যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ধরা শুরু হয় তখন 'সেভ শিবির' নামে একটি সংগঠন বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা এবং পত্রিকার সাথে যোগাযোগ করে এবং সংবাদ সম্মেলন করে জামাতের কয়েদী নেতাদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে। এবং কিছু পদত্যাগ নাটকও মঞ্চস্থ হয় যা হয়তো অনেকে মনে রেখেছেন।
শীর্ষ জামাত নেতাদের পরিবারে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের নানা ফিরিস্তি এবার ফাঁস হয়েছে দলের ভেতর থেকে। খোদ জামাতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের একটি বৃহৎ অংশ ফাঁস করে দিয়েছে জামাত নেতা ও তাদের স্ত্রী, সন্তানদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড। তারা জানিয়েছে মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রীর অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা। জানিয়েছে নিজামীর ছেলের নিয়মিত নাইটক্লাবে যাতায়াতের ঘটনা। এ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে জামাতের শীর্ষ নেতৃত্বে। ‘সেভ শিবির’-এর ব্যানারে শিবিরের বিদ্রোহীদের অভিযোগ, ‘কর্মীদের ইসলামের পথে চলা আর সৎ মানুষ হওয়ার কথা বললেও জামাত নেতাদের পরিবার চলে ইসলামের বিরুদ্ধে। কর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখালেও জামাতের আমীর নিজামীসহ কোন নেতাই নিজেদের পরিবারে সেই স্বপ্ন দেখায় না।’ গত ২৬ মে ২০১০ ঈসায়ী জঙ্গি জামাত-শিবিরের নেতাদের ইসলামবিরোধী নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ শিবির ত্যাগী বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে মইত্যা রাজাকার নিজামীর পরিবারের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে ঘোষণা দেয়া হয়, ‘কয়েকদিনের মধ্যেই সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ, নায়েবে আমীর সাঈদীসহ বাকি জামাত নেতাদের পরিবারের ইসলামবিরোধী অপকর্ম প্রকাশ করা হবে।’
শিবিরের বিদ্রোহী অংশ থেকে মূলত জামাত নেতাদের কথা আর কাজের মধ্যে অমিলকে তথা ধর্মব্যবসার চিত্রকেই তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘জামাত এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের ইসলামের কথা বলে, ভাল মানুষ হিসাবে চলতে বলে। এতে আমরা উজ্জীবিত হই, ইসলামের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করতে উজ্জীবিত হই, কিন' আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা হলো, এই জামাত নেতাদের পরিবারে তাদের সন্তানরা কেউ ইসলামের পথে নেই। কেউ শিবির করে এই পথে আছে তার খবর নেই।’
প্রথমে জামাতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কথা তুলে ধরে শিবিরের অংশটি বলেছে যে, নিজামীর পরিবার দেখেই বোঝা যাবে তারা নিজেরা কতটা ইসলামের পথে হাঁটে? এতে আরো বলা হয়েছে, নিজামীর স্ত্রী সামসুন্নাহার নিজামী এককভাবে ছাত্রী সংস্থা এবং মহিলা জামাতকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা সম্পূর্ণ ইসলাম ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ। বলা হয়েছে, এই মহিলা (নিজামীর স্ত্রী) জামাত পরিচালিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষা ছিলো। সেখানে অনেক টাকার হিসাব দিতে পারেনি। তার পরেও স্বামীর দাপটে কিছুদিন পদে টিকে থাকলেও একসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে নিজেই একটা স্কুল খুলেছে। কিন' স্কুল করার সব টাকা নেয়া হয়েছে জামাতের কর্মীদের কষ্ট করে জমানো ফান্ড থেকে, যা চরম অপরাধ।
নিজামীর বড় ছেলে তারেকের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় নাইট ক্লাব, বার থেকে শুরু করে সব আজে বাজে জায়গাতে গমনাগমনই ছিল তার মূল কাজ। বাংলাদেশে এসে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার সময়েও তার বিরুদ্ধে উঠে ছাত্রীদের সঙ্গে অসামাজিক কাজ করার অভিযোগ। বলা হয়েছে, নিজামী অন্যদের বললেও এই ছেলেকে কখানোই ছাত্রশিবিরের কোন কাজেই আসতে দেখা যায়নি। বিদ্রোহীরা বলেছে, নিজামীর অন্য সব ছেলেময়েরা তাদের বড় ভাইয়ের মতো চরিত্রহীন না হলেও কেউ ইসলামী (তথা জামাতের) আন্দোলনে জড়িত ছিলো এমন প্রমাণ দিতে পারবে না নিজামী। বিদ্রোহীরা জামাত নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ১০০ ভাগ সত্য দাবি করে বলেছে, এই ঘটনাগুলো মিথ্যা বলে আমীরদের পরিবার প্রমাণ করতে পারবে না। শিবিরের এই অংশটি আরো ঘোষণা দেয় যে, জামাত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুস সোবহান, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম খানসহ সব জামাত নেতার পরিবারের ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রকাশ করা হবে।