somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকা ভ্রমণ .....

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন .

'গুয়াংজু বাইউন ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর' চায়নার অন্যতম বড় বিমানবন্দর। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের হাব এটা। চাইনিজ ভাষায় "বাইউন শব্দের অর্থ ''সাদা মেঘ''। নিকটবর্তী বাইউন পাহাড়ের অনুকরণে নামকরন করা হয়েছে। বিশাল এক এয়ারপোর্ট, দুইটা রানওয়ে, প্রায় ৩৭০০ মিটার একেকটা। যখন নামলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। চায়নার অন্য এলাকা থেকে তুলনামূলক উষ্ণ, প্রায় নাতিশীতোষ্ণ বলা যায়। বিমান থেকে নেমে সোজা চলে গেলাম কাউন্টারে, চিন্তা এখন হোটেলের, সাথে বাকি যাত্রাপথের টিকেট সংগ্রহ। আমার কাছে অনলাইনে কাটা টিকেটের হার্ড কপি , আর ঢাকা থেকে চায়না আসার টিকেটের যাত্রী কপি আছে। আমি জানতাম না যে যাত্রী কপি সংরক্ষণ করতে হয়। কি মনে করে যেন রেখে দিয়েছিলাম, এটা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কে ভেবেছিল সেটা।

কাউন্টারে গিয়ে পাসপোর্ট আর অনলাইন টিকেট দিলাম, আমাকে বলল আমেরিকার কোথায় যাব সেই ঠিকানা লিখতে, আমি থাকব দাদার বাসায়, সেই ঠিকানা আমার ঠিক মনে নেই। যেখানে কনফারেন্স হবে সেখানকার শুধু জায়গার নাম জানি, পুরো ঠিকানাটা জানা নাই। দাদার বাসার ঠিকানাটা যতটুকু মনে ছিল লিখে দিলাম, কিছুক্ষণ পরে কম্পিঊটারে কি কি সব টাইপ করে বলল "সিস্টেম এরর"। বলল তার কিছু করার নাই, আমার টিকেট সে দিতে পারবে না, আমি ভয় পেলাম কিন্তু ঘাবড়ালাম না, শান্ত ভাবে ধীরে ধীরে ইংরেজিতে বললাম আমার কাছে অনলাইনে কাটা টিকেট আছে, আর আমাকে আমেরিকাতে আমার ভাই রিসিভ করবে। আমার কাছে তার ঠিকানা নাই। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ঢাকা থেকে চায়না আসার যাত্রী কপিটা আছে কিনা। আমি সাথে সাথে বের করে দিলাম, ওই যাত্রী কপির কোড দিয়ে সার্চ করল, তখন টিকেট শো করল সিস্টেমে। আমি হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। কারণ চাইনিজ গুলোকে ইংরেজি বললে কিছুই বুঝেনা প্রায়। এভাবে এখানে বিপদে পড়লে কিভাবে কি করব সেটা ভেবেই অস্থির ছিলাম ভিতরে ভিতরে।


ছবিঃ চায়ানা ইমিগ্রেশন

আমার সাথে আরও অনেকেই হোটেলের যাত্রী। আমাদেরকে একটা জায়গায় অপেক্ষা করতে বলল। দুই একজনের সাথে কথা হল, কে কোন দেশের কোথায় যাচ্ছে এইসব। একজন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি বাংলাদেশের কিনা, বললাম হ্যাঁ , সে বলল সেও বাংলাদেশী এখন অস্ট্রেলিয়া থাকে, চায়না হয়ে দেশে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের বাইরে বাংলাদেশী কাউকে পেলে আত্মীয় হয়ে যায় মুহূর্তেই । একসাথেই ইমিগ্রেশন পার হলাম, এয়ারপোর্ট থেকে শহরের ভেতরে গিয়ে হোটেলে থাকতে হবে বিধায় ট্রানজিট ভিসা দিল। একজন গাইড আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছিল হোটেলে যাওয়ার গাড়িতে উঠিয়ে দিতে। নাম পরিচয় পর্ব শেষে ভাই জিজ্ঞেস করল আমি কি করি, কোথায় পড়াশোনা করেছি, বললাম বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেছি। সাথে সাথে সে বলল, নাইচ টু মিট ইউ, আমিও বুয়েট থেকে পাস করেছি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। পরে জানতে পারলাম সে সুকমল দার ক্লাসমেট, এক সেকশনেই ছিল । দাদার সাথে যোগাযোগ আছে এখনও। ভাইকে পেয়ে খুবই ভালো লাগল, অন্তত একজন মানুষকে পাওয়া গেল যার উপর ভরসা করা যায়।


ছবিঃ গুয়াংজু বিমানবন্দর

হোটেলে গিয়ে চেক-ইন করে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করলাম, ডিনার শেষে বাইরে বের হলাম একটু ঘুরে দেখতে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে খাবার দোকান, বেশিরভাগ শূকরের মাংস চলে ওখানে। ছোট ছোট দোকানেও মদ পাওয়া যায়, কোন বাধা নিষেধ নেই। আমরা এক দোকানে ঢুকলাম, দোকানদার বেশ খাতিরের সাথে কথা বলল। ভাই সিগারেট খায়, সে সিগারেট কিনল, আমিও বললাম আমিও কিনি এক প্যাকেট দেশে গিয়ে বন্ধুদের গিফট করব। কোনটা কিনব সেটা নিয়ে একটু দোনোমনা করছিলাম দেখে দোকানদার একটা সিগারেট দিয়ে বলল এইটা খেয়ে দেখো, ভালো লাগবে, এইটা নাও, না খেয়েও ওইটাই নিলাম। আরেক দোকানে গিয়ে চাইনিজ বাদাম কিনলাম। চাইনিজদের নিয়ে একটা ধারনা ছিল যে ওরা হয়ত ফ্রেন্ডলি না, কিন্তু দেখলাম সবাই খুব সাহায্য করার চেষ্টা করে, ইংরেজী যতটুকু বোঝে ওইটুকু দিয়েই সাধ্যমত করে। রাতে ঘুমিয়ে এয়ারপোর্টে চলে গেলাম সকাল সকাল, গাড়ি হোটেল গেটে ছিল। তারিক ভাই আগেই চলে গেছে, ওনার ঢাকা যাওয়ার ফ্লাইট আরও আগে ছিল। সকালে আর দেখা হয়নি ভাইয়ের সাথে। এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পার হয়ে চেপে বসলাম সান ফ্রান্সিসকোগামী বিমানে। ঘুম, খাওয়া আর মুভি দেখতে দেখতে প্রায় ১৪ ঘন্টার জার্নি শেষ করলাম, সান ফ্রান্সিসকো তে নামার আগে আগে সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং আর আবহাওয়া দেখে মুগ্ধ হলাম, এই সেই আমেরিকা, অবশেষে পা রাখতে যাচ্ছি আমেরিকার মাটিতে।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×