যতদূর মনে পড়ে 'গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়...' বলে একটা গান আছে। গানটা কোন এক আড্ডার ফাঁকে শোনার সময় কল্পনায় ভাবছিলাম গাঁজা ভর্তি একটা নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে যাচ্ছে! পাহাড়তলী নামে কোন একটা জায়গায় ভিড়াবে হয়তো!
যাইহোক, গাঁজা খাইয়েদের কিছু আমুদে লোক 'বাবার ভক্ত' বলে থাকে। আরাধ্য দেব শিবকে সম্ভবত এই 'বাবা' ধরা হয়। কিছু স্টাইলিশ পোলাপান আবার একে 'হুইট' না কি একটা বলে থাকে। হুইট মানে কি ঠিক জানা হয়নি এখনও!
প্রত্যক্ষ অবজার্ভেশন মতে,যেকোন সিগারেটের তামাক ফেলে দিয়ে গাঁজা পোরা হয়,তারপর অগ্নিসংযোগ করে যথারীতি সেবন করা হয়।অনেকে একে আদর করে 'পিনিক' বলে থাকে..! যদি গীটার বাজিয়ে 'চলে গেছো তাতে কি..' কিংবা 'বন্ধু আমার রসিয়া..' টাইপ গান গাওয়া যায় তাহলে পিনিক আরো জেঁকে ধরে বলে আমার ধারনা!
সাধারনত ছাদের কোনায়,বুনোঝাড়ে,খোলামাঠে কিংবা তাসের আড্ডায় এটা জমজমাট হয়।
দেখা যায় যে গন্জিকাসেবীরা ভিন্ন আইডিয়োলজিতে বিশ্বাস করে (যা মাঝে মাঝে পারসোনালি যে কাউকেও প্রভাবিত করতে পারে)! উদাহরনঃ 'কমলাকান্ত' চরিত্র।
'ধোঁয়ার টান' কথাটা একেবারে কাঁটায় কাঁটায় সত্য। গাঁজা প্রেমীরা অপরিচিত জায়গায় গেলেও তারা একটা সার্কেল তৈরি করে ফেলেই। এ যেন একটা ইউনিভার্সাল চেইন। শেয়ারিং এর মাধ্যমে এক অনন্য ভ্রাতৃত্ববোধ কাজ করে তাদের মধ্যে। শুধু ধোঁয়া শেয়ারই নয়,জীবনের ঘটিত ও ঘটমান হাসিকান্না তাঁরা নির্দ্বিধায় শেয়ার করে..
পিনিক শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটতে থাকে বলে গাঁজাপ্রেমীদের
বিশ্বাস। তখন তাদের মস্তিষ্কে স্বর্গ নরক খেলা করে। তারা পিচের রাস্তাকে স্রোতের নদী কিংবা নিরেট দেয়ালকে উন্মুক্ত পথ ভেবে ভুল করে! কলসকে গ্লাস অথবা বাবাকে দোস্ত ভেবে ভুল করাটাও অস্বাভাবিক নয়। সুধীজন একে জটিল মস্তিষ্কতত্ত্বের কোন পর্যায়ে ফেলবেন,সেটা আমার একটা কৌতুহল।
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। কোন এক রক্তদান ক্যাম্পের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আউলা ঝাউলা
এক লোক। যথারীতি স্বেচ্ছাসেবী ঘিরে ধরলো তাকে!
-ভাই! এক ব্যাগ রক্ত দিয়া যান।
-কি আর দিমু! রক্ত তো সব ধোঁয়ায় উড়ায়
দিছিরে..
কেউ একজন আমাকে উপদেশ দিয়েছিল,'কে কি করে,
কে কি খায়(!) এইটা নিয়ে তোমার মাথাব্যথা না হলেও চলবে! তুমি লাইনে থাকলেই আমার চলবে।'
আমি তাকে 'লাইন মানে কি' প্রশ্ন করার সাহস পাইনি.. কি দরকার আমার এত নাক গলানোর?