আমি এখন পড়ি ফাইনাল ইয়ারে। তাতে কি? বয়সটা হয়ত একটু বেড়েছে। তবে মনের বয়সটা থেমে আছে সেই ১৫/১৬ তেই । তাইতো আমার মাঝে রয়ে গেছে অনেক পাগলামি আর ছেলেমানুষি। পাগলামিটা মহামারি আকার ধারন করে গ্রামে গেলে। কারন ওখানে আমার সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে আমার মত অনেক পাগলের ছড়াছড়ি। ওদের মধ্যে আমার সবচেয়ে যোগ্য সহচরটা ***বুলবুল। আমার সব পাগলামিতে ওর অংশগ্রহন থাকেই।
আই এ্যাম উইথ মাই সাঙ্গপাঙ্গ
এখনো আম, জাম, কাঠাল চুরির অভ্যাসটা ছাড়িনি। ছাড়িনি মুরগি, হাস আর মাছ চুরিটাও। সাথে চলে গরু, মোষ আর ছাগল চরানো। রিক্সা ভ্যান চালানোতেও অনেক আগ্রহ। একবার তো পরের রিক্সা চালাতে গিয়ে এ্যাকসিডেন্ট করে জরিমানাও দিতে হলো।
উই আর ইন এ্যাকশান
দুইতিন মাস আগে একমাসের দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। জানি বাড়িতে একা একা ভালো লাগবে না। তাই বুলবুলকেও বাড়ি যেতে রাজি করালাম। ওর ক্লাস তেমন হচ্ছিল না। তাই রাজি করাতে তেমন বেগ পেতে হলোনা। তাছাড়া বাড়িতে ওর জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিলো। চমকটা আর কিছুই না। বললাম বাড়িতে আয় তার সাথে দেখা করাবো। ব্যস এক কথায় রাজি। ঝিনেদা থেকে বুলবুলকে আমার বাসেই পিক-আপ করলাম।
আমাদের গ্রামটা জরাজীর্ণ গ্রাম। আসে পাশের গ্রামের লোকজন তাচ্ছিল্য করে বলে ভঁড় গ্রাম। রাস্তাঘাটের অবস্থা তেমন ভালো না। বাসটা তাই আমাদের গ্রাম পর্যন্ত পৌছায় না। আড়াই কিলোমোটার দূরে এক বাজারে নামিয়ে দেয়। ওখান থেকে কিছু পথ রিক্সা আর বাকিটুকু পদযুগলেই ভরসা।
বাস থেকে আমাদেকে কার্পাসডাংগা বাজারে নামিয়ে দেওয়া হলো। এই বাজারের একটা জিনিস আমাদের খুব প্রিয়। সেটা হলো পেয়াজে বড়া। এই বাজারে পদার্পন করেছি আর পেয়াজে বড়া খাইনি এমনটা কখনো হয়নি। সেদিনও খেলাম, তবে মন ভরলো না। তাই রিক্সায় ওঠার আগে বাজার থেকে পেয়াজে বড়া ভাজতে যা যা লাগে সবই কিনে নিলাম। নেক্সট পরিকল্পনা বাড়িতে গিয়ে পেয়াজে বড়া ভাজা।
বাড়ির গেটেই আব্বুর সাথে মোলাকাত। হাতে বাজারের গাট্টিগুট্টি দেখে উনার মুখ থেকে প্রথম যে কথাটা বেরুলো তা হলো, "মানুষ বাড়ি আসে মিষ্টি, ছোট ভাইদের জন্য খেলনা, চকলেট, জামা-কাপড় এসব নিয়ে। আর তোরা আসিস পেট হাতে নিয়ে। বাড়িতে পৌছানের আগেই তোদের খাওয়া-দাওয়ার চিন্তা শুরু হয়ে গেল"? আমি বললাম লিমনের (আমার ছোট ভাই) জন্যও তো এনেছি। বলল কি এনেছিস শুনি? আমি বললাম কি আর চিপস, চকলেট, মিষ্টি। আর এই পেয়াজে বড়া তো ওর জন্যও। আব্বু এসব কান্ড দেখে যে বিরক্ত হয় তা না। অনেকদিন থেকেই এসব পাগলামি দেখে অভ্যস্ত। সয়ে গেছে হয়ত। আমারতো মনে হয় মজাও পায়।
ঐদিন রাত এগারোটার দিকে পেয়াজে বড়া ভাজলাম । তারপর সবাই একসাথে খেলাম। এবার ঘুমানোর পালা। কিন্তু আগামীকালের কর্ম-পরিকল্পমা না করে যে আমাদের ঘুমুতে যাওয়া মানা। আমার আর বুলবুলের নেক্সট মিশন হিসেবে গৃহীত হল ছাগল চরানো। সাবজেক্ট আমাদের ছয়টা ছাগল।
এ্যা পারফেক্ট কাউবয়
পরদিন সকালে নাস্তা করে লুঙ্গি পরে গামছা মাথায় দিয়ে ছাগল নিয়ে বের হলাম। বেশ-ভুসায় এখন প্রফেশনাল রাখাল। আধাঘন্টা মত পরে গন্তব্যস্থল ছাগলের চারনভূমিতে পৌছালাম। চারনভূমিটা ছিল মেইন রোডের পাশেই। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মত দূর হবে। ছাগল চরছে আর আমরা রোডের আশে পাশে ঘোরাঘুরি করছি। হঠাত দেখলাম ওখানে একটা ভ্যান গাড়ি (তিন চাকার গাড়ি। রিক্সার বিকল্প। গ্রামে চলে। শহরে দেখা যায় না।) পড়ে আছে। আশে পাশে মালিকের সাড়া পেলাম না। ভ্যান রেখে কোথাও গিয়েছে হয়ত। কু-বুদ্ধিটা মাথায় আসলো। ছাগল চরছে চরুক। নেক্সট মিশন ভ্যান।
বুলবুল ভ্যান চালাচ্ছে আর আমি গাইছি, "রিক্সা চালাই ভ্যান চালাই গাজী টায়ার টি্উব। হাতি মার্কা ঘোড়া মার্কা গাজী টায়ার টিউব"। আপাতত ও ড্রাইভার আর আমি হেল্পার। সমস্যা নেই মাঝে মাঝে পজিশন চেন্জ হবে। আপাতত লক্ষ্য একজন প্যাসেন্জার। ফ্রি ফ্রি যদি কয়েকটা টাকা ইনকাম করা যায় মন্দ কি? ঐ টাকা দিয়ে আরেকটা পেয়াজে বড়া পার্টি দেওয়া যাবে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
বুলবুল ইন উপরে ফিটফাট এ্যান্ড ভেতরে সদরঘাট
***বুলবুল আমার খুবই ভালো বন্ধু। ও ঝিনেদা পলিটেকনিক্যালে কম্পিউটারে পড়ে। আমার চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। বাড়িতে গেলে প্রায় ২৪ ঘন্টা একসাথেই থাকি। ওদের আর আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। আমি বাড়িতে গেলে ও আমাদের বাড়িতে আমার সাথেই ঘুমোই। কে কাদের বাড়িতে খাই তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। বুঝতেই পারছেন কেমন ঘনিষ্ঠতা। এই ঘনিষ্ঠতা শুধু আমার আর ওর মধ্যেই নয়, ওর আর আমার ফ্যামিলির মধ্যেও বিদ্যমান।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:২১