somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জার্মানিতে ভারতীয় এবং পাকিস্তানীদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা

১৪ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখকঃ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা
ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাগে কাজ করার সময় সেখানে পাকিস্তানি এবং ভারতীয় ডিপার্টমেন্ট থাকায় আমার অনেক ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।আজ তাদের সঙ্গে আমার কর্মজীবনে প্রাপ্ত কিছু অভিজ্ঞতা বিষয়ে লিখছি।

ভারতীয়দের সঙ্গে অভিজ্ঞতা: তারা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে সমর্থন ও সাহায্য করেছিল তা মনে করিয়ে দেয়।তারা মুখে ভাই ভাই বললেও আমাদেরকে নীচু জাতি হিসেবে দেখে এবং বাংলাদেশ নিয়ে অহরহ তামাশা করে। তারা শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেট লিডার বললেও বোঝানোর চেষ্টা করে ভারতের সমর্থন ছাড়া বাংলাদেশ নামে কোন ভুখন্ডের জন্ম হতো না।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টিকে আছে ভারতের সাহায্য নিয়ে। এমনকি ভারতীয় বাঙ্গালীদের বলতে শুনেছি, বাংলাদেশের বাংলা আসলে বাংলা ভাষার ব্যাঙ্গাত্বক রুপ। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশীরা সঠিক ভাবে বাংলা লিখতে বা পড়তে জানেনা। আমাদের সাহিত্যিকরা তাদের কাছে কোন সাহিত্যিকই নয়, এমনকি ছ্যা.. ছ্যা.. শব্দ উচ্চারণ করে তারা বাংলাদেশের বাংলাকে অপমান করে থাকে । অথচ বাংলাদেশের প্রাপ্য সব জায়গায় তারা ভাগ বসায়, সে গ্যাসই বা নদীর পানিই হোক অথবা বাংলাদেশ বর্ডারের শেষ সীমানাই হোক..আর যদি তা বাংলাদেশের জন্য তৈরী রেডিও, টিভি হয় তাহলেতো কথাই নেই।।এক্ষেত্রে তারা বলবে বাংলাদেশে কোন সাংবাদিকই নেই এবং বাংলাদেশে সাংবাদিকতার মান খুব নীচু। বিদেশী বসের ভাষাগত অজ্ঞানতার সুবিধা নেবে আর বসের পিছনে চাটুকারিতা, এমন কি প্রয়োজনে সব কিছু দিয়ে বসকে খুশী করে পদবী দখল করার খেলায় তারা মত্ত্ব। এই খেলা বাংলাদেশীদের বুঝতে অনেক সময় লাগে, আরে তাতেই কেল্লা ফতে। জার্মান সরকার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জয়ের পরে তখনকার বাংলাদশী রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনুরোধে যে বাংলা ডিপার্টমেন্টটি উপহার স্বরুপ বাংলাদেশকে দেয়া হয়োছিলো; তার বর্তমান বিভাগীয় প্রধান একজন ভারতীয় বাঙ্গালী। তার পাসপোর্ট ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দেয় বর্তমান বিভাগীয় প্রধান।এর কারন হলো, ডয়েচে ভেলের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি বিভাগের প্রধান হতে হবে সেই দেশের একজন নাগরিককে। অর্থ্যাৎ চাইনিজ বিভাগের প্রধান হবে একজন চাইনিজ।এ ক্ষেত্রে নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিলেই এই সুবিধাটি গ্রহণ করা যায়। যদিও ডয়েচে ভেলেতে ভারতীয়দের জন্য একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে। সেখানে কিন্তু কোন বাংলাদেশী বিভাগীয় প্রধান নয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পত্তি তারা দেশে বিদেশে সব জায়গায় নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে ভোগ ও হজম করে চলছে। আর সে যদি কোন প্রকারে হিন্দু হয়, তাহলে আরেকজন হিন্দু ভারতীয়কে বলবে, ঐ গরু খাওয়া মুছলমানের সঙ্গে এত মাখামাখি কেন?

এবার আসি পাকিস্তানীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে: তারা যদিও সাংবাদিকতা করে কিন্তু এমনভাব করবে যেন ১৯৭১ সালের বিষয়ে সঠিক তথ্য তাদের অজানা। প্রথমেই বলবে আরে, তোমরাতো পাকিস্তানীই ছিলে, আমরা তো ভাই ভাই।আরো বলবে, ১৯৭১ সালের পূর্ব পাকিস্তানে যে হামলা হয়েছিলো, তা ছিলো সামরিক সিদ্ধান্ত, পাকিস্তানী জনগণ এ ব্যাপারে অবগত ছিলো না, আসলে ১৯৭১ সালে কি হয়েছিলো তারা তা জানেই না, যদি একটু বুঝিয়ে বলি!! ধরুন, আপনি এই ফাঁদে ধরা দিলেন এবং বললেন, কি হয়ছিলো; তখন সে বলবে, লেকিন হাম লোগ তো দোস্ত হে না, পুরানি বাতো কো ভুল জানাহি আচ্ছা হে। এখানে আমার প্রশ্ন হলো, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অংশ কি পাকিস্তানী জনগণের বাইরে? তারা কি অন্য কোন গ্রহ থেকে পাকিস্তানে এসেছে? এখন পর্যন্ত পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে অফিসিয়ালী ১৯৭১ সালে তাদের অতর্কিতে বর্বরোচিত হামলা, হত্যা, ধর্ষণের জন্য এসবের ক্ষমা তো চাইনি সঙ্গে ১৯৪৭-১৯৭১ এর দেনা -পাওনা, যে টাকা আমরা পাকিস্তানের কাছে পাই তা বুঝিয়েও দেয়নি। তারপর, আপনাকে বাংলা বোঝেনা বলে, ইংরেজীতে কথা না বলে উর্দু বা হিন্দীতে কথা বলাতে উৎসাহিত করবে। আর আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করবে তারা কত উদার, কিন্তু আপনি পিছন ফিরলেই আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করবে, বলবে : আয়া বাংলাদেশসে.. হামারে বিনা ইয়ে আধুরী হে !! তারপর বিহারী প্রসঙ্গে কথা উঠলে বলবে, বিহারী লোগ কো হামে নেহি চাহিয়ে, তুমহি কো মুবারক হো। অথচ বাংলাদেশে অবস্থানরত বেশির ভাগ বিহারীরা এখন পর্যন্ত পাকিস্তানকে তাদের রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। আরো, ভয়ঙ্কর কিন্তু বাস্তব তথ্য হলো, পাকিস্তানীরা বলে তারা ১৯৭১ সমন্ধে কিছু জানে না, অথচ ১৯৭১ সালে নরওয়েতে এসে নরওয়ে সরকারকে জানিয়েছে, পাকিস্তানে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাদের জীবন বিপদগ্রস্থ; তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রয়োজন। এই ইস্যুকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে হাজার হাজার পশ্চিম পাকিস্তানী নরওয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলো। অথচ যুদ্ধ হয়েছিলো শুধু পূর্ব পাকিস্তানে অর্থ্যাৎ আজকের বাংলাদেশে।
সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, ভারত এবং পাকিস্তান নিজের দেশে একে অপরের জন্মশত্রু হলেও বিদেশে আসলে তারা তাদের পরম বন্ধু। আর তাদের বন্ধুত্বের যাতাকলে আপনাকে পিষতে থাকবে অনবরত, আপনার পেছন থেকে আপনার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্গাত্বক হাসি হাসতে থাকবে তারা। আর সামনা সামনি আপনি হলেন, তাদের ভাই.............

শেষ কথায় স্যার হুমায়ুন আজাদের ভাষায় বলতে চাই, পাকিস্তানীদের আমি বিশ্বাস করি না, তারা হাতে ফুল নিয়ে এগিয়ে আসলেও না।আর আমি স্পষ্টভাবে আমি সঙ্গে বেশির ভাগ সুবিধাবাদী ভারতীয়কেও বিশ্বাস করি না।

সূত্রঃ Click This Link
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×