ঘরের মানুষ বলে দাওনা একটা পোষ্ট। রান্নাঘরে ব্যস্ততা তখন।
ছেলেদের জন্য খাবার রান্না করছি। আমরা দুজন মন্ট্রিয়ল যাবো বলে এই তাড়াহুড়া।
রাশীক রাইয়ান যাচ্ছে না.......কয়েক ঘন্টার জন্য যাওয়া আর আসা।
আমাদের সংসার জীবনের শুরু হয়েছিলো ওখানে। কত স্মৃতি,কত মানুষ।
রান্নার ফাঁকে ফাঁকেই ব্লগে বসে কিছু মন্তব্য ,কিছু ইমেইল। কিছু কথাবলা লিখে। আমরা যখন বের হলাম বেলা সাড়ে তিনটা তখন।হাইওয়েতে গাড়ী খুব বেশী নেই। ঝকঝকে একটা দিন।যতদুর চোখ যায় শুধু নীল আকাশ ।মাঝে মাঝে সাদা মেঘেদের উড়োউড়ি।
গল্প কথায় পৌছে গেলাম মন্ট্রিয়ল........
জান্তাল্যন আর ব্যূমন্ট এর কর্ণারে গাড়ী রাখা হলো ।টিম হর্টনের পার্কিং এ।
এর পর দুজনে হাঁটলাম।আমাদের বাসাটার সামনে কিছুক্ষন.......ঐ রাস্তাটার দিকে তাকালেই মনে হয় দুর থেকে হেলাল ,মীরা আর গল্প আসছে......আমাদের কত স্মৃতিময় সময় যে গেছে। ও বললো চলো তোমাকে একটা গিফট কিনে দেই বন্ধু দিবসে। আমি বললাম আমাদের বন্ধু দিবস তো কাল। ওরটা পাওনা রইলো.......
আসার সময় নাসিমা আর বাবুভাই এর কথা খুব মনে পড়ছিলো।
গতমাসে ওরা সাসকাচুয়ান এ ম্যুভ করেছে। এর আগেরবার ও যখন গেছি,মন্ট্রিয়লে ঢুকতেই ফোন ......এসে গেছি।
কিযে এক খুশি হওয়া মুখ। যতবার গেছি কত কিযে রান্না করেছে। মাঝে মাঝে তাই ইচ্ছা করে বলে যাইনি.....ফোন করে পৌছাতে পৌছাতেই কত আয়োজন। বিদেশ এর মাটিতে এমন আন্তরিকতা ,এমন ভালোবাসা,এমন বন্ধুত্ব খুব কমই মেলে। গাড়িতে বসে এই কথাগুলোই বলছিলাম আমরা।
চেনা মানুষ তো কতজনই। বন্ধু আসলে কজন?
মামুন ভাইকে অনেকবার ফোন করি। এত সুন্দর বিকালে বাসায় থাকবার কথা না। মাসুদ ভাই এর ফোন নং টা আনা হয়নি।ও বললো টিম হর্টনে আসবে সন্ধ্যায়। একটা ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট এ খেলাম দুজনে। আমি বললাম তুমি গাড়ীতে বসে একটু রেস্ট করো। আমি জান্তাল্যন এর রাস্তায় হাঁটি।
সন্ধ্যা নামছে.....বেশীর ভাগ দোকানই বন্ধ। শুধু খাবারের দোকান ছাড়া।
সামু ফ্যাশন এর সামনে দাঁড়িয়ে একটা শাড়ি দেখলাম। সাদার মধ্যে সাদা সুতার কাজ......খুবই সুন্দর। আসা যাওয়ার পথে দুবার দাঁড়িয়ে দেখলাম। দোকানটা বন্ধ বলে ঢোকা হলোনা।
আমার খুব চেনা একটা শহরের ভীষন চেনা একটা রাস্তায় ঘুরছি, অচেনা এক মানুষের মত। রাশীক কে ফোন করি। ওরা খাওয়া শেষ করে টিভি দেখছে। রাশীকটার উপর অনেক নির্ভরতা আমাদের।
কিছু কেনাকাটা করি.......সংসারের নানান টুকিটাকি। পার্কিং এর কাছে পৌছাতেই দেখি কোথায় রেস্ট? ও দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে কয়েকজনের সাথে।কাজী আলম বাবু ভাই আর তার পরিচিত বন্ধুরা। একজন আগের চেনা(নামটা মনে নেই)। অন্যজন মুহিব ভাই ।পত্রিকা বের করেন। লেখালেখি নিয়ে অনেক গল্প হলো। আমি বললাম কি করে ব্লগে লেখালেখি শুরু হলো।উনারা খুব মন দিয়ে শুনলেন। কথার ফাঁকেই মাসুদ ভাই আসলো। কত্তদিন পর দেখা......এই মানুষগুলো যতদিন পর দেখা হোক না কেনো। মাঝে যোগাযোগ থাক বা না থাক....বুকের কোথায় যে থাকে।
আমাদের সংসার জীবন আমাদের রাশীকের বড় হওয়া সব তো উনাদের সামনেই।আত্মীয় স্বজনহীন পরিবেশে উনারা যে আদর করেছেন । মাসুদ ভাই কফি খাওয়ালো। মামুন ভাই ফোন করে জানালেন কেবল বাসায় ফিরেছেন...ফেরার পথে দেখা করতে সম্ভব হলে। এলেন নূর মোহাম্মদ কাজি ভাই ,ল্যুইস ভাই ।
কাজী ভাই কত গল্প যে করলেন। নীলু আপা এলো একটু পর। কাজী ভাই ই ডেকেছিলেন। উনার এক বন্ধু হঠাৎ অসুস্হ্য হয়ে হাসপাতালে। অসুখটা রাশীকের বাবার সাথে মিলে যাওয়ায়......উনি এলেন কথা বলতে,
ও ওর অসুস্হ্যতার বিষয় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেনা....।অথচ কেনো যেনো অনেকক্ষন কথা বললো।নিরন্তর যুদ্ধ করা এই মানুষটা আমার সংগী। আমি ওর সহযোদ্ধা। ও যত কথা বললো। সবাই শুনলো আমিও শুনলাম। দিনের পর দিন পাশে থেকেও কত অনুভব কত কষ্ট তো অজানাই থেকে যায়। সব কথা কি বলা যায় না কি বলে মানুষ। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার সারাজীবনের বন্ধু। আমার রাশীক রাইয়ানের বাবা।
কথায় কথায় রাত বারোটা। ফিরতে হবে। সিগন্যালের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায়। হঠাৎ দেখি অন্যপাশ থেকে মুহিব ভাই এর সাথে একজন আসছে।খুব চেনা একটা মুখ।পান্না ভাই। আমাদের চেয়ে ছোট কিন্তু এখানে একসাথে কলেজে পড়েছিলাম। আমাকে আপা ডাকে। ওকে দেখলে সবসময়ই খুব কাছের মনে হয়। নিজের একটা ভাই ই মনে হয়।একটা অদ্ভুত ছেলে। কিছুটা ইন্ট্রোভার্টিভ.....মাঝে মাঝে হঠাৎ মনে হলে ফোন করে। আবার হারিয়ে যায়। তবু দেখা হলে কি যে ভালো লাগে।
আমি শুধু বলছিলাম কি দারুণ একটা সন্ধ্যা যে কাটলো আজ......সকালে বন্ধু দিবসের লেখা কি লিখবো ভাবতেই একটা গান মনে আসছিলো শুধু।
পান্না ভাই বারবার বলছিলো আসবো সাজি আপা ...দই বানাবেন তো?সেই যে প্রফেশনাল?
সবাই বললো আসবে।
কত কিছু নেই। কত মানুষ।তুহিন ভাই ছবির হাটে বসে ছবি আঁকছে।হেলালটা ঢাকায় বসে ছবির কাজ করছে। নাসিমা সাসকাচুয়ান এর আকাশ দেখছে। আমার প্রিয় বন্ধু মা বসে আমাদেরই কথা ভাবছে
আমার বাবা কোন সে আকাশের তারা হয়ে আমাদের কথা কি ভাবছে?
আমার মত হৃদয়তাড়িত একটা মানুষ একটা সন্ধ্যার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম।
ফিরে আসার পথে রাতের আকাশটার দিকে তাকালাম।সবাই ভালো থাক।
আমি ওর হাত ছুঁয়ে দিলাম। বললাম পান্না তো ঠিকই বলেছে ,আসলেই প্রার্থনার কোন সময় নাই।প্রতিটা নিঃশ্বাসই তো প্রার্থনা।
বেঁচে থাকার আনন্দের।
যে বন্ধু আমার কাছের ,যার সাথে কত দিনরাত্রি যাপন তার পাশে বসে ফিরতে থাকি নিজেদের ঘরে.......
আর সব বন্ধুরা ....কাছে এবং দুরের ।
সবাইকে জানাই অনেক অনেক শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:৫৩