আমাদের প্রানপ্রিয় নেতা, বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত , বিশ্বের অধিকারহীন মানুষের অধিকার আদায়ের কারিগর, বর্নবাদকে গুডবাই বলে দেয়া মহান নেতা , নেলসন ম্যান্ডেলার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

আমরা খুবই গর্বিত যে তার মত মহান একজন নেতাকে শুধু ইতিহাসে পড়ছি না, তার জীবিত অবস্থায় আমরাও জিবিত আছি। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন এই গর্ব থেকে আমাদের বঞ্ঝিত না করেন। ....

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর পর তিনিই গণতান্ত্রিকভাবে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেইয়ের রাজধানী উমতাতার নিকটবর্তী মভেজো গ্রামে থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় ম্যান্ডেলা জন্মগ্রহণ করেন।

কৈশোরে তাঁকে ডাকা হতো রোলিহ্লাহ্লা (Rolihlahla) নামে, যার অর্থ 'গাছের ডাল ভাঙে যে'। এরপর স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর শিক্ষিকা মদিঙ্গানে তাঁর ইংরেজি নাম রাখেন 'নেলসন'। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের কাছে তিনি পরিচিত মাদিবা নামে। ম্যান্ডেলা তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।

১৯৪৮ সালে নির্বাচনে বর্ণবাদ এবং জাতিগত পক্ষপাতিত্বে বিশ্বাসী দল ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। শুরু করেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন এবং বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হন।
১৯৬১ সালে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ে (এমকে)-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ম্যান্ডেলাকে আবার ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় এবং শ্রমিক ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেওয়া ও বেআইনিভাবে দেশের বাইরে যাওয়ার অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর ১৯৬৪ সালের ১১ জুন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে এএনসির সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্বদানের অভিযোগ আনা হয় এবং শাস্তি দেওয়া হয়।
১৯৮০ সালে এমকে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ম্যান্ডেলা ও এএনসি কর্মীদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তাদের দেশে নিষিদ্ধ করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ম্যান্ডেলা প্রায় ২৭ বছর কারাগারে আটক ছিলেন। কারাবাসের প্রথম ১৮ বছর কাটান রবেন দ্বীপের কারাগারে, সেখানেও চালু ছিল বর্ণভেদ প্রথা। জেলে থাকার সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এফ ডবি্লউ ডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস সহ অন্যান্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই সঙ্গে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয়। কারামুক্তির পর ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৯৪ সালের ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সে বছরই জুন মাসেই রাজনীতি থেকে অবসর নেন ম্যান্ডেলা।
গত চার দশকে তিনি ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার। জাতিসংঘ ২০০৯ সাল থেকে এই মহান নেতার জন্মদিন ১৮ জুলাই 'ম্যান্ডেলা দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে।