somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিশন 2 : পেয়াজু বড়া, ছাগল আর ভ্যানগাড়ি

২৩ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এখন পড়ি ফাইনাল ইয়ারে। তাতে কি? বয়সটা হয়ত একটু বেড়েছে। তবে মনের বয়সটা থেমে আছে সেই ১৫/১৬ তেই । তাইতো আমার মাঝে রয়ে গেছে অনেক পাগলামি আর ছেলেমানুষি। পাগলামিটা মহামারি আকার ধারন করে গ্রামে গেলে। কারন ওখানে আমার সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে আমার মত অনেক পাগলের ছড়াছড়ি। ওদের মধ্যে আমার সবচেয়ে যোগ্য সহচরটা ***বুলবুল। আমার সব পাগলামিতে ওর অংশগ্রহন থাকেই।



আই এ্যাম উইথ মাই সাঙ্গপাঙ্গ

এখনো আম, জাম, কাঠাল চুরির অভ্যাসটা ছাড়িনি। ছাড়িনি মুরগি, হাস আর মাছ চুরিটাও। সাথে চলে গরু, মোষ আর ছাগল চরানো। রিক্সা ভ্যান চালানোতেও অনেক আগ্রহ। একবার তো পরের রিক্সা চালাতে গিয়ে এ্যাকসিডেন্ট করে জরিমানাও দিতে হলো।



উই আর ইন এ্যাকশান

দুইতিন মাস আগে একমাসের দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। জানি বাড়িতে একা একা ভালো লাগবে না। তাই বুলবুলকেও বাড়ি যেতে রাজি করালাম। ওর ক্লাস তেমন হচ্ছিল না। তাই রাজি করাতে তেমন বেগ পেতে হলোনা। তাছাড়া বাড়িতে ওর জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিলো। চমকটা আর কিছুই না। বললাম বাড়িতে আয় তার সাথে দেখা করাবো। ব্যস এক কথায় রাজি। ঝিনেদা থেকে বুলবুলকে আমার বাসেই পিক-আপ করলাম।

আমাদের গ্রামটা জরাজীর্ণ গ্রাম। আসে পাশের গ্রামের লোকজন তাচ্ছিল্য করে বলে ভঁড় গ্রাম। রাস্তাঘাটের অবস্থা তেমন ভালো না। বাসটা তাই আমাদের গ্রাম পর্যন্ত পৌছায় না। আড়াই কিলোমোটার দূরে এক বাজারে নামিয়ে দেয়। ওখান থেকে কিছু পথ রিক্সা আর বাকিটুকু পদযুগলেই ভরসা।

বাস থেকে আমাদেকে কার্পাসডাংগা বাজারে নামিয়ে দেওয়া হলো। এই বাজারের একটা জিনিস আমাদের খুব প্রিয়। সেটা হলো পেয়াজে বড়া। এই বাজারে পদার্পন করেছি আর পেয়াজে বড়া খাইনি এমনটা কখনো হয়নি। সেদিনও খেলাম, তবে মন ভরলো না। তাই রিক্সায় ওঠার আগে বাজার থেকে পেয়াজে বড়া ভাজতে যা যা লাগে সবই কিনে নিলাম। নেক্সট পরিকল্পনা বাড়িতে গিয়ে পেয়াজে বড়া ভাজা।

বাড়ির গেটেই আব্বুর সাথে মোলাকাত। হাতে বাজারের গাট্টিগুট্টি দেখে উনার মুখ থেকে প্রথম যে কথাটা বেরুলো তা হলো, "মানুষ বাড়ি আসে মিষ্টি, ছোট ভাইদের জন্য খেলনা, চকলেট, জামা-কাপড় এসব নিয়ে। আর তোরা আসিস পেট হাতে নিয়ে। বাড়িতে পৌছানের আগেই তোদের খাওয়া-দাওয়ার চিন্তা শুরু হয়ে গেল"? আমি বললাম লিমনের (আমার ছোট ভাই) জন্যও তো এনেছি। বলল কি এনেছিস শুনি? আমি বললাম কি আর চিপস, চকলেট, মিষ্টি। আর এই পেয়াজে বড়া তো ওর জন্যও। আব্বু এসব কান্ড দেখে যে বিরক্ত হয় তা না। অনেকদিন থেকেই এসব পাগলামি দেখে অভ্যস্ত। সয়ে গেছে হয়ত। আমারতো মনে হয় মজাও পায়।

ঐদিন রাত এগারোটার দিকে পেয়াজে বড়া ভাজলাম । তারপর সবাই একসাথে খেলাম। এবার ঘুমানোর পালা। কিন্তু আগামীকালের কর্ম-পরিকল্পমা না করে যে আমাদের ঘুমুতে যাওয়া মানা। আমার আর বুলবুলের নেক্সট মিশন হিসেবে গৃহীত হল ছাগল চরানো। সাবজেক্ট আমাদের ছয়টা ছাগল।



এ্যা পারফেক্ট কাউবয়

পরদিন সকালে নাস্তা করে লুঙ্গি পরে গামছা মাথায় দিয়ে ছাগল নিয়ে বের হলাম। বেশ-ভুসায় এখন প্রফেশনাল রাখাল। আধাঘন্টা মত পরে গন্তব্যস্থল ছাগলের চারনভূমিতে পৌছালাম। চারনভূমিটা ছিল মেইন রোডের পাশেই। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মত দূর হবে। ছাগল চরছে আর আমরা রোডের আশে পাশে ঘোরাঘুরি করছি। হঠাত দেখলাম ওখানে একটা ভ্যান গাড়ি (তিন চাকার গাড়ি। রিক্সার বিকল্প। গ্রামে চলে। শহরে দেখা যায় না।) পড়ে আছে। আশে পাশে মালিকের সাড়া পেলাম না। ভ্যান রেখে কোথাও গিয়েছে হয়ত। কু-বুদ্ধিটা মাথায় আসলো। ছাগল চরছে চরুক। নেক্সট মিশন ভ্যান।

বুলবুল ভ্যান চালাচ্ছে আর আমি গাইছি, "রিক্সা চালাই ভ্যান চালাই গাজী টায়ার টি্উব। হাতি মার্কা ঘোড়া মার্কা গাজী টায়ার টিউব"। আপাতত ও ড্রাইভার আর আমি হেল্পার। সমস্যা নেই মাঝে মাঝে পজিশন চেন্জ হবে। আপাতত লক্ষ্য একজন প্যাসেন্জার। ফ্রি ফ্রি যদি কয়েকটা টাকা ইনকাম করা যায় মন্দ কি? ঐ টাকা দিয়ে আরেকটা পেয়াজে বড়া পার্টি দেওয়া যাবে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!





বুলবুল ইন উপরে ফিটফাট এ্যান্ড ভেতরে সদরঘাট

***বুলবুল আমার খুবই ভালো বন্ধু। ও ঝিনেদা পলিটেকনিক্যালে কম্পিউটারে পড়ে। আমার চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। বাড়িতে গেলে প্রায় ২৪ ঘন্টা একসাথেই থাকি। ওদের আর আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। আমি বাড়িতে গেলে ও আমাদের বাড়িতে আমার সাথেই ঘুমোই। কে কাদের বাড়িতে খাই তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। বুঝতেই পারছেন কেমন ঘনিষ্ঠতা। এই ঘনিষ্ঠতা শুধু আমার আর ওর মধ্যেই নয়, ওর আর আমার ফ্যামিলির মধ্যেও বিদ্যমান।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:২১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×