সম্ভবত তখন রাত প্রায় ১টা বাজে। ফেবুতে ঢুকে দেখি আলী ভাই উনার একটা স্ট্যাটাসে আমাকে ট্যাগ করেছেন। স্ট্যাটাসে লেখা আছে সিলেটে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলার জন্য রক্ত লাগবে। স্ট্যাটাসে দেয়া রোগীর ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারে তখনই কল দিলাম। কেউ রিসিভ করলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সেই নাম্বার থেকে কল আসছিল। আবার কল দিলাম। আর আবারো কেউ রিসিভ করলো না! কিছু সময় পর সেই নাম্বার থেকে কল !
আমিঃ হ্যালো।
-আপনি কল দিয়েছিলেন ভাই ?
-হ্যাঁ।আপনি কি ক্লিনিক থেকে বলছেন?
-হ্যাঁ।
- আপনাদের কি রক্ত লাগবে?
- এখন লাগবে না। ম্যানেজ হয়েছে। তারপরো দিলে ভালো হত ভাই!
-ম্যানেজ যেহেতু হয়েছে তাহলে আরো রক্ত দিয়ে কি করবেন? আপনি রক্ত জমান নাকি?
-না, যদি আরো লাগে....
- আরও লাগলে আমাকে কল দিবেন। আমি এসে দিয়ে যাব। ঠিক আছে?
-জ্বি, আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।
-আদাব।
ভার্সিটিতে যাওয়ার পথেই কথা হচ্ছিল লোকটার সাথে। এরপর চলে আসলাম ভার্সিটিতে। ক্লাস শেষ করলাম। ক্লাস শেষ হওয়ার একটু পরেই শুরু হলো আমাদের রোটার্যাক্ট ক্লাবের বোর্ড মিটিং। উল্লেখ্য, ভার্সিটিতে এটা আমাদের ক্লাব প্রেসিডেন্ট তানভীর ভাইয়ের শেষ মিটিং! ঠিক সে সময়েই ক্লিনিক থেকে আবার কল আসল। কলদাতা বললেন শীঘ্রই নাকি একব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। হায়! এখন আমি কি করি? একদিকে বোর্ড মিটিং, আরেকদিকে রক্ত! এমতাবস্থায় কে করবে আমায় মুক্ত?
যাহোক, শেষমেষ মিটিং থেকে বিদায় নিয়ে বিদ্যুৎ বেগে ক্লিনিকে গেলাম। এরপর রক্ত দিলাম। হ্যাঁ, যত সহজে বললাম, ঠিক তত সহজেই! মাত্র ৫মিনিটেই আমার শরীর থেকে ওরা একব্যাগ রক্ত নিয়ে গেল! কিভাবে সম্ভব? এইতো সুই, সিরিঞ্জ আর ব্যাগের মাধ্যমেই সম্ভব। আর এই সসবকিছুই ওরা ব্যাবস্থা করে দিবে। আপনাকে কিছুই করতে হবেনা। তার মানে শরীর থেকে রক্ত নেয়া খুবই সহজ। আর দেয়াটা বুঝি খুব কঠিন? না, মোটেই না! আপনি সহজে না দিলে তো আর ওরা সহজে নিতে পারবে না । তাই রক্ত দেয়া-নেয়া দুইটাই সহজ (প্রমাণিত!) হাহাহা
এরপর, ক্লিনিক কতৃপক্ষ ১গ্লাস পানি আর জুস এনে দিল। গ্রহণ করলাম। কিছু সময় পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম। বিদায় দেয়ার জন্য আমার সাথে এলো রোগীর ছোট ভাই । রেস্টুরেন্টে আপ্যায়ন করানোর জন্য সে আমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করল। এই টানাটানিতে পড়ে আমার তো কুরবানীর গরুর মত অবস্থা! কুরবানীর গরুরা হেরে যায়। আর এখানে আমি জিতে গেলাম। আমি ওর দেয়া আপ্যায়ন প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলাম!
কারণ, আমি চাইনি এই দানের কোন বিনিময় হোক। এই দান থাকুক না স্বার্থের উর্ধ্বে! অন্ততপক্ষে সময়ে -অসময়ে এই ভেবে অনাবিল আনন্দ পাব যে, আমি একজনের নিঃস্বার্থ উপকার করেছিলাম!