আজ সারাটা দিন ভীষন ব্যস্ততায় কেটেছে। গতকাল সারারাত জেগেছি আর আজ সারাদিন ঘুমিয়েছি। এই ব্যস্ততার মাঝে তাই ওকে আর ফোন করা হয়ে ওঠেনি। ও অবশ্য কয়েকবার ফোন করেছিল। কিন্তু আমার ধরার দূর্ভাগ্য হয়নি (দূর্ভাগ্য কেন বললাম সেটা পোষ্ট পড়লেই বুঝতে পারবেন)।
যাইহোক, ঘুম থেকে উঠলাম বিকেল চারটার দিকে। উঠেছি তো উঠেছিই, বিছানা ছেড়ে আর নামতে ইচ্ছে করছে না। তাই আরো একঘন্টা বিছানাতে আড়ামোড়া ভাঙ্গলাম। কিন্তু কতক্ষন আর আলসেমী করে থাকা যায়। তাই উঠতেই হল।
ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নাস্তা করতে গেলাম। সারাদিন পেটে কোন দানা-পানি পড়েনি। ক্ষুধায় অস্থির ছিলাম। তাই হাতের কাছে পাঁচ/সাতটা পরোটা যা পেলাম, তাই মেরে দিলাম। পেটাবাবা ঠান্ডা। পেট পূজো শেষে হেলে-দুলে রুমে আসলাম। রুমে পৌছাতেই ওর ফোন। ভয়ে-ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। মনে মনে নিয়ত করলাম, যাই বলুক হ্যা না কিছুই বলবো না।
ফোন ধরার সাথে সাথেই শুরু হল ঝাড়ি। আমাকে কোন আত্বপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হলনা। অনেকক্ষণ ঝাড়ি দেওয়ার পর ও চুপ করে রইল। একনাগাড়ে অনেক কথা বলে ফেলায় হয়ত ক্লান্ত হয়ে গেছে। আমি মিউ মিউ করে বললাম, জান্ এখন রাখা যায় না? কাল আমার ক্লাসটেষ্ট আছে। ও কথার কোন জবাব দিল না। মনে হয় রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে। আমি ছোট্ট করে বললাম, আই লাভ ইউ। ও কোন উত্তর করল না। বলল, ঠিক আছে পড়তে বসো। বলেই কটাস করে লাইন কেটে দিলো। মনে মনে বিধাতার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। যাক বাবা, এ যাত্রাটা তো রক্ষা পেলাম।
ফোন রেখে সজল স্যারের চোতা-পাতি খুললাম। পড়বার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু নির্বোধ মোবাইলটা এটা বুঝলো না। ঢং ঢং করে মেসেজ টোন বাজিয়ে দিল। ভাবলাম জিপির "এক টাকার কথা বললে একশ টাকার টকটাইম ফ্রি" টাইপের কোন স্প্যাম হবে। কিন্তু আমার জন্য আরো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছিল। এসএমএস টা ছিল ওর। লেখাপড়া শিকেই উঠল। শুরু হল এসএমএস এ ক্যাচলা-ক্যাচলি।
ও : সারাদিন কথা বলনি। তারপরও "আই লাভ ইউ" এই কথাটা বলতে পারলে না তুমি?
আমি : বলেছি তো। তুমি মনে হয় শুনতে পাওনি।
ও : কখন বললে তুমি? আর এমন করেই বললে যে আমি শুনলাম না?
আমি : তুমিও তো একবার বলতে পারতে।
ও : তুমি বলো কিনা তাই শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
আমি : তাহলে কেটে দিলে কেন?
ও : তুমি বললে এক্সাম আছে। কেটে না দিয়ে কি করবো? আমার সাথে কথা বলতে গেলেই তো তোমার এক্সাম শুরু হয়।
আমি : ভু ঝগড়া করে লাভ আছে? আগে বলিনি এখন বলছি। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ। চুম্মা চুম্মা চুম্মা।
ও : দরকার নেই ভাই। তুমি পড়তে বসো।
আমি : মেয়ে লোকের এই একটা সমস্যা। ঝগড়া থামাতে চাইনা।
ও : কে বলল আমি তোমার সাথে ঝগড়া করছি। কাল এক্সাম আছে। পড়তে বসো।
আমি : ইসস। মেয়ে লোকের সাথে যদি সংসার করতে না হতো!!!!!
ও : সংসার করার ইচ্ছে নেই তাহলে???
আমি : ইচ্ছা না থাকার আর উপায় আছে???
ও : অবশ্যই উপায় আছে। তোমার কি ইচ্ছা তাই বলো।
আমি : আমার ইচ্ছা.....না থাক। জীবনের মূল্য অনেক বেশী। তুমি যা বলবে তাই হবে সোনা।
ও : কুত্তা, তোকে সংসারের সব কাজ করতে হবে মনে রাখিস্।
আমি : ঠিক আছে প্রভু। তবুও তুমি আমার উপর বেজার হইয়ো না।
ও : আমার সাথে এসএমএস দিয়ে সময় নষ্ট না করে পড়তে বসো।
আমি : ঠিক আছে মালিকিন। আপনি যাহা বলিবেন তাহাই হইবে।
ও : এই তুমি কি আমাকে আলিফ-লাইলার মালিকা হামীরার কথা বলছো?
আমি : না গো জানু। সেই সাহস কি আর আমার আছে?
যাই হোক, ঝগড়াঝাটিতে জল ঢেলে দিয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু পড়তে মন বসছে না। আজ কেন জানি আনমনা হয়ে যাচ্ছি। আজ ওকে নিয়ে ভাবতে অন্যরকম লাগছে। মাঝে মাঝে জীবনটা বড় একঘেয়েমী লাগে। বেচে থাকার কোন অর্থ খুজে পাইনা। এরমাঝেও এমন কিছু খুন-শুটি আছে বলেই এই পৃথিবীতে আরো কিছুদিন থাকতে ইচ্ছে করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:২২