মানুষের জীবন বাঁচাতে, সুস্থ করে তুলতে যে মেয়েটি ডাক্তার হলো, তাকে ডাক্তারি করতে দেয়া হলোনা। নিতে দেয়া হলোনা চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি। স্বপ্নগুলো তার ছড়িয়ে গেলো লাশকাটা ঘরে।
ডাক্তার মেহজাবিন ও তার স্বামীর এই ছবিটা যশোর থেকে পাঠিয়েছেন আমার খুব কাছের একজন সংবাদকর্মী। ছবিটার দিকে যতবার তাকিয়েছি, ততবারই মনে হয়েছে হাস্যজ্বল ভঙ্গিমায় থাকা ছেলেটির চোঁখের মধ্যে কী পরিমান নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে আছে, তা প্রতিটি মানুষের জানা উচিৎ। দেশের প্রতিটি কর্ণার থেকে সোচ্চার হয়ে ওঠা উচিৎ সর্বস্তরের মানুষের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটাই দাবি তোলা উচিৎ, এই হত্যা মামলাটির তদন্ত যেন প্রভাবমুক্ত হয়। কেননা নিহতের শ্বশুর খান টিপু সুলতান একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি। শুরু থেকেই তিনি বলে আসছেন তার বৌমা আত্নহত্যা করেছে। অথচ নিহতের সারা শরীরে রয়েছে আঘাতের চিন্হ। গলায় আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। কেউ গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করলে স্বাভাবিক ভাবে গালের ভেতর থেকে জিব বেরিয়ে আসে। ডা মেহজাবিনের তা হয়নি। বরং শরির জুড়ে আছে ফোলা জখমের অজস্র দাগ। এটি যে হত্যাকান্ড তা নিয়ে নূন্যতম সন্দেহ নেই নিহতের পরিবারের।
ডাক্তার মেহজাবিনের স্বামী এখন কারাগারে। স্ত্রী হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি হিসাবে তাকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু এই হত্যাকান্ডের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যশোর মনিরামপুরের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান এখনও গ্রেফতার হননি। তবে তিনি গ্রেফতার হতে পারেন বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে একটি অনলাইন পত্রিকা। এদিকে অপর একটি অনলাইন পত্রিকা থেকে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে স্বস্ত্রীক পালালেন টিপু । তবে ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার স্ত্রী ডা. জেসমিন আরা আত্নগোপনে চলে যান।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত মেহজাবিনের একজন মামা জানালেন, "আমার ডাক্তার ভাগ্নিকে ওরা স্রেফ বাড়ির গৃহপরিচারিকা বানিয়ে রেখেছিল। ১২ সালে বিয়ে হলেও দাম্পত্য জীবনে চরম অশান্তিতে ছিল মেয়েটি। সবকিছুই জানতাম। কিন্তু ওরা খুন করে দেবে, এতটা খারাপ চিন্তা করিনি কখনও।" তিনি আরও বলেন, "তাকে বাড়ির বাইরে পর্যন্ত যেতে দেয়া হতোনা।" কথা বলার সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "আপনি লাশ দেখলে বুঝতে পারতেন, কি পরিমাণ যন্ত্রণা দিয়ে তারা আমার ভাগ্নির মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
ইতিমধ্যে নিহতের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করেছেন খান টিপু সুলতান। ধানমন্ডি থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর অভিযুক্ত স্বামী নিহতের পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বড্ডোজোর এক সপ্তাহ! তারপর জামিনে বেরিয়ে এসে দেখবো কার কত ক্ষমতা। এদিকে প্রথম আলো পত্রিকায় "আব্বু আমাকে নিয়ে যাও নইলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে" শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে পরিস্কার বলা হয়েছে, তাকে যে মেরে ফেলা হবে, তা টের পেয়ে তার বাবাকে জানিয়েছিলেন ডা. মাহজাবীন।
খান টিপু সুলতান নি:সন্দেহে ক্ষমতাধর। তাকে আইনের আওতায় আনতে পারা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এই হত্যা মামলায় তাকে আটক করতে পারার মত সৎ সাহস নেই পুলিশের। তবে আদালত তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করলে পুলিশের জন্য সহজ হবে কাজটা। কিন্তু ডা. মেহজাবিনের পরিবার আশঙ্কা করছে, ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার পরও গ্রেফতারের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে সময়ক্ষেপন করতে পারে পুলিশ।
খান টিপু সুলতান যতবড়ই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোকনা কেনো, হত্যার ঘটনায় তার সর্ম্পৃক্ততা প্রমান হলে অবশ্যই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নিহতের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের দাবি, প্রভাবমুক্ত হোক মামলার তদন্ত। অন্তত কোন খুনি পরিবারের পাশে যেন না দাড়ায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল।