুদ্রার এই পিঠ আর অন্য পিঠ।
এই বিষয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে লেখতে গিয়ে আমি নিজেও বছর দশেক আগে গোলাম আজমের চ্যালা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলাম "ভিন্নমত" নামক অধুনালুপ্ত ওয়েব ফোরামে। মুক্তমনারা এই বিষয়ে একটু পিছিয়ে থাকলেও ধান্ধা-বাজির ক্ষেত্রে এরা এগিয়ে। কেউ কি কখনও শুনেছে যে শ্রদ্ধেয় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলাদেশে ইসলাম নির্মূলের আন্দোলনের স্বপ্ন দেখতেন? জামানারা ইমামের প্রতিষ্ঠিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এখন বাংলাদেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের কাজে সাফল্যের জন্যে মুক্তমনা গোষ্ঠীকে প্রথম "জাহানারা ইমাম" স্বর্ণপদক দিয়েছে। (দ্বিতীয়টা কে পেলো তা জানা যায়নি)
এই যে মুক্তিযুদ্ধকে ধর্মযুদ্ধ হিসাবে দেখার প্রবণতা – যা জামায়াত-শিবিরের মধ্যে যেমন আছে মুক্তমনা নাস্তিক-নামধারীদের মধ্যেও তা প্রবল। এই দুই পক্ষের ধর্ম আর মুক্তিযুদ্ধকে এক করে ফেলার – যার পিছনে অবশ্যই ঐতিহাসিক কারণ আছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করা সবগুলো দলই ইসলামের নাম নিয়ে গণহত্যাকে সমর্থনই শুধু করেনি – নিজেরাও অংশগ্রহণ করেছে। এই কথা ভুলে গেলে চলবে না যে যখন বাংলাদেশের মানুষের উপর পাক-বাহিনীর প্রবল জুলুম নেমে এসেছিলো – তখন নিজামীরা প্রচার করেছে "পাকিস্তান আল্লাহর ঘর"। “পাকিস্তান রক্ষা” আর “ইসলাম রক্ষা” সমার্থক করে ফেলেছিল এই ধর্ম-ব্যবসায়ীরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজও তাদের সমর্থকরা সেই অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেনি।
আর ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রবল জাতাকলে নিষ্পেষিত সাধারণ মানুষ যখন ইসলামের সার্বজনীনতার ছায়াতলে সমবেত হয় – তখন থেকেই উচ্চশ্রেণীর সনাতন ধর্মের লোকজন ইসলামকে একটা অনুপ্রবেশকারী মতাদর্শ হিসাবে প্রচার করছে। ভারতীয় সংস্কৃতির বিপরীতে আরবিয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ হিসাবে চিত্রিত করে এরা যতদূর সম্ভব ইসলামকে হেয় করার চেষ্টা করেছে – যার প্রতিফলন আজও দেখি বাংলা সাহিত্যে, নাটকে বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। একমাত্র হুমায়ুন আহমেদ ছাড়া আর কারো নাটকের পাত্রপাত্রী রোজা রাখে না – নামাজ পড়ে না – যদিও বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের এই দৃশ্যগুলো খুবই সাধারণ। কমপক্ষে শুক্রবারের দিনের দৃশ্য নামাজের ঘটনা ছাড়া কিভাবে হয়। বাংলাদেশে এমন কয়টা পরিবার আছে যার মধ্যে কমপক্ষে একজন মানুষও শুক্রবারের মসজিদে যায় না? কিন্তু নাটকের শত শত পাত্রপাত্রী একটা বায়বীয় জগতে থাকে – এরা সচেতনভাবে দৈনন্দিন জীবনের ধর্মকে আড়ালে রাখে। ঈদে শতশত নাটক তৈরি হয় – উপন্যাস লেখা হয় – ঈদ উপলক্ষে সেইগুলো নিয়ে ব্যবসা হলেও সেখানে পাত্রপাত্রী কখনও ঈদের জামাতে যায় না। কিংবা কোরবানি নিয়ে কথা হয় না – যা বাস্তবতার বাইরে – তবুও তাই দেখানো হয় টিভিগুলোতে। সুশীলতার আড়ালে ইসলামকে জীবন থেকে আলাদা করার একটা খুবই কার্যকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো।
এই কথা অনস্বীকার্য যে ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে ইসলামকে আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে নূতন করে তুলে দিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র – যারা ইসলামকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। ইসলামের নামে গণহত্যা আর নারী ধর্ষণকে জায়েজ করার যে প্রবণতা দেখিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী-চক্র – তার সুযোগ গ্রহণ করেছে ইসলাম বিদ্বেষীরা। এই চক্রের সক্রিয় সহায়তা করছে কিছু নির্বোধ ধর্ম-বিদ্বেষী মুসলিম নামধারী। মুক্তমনের আড়ালে ইসলাম-বিদ্বেষীরা নাস্তিকতাকে ঢাল বানিয়ে তাদের শতবছরের পুরনো শত্রুতাকেই চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে।
(৩)
কয়েকদিন আগে দেখলাম টিভিতে জাসদ নেত্রী শিরিন আক্তার বলছিলেন – ধর্মান্ধদের প্রতিহত করার জন্যে চাই সঠিক ধর্ম শিক্ষা। শুনে অবাক হয়েছিলাম – কারণ উনারাই ধর্মহীন সমাজ চাইতেন এক সময়। আজ উনাদের উপলব্ধি হয়েছে যে ধর্মকে কোনভাবেই মানুষের মন থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। অর্থাৎ ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা যে অলীক – তা শিরিন আক্তাররা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। যেমনটা দেখেছি ব্যক্তিজীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন কবি শহীদ কাদরী। আমি শুধু শিরিন আক্তারের সাথে একটু কথা যোগ করতে চাই – শুধু ধর্মান্ধই না – ধর্মবিদ্বেষীদের প্রতিহত করার জন্যে চাই সঠিক ধর্ম শিক্ষা। আমার বিশ্বাস সদালাপের পাঠক আর লেখকরা এই বিষয়ে একমত হবে যে – যারা ধর্মকে রাজনৈতিক সুবিধার জন্যে ব্যবহার করতে চায় – পক্ষে অথবা বিপক্ষে – এরা আসলে ধর্ম আর সমাজের শত্রু।