হিন্দুত্ববাদ মানে এক জাতি, এক ধর্ম, এক রাষ্ট্র, বহুধর্মের সহবস্থানকে এই ধর্ম প্রত্যাখান করে। তাদের মতে ভারত হবে হিন্দুদের রাষ্ট্র – হিন্দুস্তান। হিন্দু ধর্মভিত্তিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় সমাজসেবক সংঘ (আরএসএস) সাথে বিজেপির বিশেষ সংশ্লিষ্টতা ছিলো, আছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) হচ্ছে বিজেপির অন্য আরেক প্লাটফর্ম। আরএসএস এবং ভিএইচপি উভয়েরই বিজেপির উপর যথেষ্ট প্রভাব আছে। বিজেপির বেশির ভাগ সদস্যই আরএসএস এরও সদস্য।
শত কোটি জনগোষ্টীর ভারতে আরএসএস ১৩ কোটি মুসলমান ও ৩ কোটি খ্রিস্টান, উভয়কেই সব সময় সন্দেহের চোখে দেখে। এমনকি আরএসএসের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার প্রচার ক্যাম্প পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এম্নকি হত্যারও অভিযোগ পাওয়া যায়।
বাবরী মসজিদের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচারনা পূর্নতা পায় ১৯৯২ সালে। বছরব্যাপী ব্যপক বিস্তৃত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পর, অযোথ্যায় উগ্রপন্থী হিন্দুদের একটি দল (১৯৯২ এর ৬ ডিসেম্বর) ৪৬৪ বছরের পুরনো বাবরী মসজিদ গুড়িয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সেই সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আরএসএস ও ভিএইচপি বাবরী মসজিদের স্থানে একটি মন্দির নির্মান করতে চায়। তাদের মতে, ঐ স্থানটা নাকি হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থান। ২০০৩ সালের ২ এপ্রিল ভিএইচপি’র জেনেরাল সেক্রেটারি প্রবীণ তাগোডিয়া প্রকাশ্যে শিকার করেন তাদের সংগঠনই বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে।
একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত মৌলবাদী ভীতি এই যে, আগামী ১০০/২০০/৪০০ বছরে ভারতে হিন্দুরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। লেখক নেইল দে ভোটটা জানান, এই ভঁয়ের কারনেই হিন্দু পূনরুত্থ্যানবাদী আর্য সমাজ শুদ্ধি আন্দোলন চালিয়ে ছিলো। এই শুদ্ধির ফলে হিন্দু থেকে খ্রিস্টান কিংবা মুসলমান হয়ে যাওয়া লোকেরা বা যাদের পূর্বপুরষ হিন্দু ধর্মে ফিরে আসতে পারবে। ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে উল্লেখ করে মৌলবাদী হিন্দুরা (মৌলবাদী সব ধর্মেই আছে) প্রমান করতে চায় ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের নিস্বেশ করার জন্য দীর্ঘকাল ধরে ষড়যন্ত্র করছে। তাছাড়া বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষাকে বেছে নেওয়া হিন্দুত্ববাদের ঠিকে থাকার যুক্তি থেকে। যখন এক ধর্মীয় জনগোষ্ঠী অন্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যাকে চিরস্থায়ি ভাবে নিয়ন্তন করার চেষ্টা করে তখনি উতপ্ততি হয় সাম্প্রিদায়িক দাঙ্গা।
দেখা যাচ্ছে, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগ, কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের দীর্ঘ বিরোধ প্রভৃতি বিষয়ের প্রেক্ষিতে মৌলবাদী হিন্দুদের বিশ্বাস যে, ভারতিয় মুসলমানরা পাকিস্তানের অনুচর হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ১৯৯২ সালের বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পৃথক সামাজিক আইন এই সব কিছু হিন্দু মুসলমান বিরোধ টিকিয়ে রাখতে ভুমিকা রেখেছে। এটা পরিষ্কার যে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদিরা ভারতে যা কিছু মুসলমান বা ইসলাম ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট তার বিনাশে বদ্ধ পরিকর। যদিও ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুরা ধর্ম নিরপেক্ষ ও সহবস্থানে বিশ্বাসী। সংকির্ণ ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে ধর্ম এটা খুবই মর্মান্তিক। মূলত সব ধর্মের চরমপ্নথিরা মিলে বিদ্দ্বশ ও সংঘর্ষ্কে বাচিয়ে রেখে ধর্মেরই ক্ষতি করেছে। যখন কিনা প্রকৃত অর্থ সহনশীলতা, সোউহার্দে ও শান্তি। পোপ দ্বিতীয় জন পল যেমন বলেছেন সব ধর্মেরই শান্তি কামনা করা উচিৎ।
যুদ্ধ মানে সর্বদাই মানবতার পরাজয়, এটা ধর্মের ট্রেজেডি!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫