আমার আবার তেমন আত্বীয় বাড়ী বেড়াতে ভালো লাগেনা। তাই বাসায় একরকম বন্ধী হয়ে রইলাম। সকাল-বিকাল লোকাল বন্ধুদের সাথে একটু আধটু আড্ডা দিই। বাকি সময়টা ডিসকভারী, ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ও খেলার চ্যানেল গুলো দেখে কাটাই। এভাবে আস্তে আস্তে বিরক্তি চলে আসতে লাগলো।
কয়েকদিন পর থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা শেষ করে বুলবুল বাড়ীতে আসল। ও একটা পলিট্যাকনিক্যালে কম্পিউটারে পড়ে। আমার খুবই ভালো বন্ধু। আমর চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। বাড়িতে গেলে প্রায় ২৪ ঘন্টা একসাথেই থাকি। ওদের আর আমাদের বাড়ী পাশাপাশি। আমি বাড়িতে গেলে ও আমাদের বাড়িতেই ঘুমোই। কে কাদের বাড়ীতে খাই তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। বুঝতেই পারছেন কেমন ইন্টিমেসি। ওর সাথে বোঝা-পড়াটাও দারুন। ফ্যামিলিগত সম্পর্কটাও দারুন।
আমরা একসাথে হলে প্রতিদিন নতুন নতুন প্ল্যান করি। তো একদিন রাতে শুয়ে শুয়ে প্ল্যান করলাম মাঠ থেকে মটরশুঁটি চুরি করবো। তারপর পুড়িয়ে খাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। পরদিন সকালের দিকে ম্যাচ নিয়ে মটরশুঁটির সন্ধানে বের হলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে একটা মটরশুটির ক্ষেত খুজে বের করলাম।
(উপরে) মটরশুঁটি চুরি করছি আমি আর (নিচে) পাহারা দিচ্ছে বুলবুল।
ওগুলো পোড়ানোর জন্য গাছের নিচে পড়ে থাকা শুকনো পাতা সংগ্রহ করলাম।
এখন পোড়ানোর পালা।
পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় মনে হয় একটু বেশীই পুড়ে গেছে।
এবার খা্ওয়ার পালা। সাথে জুটে গেলেন এলাকার এক বড় ভাই। উনি মাঠে গরুর জন্য ঘাস কাটতে এসেছিলেন। ধরা পড়ে গেলাম উনার কাছে। কি আর করা। উনাকেউ ভাগ দিতে হল।
খেতে খেতে ভীষন তেষ্টা পেলো। শুকনো জিনিস তো, তাই গলায় আটকিয়ে যাচ্ছিল। তাও গলা টেনে টেনে খেতে লাগলাম। দুজন দুজোনের দিকে তাকাচ্ছি। আশেপাশে পানি নেই। তাই কেউ কিছু বলছিনা। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষন থাকা যায় বলেন? অবশেষে খাওয়া বাদ দিয়ে পানির সন্ধানে বের হলাম।
কিছুক্ষন খোজা-খুজির পর পানির একটা উৎসও খুজে পেলাম। এটা ছিল একটা পানির ক্যানেল। অনেক দূর হতে হয়ত কোন শ্যালো-মেশিন থেকে পানি আসছিল। কোন বাচ-বিচার না করে ক্যানেল থেকেই পানি পান করতে লাগলাম।
মন ভরে পানি খাচ্ছি। হঠাৎ বুলবুল রসিকতা করে বলল,"মনে কর আমরা এখানে পানি খাচ্ছি আর দুরে কেউ প্রাকৃতিক কর্ম সেরে ক্যানেলের পানিতে ধোয়া-ধুয়ির কাজ করছে। ব্যাপারটা কেমন হবে বলত? "
ওর কথায় হাসি যেমন পেল, মেজাজও খারাপ হয়ে গেল। পানি খাওয়ার কোন রুচিই আর রইল না।
যাইহোক, পানি খেয়ে গাছের ছায়ায় বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। তারপর দুপুরের দিকে মিশন শেষ করে বাড়ী ফিরলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:২৩