দুঃখরা কেন এভাবে মিছিল করে আসে
খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনের স্পন্দন থামিয়ে দিয়ে ?
দুঃখরা কেন বার বার ওদেরকেই ভালোবাসে
ওদের হাসি-কান্নায় ভরপুর জীবনকে স্তব্ধতায় ঢেকে দিয়ে ?
ওদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো সুখের ঠাস বুননে
জড়ো হচ্ছিল কর্মমুখর সময়ের হাত ধরে।
ওরা ভালো বেসেছিল স্বজনকে
ভালোবাসা পেয়েছিল প্রিয়জনের কাছ থেকে
ওরা একজনের স্বপ্ন দিয়ে আরেক জনের
সুখের পথ তৈরী করতে চেয়েছিল।
ওদের নিজেদের ঘামে গড়া স্বপ্নভূমে
প্রতিদিন ভোর নামত নতুন আশার বারতা নিয়ে।
প্রতিদিন একটি নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে
ওরা ছুটে কর্মব্যস্ত সময়েল ঘন্টাধ্বনি অনুসরণ করে।
চোখে স্বপ্ন, মুখে স্বপ্ন, বুকে স্বপ্নের মাতামাতি
দিনশেষের আলোয় প্রিয়জনের বুকে খোঁজে নিত সুখের ঠিকানাখানি।
সেই তো একই ভোর এলো চব্বিশে এপ্রিলে
ওরাও বেরিয়ে গিয়েছিল নিত্য দিনের রুটিনে।
কিন্তু ওদের হাতের ছোঁয়ায সময়ের চাকা ঘুরতে না ঘুরতেই
জীবনের চাকা ওদের থেমে গেল রুদ্ধ কপাটে।
চারপাশে ছড়ানো সুখের স্বপ্নগুলো হঠাৎ নেমে আসা
কি এক প্রচন্ড নিনাদে
পথ হারিয়ে ফেলল সেখানেই।
স্নেহ-ভালোবাসার সুতোয় গাঁথা
উচ্ছাস মুখর জীবনের ছবিগুলো
চিরদিনের মতো স্তব্ধ হয়ে যায় মুহূর্তেই।
একটি স্নিগ্ধ সকাল ভয়ংকর বিভীষিকা হয়ে
নেমে এলো ওদের জীবনে।
এরপর শুধু লাশের মিছিলে যোগ হওয়া
নতুন আর একটি লাশ গুণার পালা।
ইট-বালির আস্তরণ আর কংক্রীটের তলায় চাপা পড়া
মানুষের বেঁচে থাকার করুণ আর্তি।
স্বজন হারাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে সাভারের বাতাস।
উদ্ধারকর্মীদের প্রাণপণ চেষ্টা
মৃত্যুর মিছিলকে আর বাড়তে না দেয়া।
তাদের স্বপ্ন-সাধনা জীবনের মায়া ত্যাগ করা চেষ্টায়
হয়তো জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসে একটি মানুষ।
কিন্তু বেশীর ভাগই প্রাণহীন নিথর দেহ।
এরপরও রয়ে যাচ্ছে আটকে পড়া আরও শত শত মানুষ।
কি হবে ওদের ?
নিয়তির কেন এমন নিষ্ঠুরতা ?
কিন্তু সত্যিই কি তাই ?
রানা প্লাজার এই ভয়াবহতা শুধু কি নিয়তির খেলা ?
মানুষের বিবেক বলে, 'না'।
বাস্তবতার নিরিখে সেখানে উঠে আসে
অর্থলোভী কিছু পিশাচের বিকৃত মুখচ্ছবি।
খেটে খাওয়া মানুষগুলোর প্রাণের বিনিময়ে
ওরা ওদের স্বপ্নের সৌধ বানাতে চেয়েছিল।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওরাই দায়ী। ওরাই দায়ী।
ওদের এই অপরাধের কোন ক্ষমা হতে পারে না
অতীতের ক্ষমা পাওয়া অপরাধের ঘটনাকে
এক সূতোয় বেঁধে ওরা যেন আর
পার পেয়ে যেতে না পারে।
তাই শোকে স্তব্ধ হয়ে থাকার সময় এখন নয়।
এখন সময় এই নর ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী তোলার।
আমরা শাস্তি চাই,
বিচার চাই এই নর ঘাতকদের।
আমাদের শোকের স্তব্ধতার আড়ালে
এই নরঘাতকদের আড়াল করা চলবে না।
এক্ষুণি, এই মুহূর্তে আমরা ওদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বিচার চাই।