ব্রণের অন্য নাম এক্নি (ACNE)। এক্নি বা ব্রণ হচ্ছে আমাদের শরীরের ত্বকের ফলিকলের এক প্রকার দীর্ঘমেয়াদী রোগ। মুখমন্ডল, গলা, বুকে ও পিঠের উপরিভাগ আর হাতের উপরিভাগে এই রোগটা হয়। এসব জায়গায় ছোট ছোট দানা, ছোট ছোট ফোড়া, সিস্ট এমনকি নোডিউল (Nodule) হতে পারে। এ রোগটা মুখমন্ডলেই সাধারণত বেশি হয়। ব্রণ বেশিরভাগ সময়ে গালে, নাকে কপালে আর থুতনিতে হয়ে থাকে।
সমস্যা বা রোগের কারণ :
পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন টেস্ট্রোরেন আর প্রোজেস্ট্রোরেনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেশি করে তেল নিঃসরণ শুরু করে। তবে এই তেল বের হয়ে আসতে পারে না। কারণ তেল বেরিয়ে আসার পথটি ক্রটিযুক্ত থাকে। তাই তেল গ্রন্থির ভিতর জমতে শুরু করে। জমতে জমতে এক সময় গ্রন্থিটা ফেটে যায়। ফলে তেল আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্যাকটেরিয়া তেলকে ভেঙে টিস্যুতে ফ্যাটি এসিড তৈরী করে। এই ফ্যাটি এসিড ত্বকের ভেতর সৃষ্টি করে প্রদাহ। এর ফলে চামড়ার মধ্যে দানার সৃষ্টি হয়। যা ব্রণ নামে পরিচিত।
কাদের বেশী হয় :
- বয়ঃসন্ধিকালে এ রোগটা শুরু হয়। ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বলা যেতে পারে, এটা টিনএজারদের রোগ।
- অনেকে অনেক বছর ধরে এ রোগ ভোগে। ২০ বছর বয়সের পর রোগটা কমে আসে। তবে কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত ও এ রোগ দেখা যায় । ছেলেদের বেলায় যদি ২১ বছরের পরও রোগটা হয় তবে তাকে একনি কংলোবেটা বলে।
প্রতিরোধের উপায় :
- মুখের তৈলাক্ততা কমাতে হবে।
- তৈলাক্ততা কমানোর জন্য সাবান দিয়ে দিনে কয়েকবার মুখ ধুতে হবে।
- তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে হবে, সেটাও বারবার ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
- বেশি করে শাক-সব্জি খেতে হবে ।
- তৈলাক্ত, ঝাল, ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে।
- ব্রণ একবার হয়ে গেলে খোঁটা যাবে না। খুঁটলে গর্ত হয়ে যাবে। তাছাড়া হাত আর নখ থেকে জীবাণু বেয়ে ব্রণকে আক্রান্ত করে। ফলে ব্রণটা ফোঁড়ায় রূপান্তরিত হয়। মুখে গর্ত তৈরী করে। তাই হাত দিয়ে বার বার ব্রণ স্পর্শ করা যাবে না বা গালানো যাবে না।
- অনেকে ফর্সা হওয়ার জন্য আর ব্রণের প্রতিকার হিসেবে স্টেরয়েড অয়েনমেন্ট ব্যবহার করে। এটা কোনোভাবেই করা যাবে না। এতে চামড়ার প্রচন্ড ক্ষতি হয়। স্টেরয়েড অয়েনমেন্ট ব্যবহার করার জন্য উল্টো ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে।
- ব্রণের জন্য যে দাগ গর্ত হয়, তা দূর করার ব্যবস্থা এখন দেশেই রয়েছে। তার মধ্যে পাঞ্চ স্কাররিমুভার, স্কার এলিভেশন, ডার্মাব্রেশন পদ্ধতিতে গর্ত আর দাগ দূর করে মুখের ত্বক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া যাচ্ছে।
- ব্রন পেকে গেলে বা বেশী হয়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ :
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- জেলা সদর হাসপাতাল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
- বেসরকারী হাসপাতাল
- চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
সচরাচর জিজ্ঞাসা :
প্রশ্ন.১.ব্রণ কি?
উত্তর. এক্নি বা ব্রণ হচ্ছে আমাদের শরীরের ত্বকের ফলিকলের এক প্রকার ক্রনিক রোগ। মুখ, গলা, বুকের উপরিভাগ আর হাতের উপরিভাগে এই রোগটা হয়। এসব জায়গায় ছোট ছোট দানা, ছোট ছোট ফোঁড়া, সিস্ট এমনকি নোডিউল হতে পারে।
প্রশ্ন.২.কাদের ব্রণ বেশী হয়?
উত্তর. বয়ঃসন্ধিকালে এ রোগটা শুরু হয়। ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বলা যেতে পারে, এটা টিনএজারদের রোগ।
প্রশ্ন.৩.ব্রণ থেকে মুক্তির জন্য কোন খাবার গুলো কম খেতে হবে?
উত্তর. তৈলাক্ত ঝাল, ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে।
প্রশ্ন.৫.ব্রণ কমানোর জন্য কোন ধরনের খাবার খেতে হবে?
উত্তর. বেশি করে পানি ও শাক-সব্জি খেতে হবে ।
প্রশ্ন.৬.ব্রণের দাগ ও গর্ত কিভাবে দূর করা করা যায়?
উত্তর. ব্রণের জন্য যে দাগ গর্ত হয়, তা দূর করার ব্যবস্থা এখন দেশেই রয়েছে। তার মধ্যে পাঞ্চ স্কাররিমুভার, স্কার এলিভেশন, ডার্মাব্রেশন পদ্ধতিতে গর্ত আর দাগ দূর করে মুখের ত্বক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া যাচ্ছে।
প্রশ্ন.৭. স্টেরয়েড অয়েনমেন্ট ব্যবহারে ব্রণ কি ভাল হয়ে যায়?
উত্তর. অনেকে ফর্সা হওয়ার জন্য আর ব্রণের প্রতিকার হিসেবে স্টেরয়েড অয়েনমেন্ট ব্যবহার করে। এটা কোনোভাবেই করা যাবে না। এতে চামড়ার প্রচন্ড ক্ষতি হয়। স্টেরয়েড অনেয়নমেন্ট ব্যবহার করার জন্য উল্টো ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্যসূত্র: J.D.Wilkinson/ S.Shaw, D.A. Fenton, Colour Guide, Dermatology, Churchil Livingstone,Page:42, 1987, Reprinted in 1994.
আমার আগের পোস্ট গুলো।।
গাজরের গল্প ।।।।
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ ।।।
ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবার ।।।
বাড়তি ওজনের এক খেসারত !!!
ক্যানসার প্রতিরোধ সহজেই !!!
অতি সহজ উপায়ে স্ট্রোক সনাক্ত করার উপায়!!!!!!!!
প্রতিরোধেই মিলবে স্ট্রোকের প্রতিকার