পৃথিবীতে যুগে যুগে সাধক পন্ডিৎ ব্যক্তিরা এসেছেন মানুষের কল্যানে,সমাজের কল্যানে। তাঁরা কখনও নিজেদেও কথা ভাবেননি। ভেবেছেন মানবজাতির কথা। মানুষের মুক্তি খুঁজেছেন,দেখিয়েছেন আলোর পথ। লালনের গান দেহকেন্দ্রীক। গ্রামের মানুষেরা এই গানকে দেহতত্ব বলে থাকে। অর্থাৎ লালন বিশ্বাস করেন এই মানব দেহের মধ্যেই সব আছে। এই দেহের মধ্যেই ভাবের gvbyl,g‡bi gvbyl, AwPb cvwL evm K‡i| jvjb gvbe‡`n‡K KLbI ÔNiÕ KLbI ÔLuvPvÕ Avevi KLbI ÔAvikxbMiÕ bv‡g †W‡K‡Qb|G wel‡q Zuvi Mv‡b D‡jL i‡q‡QÑ
আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে
তােও জনম-ভর একদিন দেখলাম নারে...
...না জেনে ঘরের খবর তাকাও কেন আসমানে
খুঁজলে আপন ঘরখানা,তুমি পাবে সকল ঠিকানা।
...আমার ঘরের চাবি পরের হাতে...
লালন মানবদেহের মাঝেই ধর্মকে খুঁজেছেন এইভাবে-
আছে আদি মক্কা এই মানবদেহে
দেখ্ নারে মন ভেয়ে
দেশ-দেশান্তর দৌঁড়ে এবার
মরিস কেন হাঁপিয়ে ॥
করে অতি আজম ভাক্কা
গঠেছে সাঁই মানুষ মক্কা
কুদরতি নূর দিয়ে।
ও তার চারদ্বােও চার নূরের ইমাম
মধ্যে সাঁই বসিয়ে ॥
আবার হিন্দু সমপ্রদায়ের উদ্দেশ্যে লালন বলেছেন এইভাবে-
উপাসনা নাই গো তার
দেহের সাধন সর্ব-সার
তীর্থ-ব্রত যার জন্য
এ দেহে তার সকল মিলে।
দেহ নিয়ে লালন আরও বলেছেন এই ভাবে-
ঘরের মধ্যে ঘরখানা
খুঁজে দেখ মন এই থানা
ঘরে কে বিরাজ করে ॥
আবার কখনও বলেছেন-
বাড়ির পাশে আরশিনগর
সেথা এক পড়শী বসত করে
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে ॥
বাউল সম্রাট লালন কোন ধর্মকে A¯^xKvi না করলেও প্রচলিত ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন। প্রচলিত আনুষ্ঠানিক ধর্মকেই তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। শাস্ত্রীয় ধর্মেও দেয়াল ভেঙ্গে তিনি খুঁজে পান মানব ধর্মেও এক বিশাল শষ্যক্ষেত্র। সেখানে মানব জাতি এক এবং অভিন্ন। লালন প্রচলিত হিন্দু ধর্মেও যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছেন। তাঁর অন্তরের লালনকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছে সেদিনের সেই ধর্মপূজারীরা। লালন নিজেকে দিয়েই উপলব্ধি করেছেন ধর্ম মানুষকে কিভাবে শোষণ করে,শাসন কেও এবং সমাজপতিরা কিভাবে নিজেদেও ¯^v‡_© ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তিনি এই গন্ডি পেরিয়ে ধর্মপূজারীদের মনগড়া ফতোয়া থেকে নিপড়িত মানবজাতির মুক্তির জন্যই মানবতার পথ খুঁজে বের করেন। যেখানে শোষিত মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায়। ধর্ম হাতিয়ার নয় ধর্ম হবে মানবমুক্তির পথ। মুখোশধারী ধার্মীক,গতানুগতিক শাস্ত্রীয় ধর্মের রীতিনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উদার,অসামপ্রদায়ীক,কল্যানমূখী ভাবনা চিন্তা ভাববাদী গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। তিনি এক নির্ভৃত পল্লীতে বসে সমাজ সংস্কারে নিজেকে জড়িয়েছিলেন অত্যান্ত শক্তভাবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ হয়েছে। লালনও এদেশের পথে পথে যুদ্ধ করেছেন । তবে সে যুদ্ধ অস্ত্র হাতে নয় একতারা হাতে। সে যুদ্ধ কোন রাজ্য জয়ের নয়, সে যুদ্ধ মানুষ হত্যার নয়। সে যুদ্ধ মানুষের ভেতরের মানুষকে বাঁচানোর-জাগানোর যুদ্ধ। অচেতন মানুষের চেতনা ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। সমাজ-সভ্যতা থেকে বর্বরতা,নির্যাতন চিরতেও বন্ধ করতে লালন আজীবন যুদ্ধ করেছেন। লালনের যখন জন্ম হয় তার মাত্র সতের বছর আগে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন হয়। হারিয়ে যায় বাংলার ¯^vaxbZv| পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী হয় ভারতবর্ষ।দেশে শুরু হয় বৃটিশ বেনিয়াদেও জুলুম অত্যাচার নির্যাতন। সে সময় ভূমি ব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটে। শুরু হয় নতুন সামন্ত শ্রেনীর। অবশ্য লালনের সময়েই ইংরেজ শাসকদেও অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুরু হয় তিতুমীরের সংগ্রাম,সিপাহী বিদ্রোহ,ওহাবি-ফারায়জী আন্দোলন,নীল বিদ্রোহসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ। হিন্দু মেলা,জাতীয় কংগ্রেস গঠনের মাধ্যমে গণজাগরনের কাজ শুরু হয়। রামমোহনের ব্রাম্মধর্ম প্রবর্তন, বিদ্যাসাগরের সংস্কার কার্যক্রমও শুরু হয় এই সময়ে। কোলকাতা কেন্দ্রীক ‘বাবু কালচারের’ বাইেও প্রত্যান্ত গ্রামের এক জঙ্গলে বসে একতারার সুেও বাউল গানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন লালন। লালনের সে গান গ্রামের মেঠো পথ ছাড়িয়ে কোলকাতা শহেও পৌঁছেনি। তাছাড়া সে সময় হাই সোসাটির বাবুরা লালনের মত একজন মূর্খ্য অশিক্ষিত মানুষের কথা কেনই বা মনে করবেন? তবে মৃত্যুকালে লালন দশ হাজারের মত শিষ্য-ভক্ত রেখে গেলেও কালের বিবর্তনে আজ সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর লক্ষ কোটি অনুসারী,ভক্ত যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। মানবতাবাদ আজকের আধুনিক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মতবাদ যা লালন যুগে যুুগে ধারন এবং বাহন করেছেন। গানের মাধ্যমে সব মানুষের কাছে তাঁর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন । লালন ধর্ম শাস্ত্রেও বাইেও মানুষের মুক্তি এবং শ্রষ্টা লাভের পথ খুঁজেছেন। তবে তা ছিল জাত-ক্থল-বংশ অহংকারকে দূেও সরিয়ে ধর্মকে মনের মধ্যে সহজ সরল ভাবে চিনতে চেষ্টা করেছেন। লালন মনে করেছেন ধর্ম হলো তাই যা ধারন করা হয়। বাউল মন যা ধারন কেও তাই- ই বাউলের ধর্ম। মানব আত্মার মুক্তির জন্য তাঁদেও জীবনভর যে সংগ্রাম তা কখনই সহজ ছিল না। হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মেরই যারা সমাজকে শাসন করেছে,সমাজের মানুষকে ধর্মেও চাবুকে নিজেদের ¯^v‡_© আঘাত করেছে তারা সবাই লালনকে নাড়ার ফকির,অশিক্ষিত,মূর্র্খ্য বলে অপবাদ দিয়েছে। সেই সাথে অপপ্রচার করেছে তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। খেটে খাওয়া পিছিয়ে পড়া মানুষেরা লালনের গান শুনে তাঁদেও জীবনের সন্ধান পেয়েছে। খুঁজে পেয়েছে আত্মার শান্তি।মধ্যযুগের সমাজপতিদের রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে তারা দলে দলে যোগ দেয় লালনের আখড়ায়। তাদেও প্রাণ ছুঁয়ে যায় এক তারার সুরে। দেশপ্রেম,মানবপ্রেম কি নেই লালনের গানে। হৃদয়ের তানপুরা বেজে উঠে বাউল গানে। মন ভিজে যায় লালন রসে। এদেশে যুগে যুগে গান এসেছে মানুষের বিনোদনের খোরাক হয়ে। কিন্তু লালনের গান এসেছে জ্ঞানের আলো ছড়াতে। মানুষের অন্তও বিকশিত করতে। লালনের গান মানুষকে করেছে মানবতাবাদী,হৃদয়কে করেছে আকাশের মত উদার আর সাগরের মত গভীর। মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখিয়েছে। মানুষকে সেবা করলে শ্রষ্টাকে সেবা করা হয়। এ প্রসঙ্গে লালন তাঁর গানে বলেছেন-
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি
সষ্টার সৃষ্টিকে ভালবাসলে পক্ষান্তরে স্রষ্টাকেই ভালবাসা হয় এ কথা প্রথম লালন সাঁই তাঁর গানের মধ্য দিয়েই বলে গেছেন। লালনের বাউল জীবনের পেছনে রয়েছে ধর্ম জিজ্ঞাসা,আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিকাশের পাশাপাশি সেই অন্ধকার যুগের ধর্মীয় গোঁড়ামী, ধর্ম ব্যবসায়ীদের ‡¯^”QvPvix আচরন ও জাতিভেদেও মত পীড়াদায়ক ও বেদনা বিধূর ঘটনার অভিজ্ঞতা। শাস্ত্রমতে ধর্ম কর্ম করতে পারেনা অথচ বুকের মধ্যে ঈশ্বরকে লালন কেও এমন অবহেলিত মানবজাতির কথায় লালন তাঁর গানের মধ্যে বলেছেন।
লালন যৌবনের শুরুতে এক শ্রেনীর সুবিধাবাদী মানুষের কাছে দারুন লাঞ্চনার শিকার হয়ে সমাজচ্যুত হলেও পরবর্তি সময়ে তিনি মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন প্রচুর।তিনি কখনও মানুষকে অবজ্ঞা কিংবা অবহেলা করেননি। মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি তাঁর এই টান তাঁকে ঐশ্বরিক টানের কাছে নিয়ে গেছে। যার কারনে তিনিু মানুষের মাঝেই ঈশ্বর খুঁজেছেন। যে সময় জাতিভেদ এবং ছুঁৎ মার্গ সমাজে প্রবল আকার ধারন করেছে সে সময় লালন সংগ্রাম বহু সংগ্রাম কেও এই শক্ত দেয়াল ভেঙ্গেছেন। সমাজবিজ্ঞানীরা লালনকে বাংলার নবজাগরনের পথিকৃত রামমোহনের সাথে তুলনা করেছেন।‘বাংলার নবজাগরণে রামমোহনের যে গুরুত্ব বাংলার লোকমানসের দেয়ালী উসবে লালনেরও সেই গুরুত্ব।দুই যমজ সন্তানের মতো তাঁদের দু’জনের জন্ম। দু’বছর আগে পরে । ইতিহাস-জননীর পক্ষে দুই বছর যেন দুই মিনিট। তবে এক সঙ্গে এলেও তাঁরা এক সঙ্গে যাননি। লালনের পরমায়ু যেন রাম মোহন ও বঙ্কিমচন্দ্রের জোড়া পরমায়ু। লোক সংস্কৃতিতে একক ব্যক্তিত্বেও এমন বিরাট উপস্থিতি আমাদেও অভিভূত করে।
বাউল সম্রাট লালন সাঁই কারও বিপথ দেখে বসে থাকতে পারতেন না । তিনি একদিন খবর পেলেন কাঙাল হরিনাথের উপর হামলার জন্য জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী ধেয়ে আসছে। এই খবর পেয়ে লালন তাঁর শিষ্যদেও নিয়ে পাল্টা লাঠি হাতে জমিদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কাঙাল হরিনাথ ছিলেন সেই সময় কুমারখালী থেকে প্রকাশিত “গ্রামবার্ত্তা পত্রিকা’র” সম্পাদক। তাঁর অপরাধ ছিল তিনি জমিদারদেও অত্যাচার নির্যাতন আর জুলুমের কথা ঐ পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল। এ থেকে প্রমান হয় সাধক লালন শোষিতের পক্ষে এবং শোষক শ্রেনীর বিরুদ্ধে ছিলেন। যে হাতে তিনি একতারা নিয়ে মানবতার গান গেয়ে চলেছেন প্রয়োজনে সেই হাতে লাঠি তুলতে কুন্ঠাবোধ করেননি। কারন সৎ পথে,সৎ কাজে তিনি ছিলেন অবিচল । যা তাঁর গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন-
সত্য বল সুপথে চল
ওরে আমার মন॥
মরমী সাধক লালন শাহ্’র সাথে gd¯^j থেকে প্রকাশিত এদেশে বাংলা সংবাদপত্রের পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। কাঙালের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে উঠে বিষাদসিন্ধুর লেখক কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের সাথে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে বলে অধিকাংশ গবেষক লিখেছেন।
সাধক পুরুষ লালন শাহ্ সাধু দরবেশ হওয়া সত্বেও সংসার বিবাগী হননি। সংসারের প্রতি তার দারুন টান ছিল। এক মুসলিম মহিলা বয়ানকারীনির সাথে তিনি নিকাহ করেন এবং ভক্তদেও দেওয়া জায়গায় পানের বরজ করেন সংসার চালানোর জন্য। এছাড়াও তিনি মৃত্যুর আগে তাঁর পালিত কন্যা পিয়ারীর সাথে ভোলাই শাহ্’র বিবাহ সম্পন্ন করান। এ থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায় তিনি কন্যার বিয়ে,সংসারের জন্য পানের বরজ এসবই সংসারের প্রতি তাঁর ভালবাসার নিদর্শণ মাত্র।
১৮৯০সালের ১৭ অক্টোবর (১২৯৭ সালের ১ কার্তিক)শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় ১১৬ বছর বয়সে বাঙলা আর বাঙালীর হৃদয়ের মানুষ বাউল সম্রাট মরমী সাধক লালন শাহ্ ইহকাল ত্যাগ করেন। যেদিন ভোেও তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ঐ দিনও সারারাত ধেও আখড়ায় বাউল গান নিয়ে শিষ্য ভক্তদেও সময় দিয়েছেন। ভোর ৫টায় তিনি সকল ভক্তদেও উদ্দেশ্যে বলেছিলেন “আমি চলিলাম”। এই কথার আধা ঘন্টা পর তিনি সকলকে কাঁদিয়ে সত্যি সত্যিই একেবােও চলে যান।
আজ থেকে ২৩৫ বছর আগে লালন কুষ্টিয়ার অজো পাড়া গাঁয়ের এক জঙ্গলে বসে যে গান সৃষ্টি করেছেন তা ছিল আজকের আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠার। যেখানে নারী-পুরুষ,জাত-পাত,উঁচু-নীচু কোন ভেদাভেদ থাকবে না। থাকবেনা ধর্মীয় সংঘাত-সংঘর্ষ। মানুষই হবে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় অন্য কিছু নয়। থাকবেনা ছুঁতের ভয়। থাকবে না সমাজপতিদের শাসনের নামে শোষণ । এক আকাশের নীচে মানুষ সবাই সমান। কারও‘ ব্যক্তি ¯^vaxbZvq কেউ বাঁধা দেবে না। যা কিছু ভাল তা নিয়েই হবে এই সমাজ। সেই মধ্যযুগে বসে গানের হাতুড়ি ছেনি দিয়ে ঘুনে ধরা সমাজকে একটু একটু কেও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে গড়েছেন আজকের সভ্যতা। তিনি জানতেন তাঁর মানবদরদী গান একদিন ছেঁউড়িয়ার আকাশ পাড়ি দিয়ে তা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বেও সবখানে,সবমুখে উচ্চারিত হবে চরম ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে । আর সেদিনই মানুষ হবে সত্যিকারের সোনার মানুষ। লালনের দর্শণ আজ সমাজের সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। মানুষের অন্তরে বেজে উঠছে একতারা। লালনের গান আজকের যান্ত্রীক পৃথিবীর মানুষের মন নরম কেও দেয়।মানুষের ভেতরের মানুষ অনুশোচনায় ডুকেও কেঁদে উঠে। মানুষের প্রতি মানুষের দরদ,শ্রদ্ধা,ভালবাসা বাড়িয়ে দেয় । হিংসা-বিদ্বেষ,হানাহানী থেকে বিবেককে দূেও সরিয়ে রাখে । লালনের গানপ্রিয় মানুষের মন পলি মাটির মত উর্বও থাকে। চেতনার বীজ বেড়ে উঠে ধীেও ধীেও । ধৈর্য্য-সহ্য শক্তি বাড়িয়ে দেয়। লোভ-লালসা থেকে দূেও রাখে । এক কথায় বলা যায় মানুষের প্রতি মানুষের টান,মাটির প্রতি ভালবাসা, মহান চিন্তা-চেতনার বিকাশ যা অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখায় সেটিই হলো লালন দর্শণ।
বাউল গানের ইতিহাস আরও পুরানো হলেও মূলত: লালনের সময় থেকে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়। লিখিতভাবে সংরক্ষিত হয়। কখনও বা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে আবার কখনও বা সংঘবদ্ধভাবে বাউল গান মানুষের দ্বারে দ্বােও পৌঁছে দিয়ে তাঁদেও দলে দলে ভক্ত ও শিষ্য তৈরীর কাজটি কেবল ফকীর লালন সাঁই-ই কেও গেছেন। তাঁর মননে মানসে মানব মুক্তির গান। সময়ের সাথে সাথে বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকীর লালন শাহ্ আজ বিশ্বদরবােও দাপটের সাথে সমাদৃত। গ্রামের ¯^wkw¶Z অবহেলিত লালন আজ আমাদেও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার একতারার সুর তরঙ্গ। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাববাদী দরবেশ। তাঁর একতারার সুর আজ জাগায় বাংলাদেশ। দেশে বিদেশে লালনের দর্শন নিয়ে চলছে গবেষণার পর গবেষণা। লালনের উৎস সন্ধানে এখনও বাউল গেয়ে চলে-
লালন তোমার আরশীনগর
আর কতদূর...আর কতদূর...
সম্পাদনা ও সমন্বয় : সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর
তথ্য ও গবেষনা : রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব