somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাসিরকে চাই .........

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১১ সালের ১৪ ই আগস্ট, দিনটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এদিন যে অভিষেক হল ১৯ বছরের নাসিরের। বিপদ থেকে উদ্ধার করে দলকে জিতিয়ে আনার শুরুটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে করেছিলেন তিনিই। অভিষেক ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে যখন নামছেন তখন ৫৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ। একশ রানের নিচে অলআউট হওয়ার লজ্জায় পড়তে হয় কিনা এই ভেবেই শঙ্কিত সবাই। কিন্তু নাসির যে অন্যরকম, ৯২ বলে ৫৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন, ১৮৮ রান করতে পারল বাংলাদেশ, যদিও হেরেছিল শেষ পর্যন্ত দল তবুও নিজের আগমনী বার্তাটা ঠিকই দিয়ে রাখলেন নাসির।শুরুর দিকে সবাই চিনত দাঁত ভাঙ্গা নাসির বলে। নিজের নয়, ভেঙ্গেছিলেন প্রতিপক্ষের দাঁত। ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে সেই আলোচিত দাঁত ভাঙ্গা দিয়েই শুরু পথ চলা। পঞ্চম ও শেষ ওযানডে ম্যাচে জিম্বাবুইয়ান পেসার কিগান মেথের বল স্ট্রেট ড্রাইভ করতে গিয়ে সরাসরি মুখেই লেগেছিল ঐ বোলারের। তৎক্ষণাৎ দুটি দাঁত পড়ে গিয়েছিল মেথের। রক্তাক্ত মুখে লুটিয়ে পড়েছিল মেথ। কিছুটা হতবিহ্বল ছিলেন নাসিরও। এরপর থেকেই শুরু। একটা সময় মিডল অর্ডারে হয়ে উঠেছিলেন নির্ভরতার কেন্দ্রবিন্দু। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ দলে যেটির বড়ই অভাব ছিল, সেই ধারাবাহিকতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন নাসির হোসেনই। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের চারটি ম্যাচে তার রান ছিল যথাক্রমে; ৪৭, ৫৪, ৩৬*, ২৮।

নাসিরকে ২০১১ সালে দলে নেওয়ার কারণ হিসেবে আকরাম খান বলেছিলেন, 'ওর মত কেউ ব্যাট করতে পারেনা, ও অবস্থা বুঝে খেলে, ধরে খেলতে হলে ধরে খেলবে, মারতে হলে মেরেও খেলতে পারে, ওর টেম্পারেন্ট খুবই ভালো।' আকরাম খানের কথা যে মিথ্যা ছিল না সেটা নাসির বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে পরের সিরিজেও দল যখন ধুঁকছে নাসির এসে ৫৪ বলে ৫০ করে দলকে টেনে তুললেন। ওই বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে জেতাতে পারেননি ঠিক। তবে নিজের সামর্থ্যের পূর্ণ প্রকাশ দেখাতে পেরেছেন নাসির। ২৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ সেখানেই। সমান্তরালে নাসিরের শুরুও তখন থেকেই। ১৩৪ বলে ১০০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন । সতীর্থ আর মাত্র দুজন যখন দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ৩৪। নাসিরের ইনিংসের মাহাত্ম্যটা এখানেই।

২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করার পেছনে নাসিরের কৃতিত্বই বেশি। প্রথম ম্যাচে যখন রান তোলার প্রয়োজন হল তখনও এগিয়ে এলেন নাসির, করলেন ৫৯ বলে ৭৩। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত পরের ম্যাচে বাংলদেশের জয়ের জন্য দরকার পড়ে দুই ওভারে ১৭ রান। নাসির এক ওভারের বেশি নেননি সেই রান তুলতে। চাপের মুখে নির্ভার থেকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয় এনে দেন নাসির হোসেন। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘কীভাবে পারেন মাঠে এমন নির্ভার থাকতে? আন্তর্জাতিক ম্যাচও তো আপনি পাড়ার মাঠের ঢঙে খেলেন!’ নাসির উত্তরে বললেন, ‘নতুন এক পরিবেশে আপনি এমনিতে যেভাবে কথা বলেন, সেভাবে না বললে কিন্তু সমস্যায় পড়বেন। ক্রিকেটও তেমনই, আগে পাড়ার মাঠে যেভাবে খেলতাম, আন্তর্জাতিক ম্যাচেও সেটা রিপিট করার চেষ্টা করি। আমার কাছে একটাই পার্থক্য—পাড়ার মাঠে ক্যামেরা থাকে না, আন্তর্জাতিক ম্যাচে থাকে। আর আমি চাপ উপভোগ করি। চাপ না থাকলে মনেই হয় না খেলাটা জমছে। দিন শেষে মনে হয়—আরে, এটা তো খেলাই, উপভোগের বিষয়।' বর্তমানে বাংলাদেশ দলে চাপ জয় করতে পারে এমন খেলোয়াড় আর একজনই আছে, সে হল মাহমুদুল্লাহ। নির্ভার নাসিরকে নিশ্চয় মিস করছিল সমর্থকরা পাকিস্তানের সাথে গত ম্যাচটিতে। নাসির থাকলে মাশরাফি হয়ত আগে নামতে হত না।

২০১৩ সালেই ইনিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফতুল্লায় ওয়ানডে নিউজিল্যান্ডের সাথে। কিউইরা ৩০৭ রান তুলে ফেলার পর স্বাগতিকদের জয়ের সম্ভাবনা দেখছিলেন না প্রায় কেউ। শামসুর রহমান-নাঈম ইসলামদের ফিফটিতে সে সম্ভাবনা জাগে আবার। আর তা বাস্তবতার জমিন খুঁজে পায় নাসিরের ব্যাটে। পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারিতে মাত্র ৩৮ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন তিনি। চাপের মুখে নাসিরের ভালো ইনিংস অনেক আছে, চাপেই যে খেলতে ভালোবাসেন। চাপের মুখে সেরাটা বের করে আনার ক্ষমতা বেশ ভালোভাবেই আছে তার। অথচ চাপের খেলা এই টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে এক অজানা কারণে দলে প্রায় ব্রাত্যই তিনি। দলে থেকেও সুযোগ পানানি একটি ম্যাচেও মাঠে নামার।

গত ম্যাচে মিঠুনের উপরে ভরসা করতে না পেরে মাশরাফি নিজেই আসলেন ব্যাটিং করতে। নাসির নিজেও একজন ফিনিশার, মাহমুদুল্লাহ বাদে বাকি যেসব ক্লোজ ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে তার সবগুলোই প্রায় নাসির ফিনিশিং দিয়েছে, তারপরেও এমন একজনকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এভাবে একজন খেলোয়াড়ের আত্নবিশ্বাস নষ্ট করে দেওয়া হয়। নাসির বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে। পাঠক আপনারাই বলুন পাকিস্তানের সাথে ম্যাচটাতে নাসির থাকলে আপনি নিজেও কি একটু নির্ভার থাকতেন না? নাসির না থাকায় একজন বোলারও কম। ইন্ডিয়ার তিন চার জন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, বাঁহাতিরা অফ স্পিনে তুলনামূলক একটু দুর্বল, নাসির থাকলে এই অপশনটাও বাড়বে।

সে খুব ভালো ফিল্ডার, একটা খুব ভালো ক্যাচ, অথবা ভালো কোন রান সেভ ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ফাইনালে নাসিরকেই চায় মিঠুনের জায়গায়।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×