সারাবিশ্বেই এখন আইএস আলোচিত। ইসলামের দোহাই দিয়ে মুসলিম বিশ্বে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে ডালপালা বিস্তার করছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি একের পর এক বিদেশি নাগরিক হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে আইএস আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ঠিক একই সময়ে সিরিয়ায় আইএস নিধনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তায় আছে সাম্রাজ্যবাদের প্রধান শক্তি যুক্তরাষ্ট্র। কারণ সিরিয়ায় আইএস মূলত সেখানকার সরকার আসাদ বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রও আসাদকে উৎখাত করতে চায়। আবার আইএস সেখানে বিস্তার লাভ করলে বৈশ্বিক উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন প্রকল্পের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সহজেই সিরিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে আইএস দমনের নামে এবং ইরাক- আফগানিস্তানের মত সেখানেও আগ্রাসন চালানো যাবে। এই ভাবে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদিআরবসহ সাম্রাজ্যবাদের মিত্ররা পরোক্ষভাবে আইএসকে সমর্থন দিচ্ছে। অবশ্য যদি বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবেই আইএসকে মদদ দিচ্ছে তাহলে ভুল বলা হবে না। কারণ সিরিয়ায় অস্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে আইএসকে অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে মার্কিন কোম্পানিগুলো। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ব্যবসা অস্ত্র ব্যবসা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে নয়া আগ্রাসনের স্বপ্ন বিকশিত হচ্ছে। তাই রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারছে না এবং এটা নিয়ে তারা বিভ্রান্তিকর বক্তব্যও দিচ্ছে।
বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক হত্যার পেছনে আইএস রয়েছে এটা কতটা সত্য ?
গোয়েন্দা কর্মকর্তা রীটা কাৎজ এর বক্তব্য অনুযায়ী আইএস দায়ী।
আমাদের মন্ত্রীরা বলছেন, দেশে আইএস বলে কিছু নেই।
আমরা কোনটা বিশ্বাস করবো ? তার আগে কিছু ধারণা নিয়ে নিই।
রীটা কাৎজ মূলত মোসাদ-এর গুপ্তচর বা ইসরায়েলি গুপ্তচর। তার বাবাও একই পেশার ছিলেন। রীটার জন্ম ইরাকে। সেখানে তার বাবা গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে দেশের স্বার্থে আঘাত করতে থাকেন। সেখানে তার ফাঁসী হয়। রীটাও পরবর্তীতে ইসরায়েলে মোসাদের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেন। শুধু তাই নয় বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আরবি ভাষাও আয়ত্ত করেন তিনি। রীটাই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বব্যাপী নানা ঘটনার নির্ভরযোগ্য তথ্যদাতা।
সুতরাং রীটা ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আইএস এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করছে না তো ? কিংবা জামাতে ইসলামী, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, হরকতউল জিহাদ এরাই আবার আইএস নয় তো ? যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র আইএস নাম দিয়ে আগ্রাসনের পখ খুঁজছে। এটাও সত্য যে যুক্তরাষ্ট্র এদেশের জঙ্গি সংগঠনসমূহকে গোপনে অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। কারণ এখানে অস্থিতিশীল অবস্থা থাকলে লাভ তো তাদেরই। সেটা কেমন তা গত ২৯ সেপ্টেম্বর “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ” শিরোনামে বলার চেষ্টা করেছি।
এবার আসি আমাদের মন্ত্রীদের প্রসঙ্গে। তারা বলছেন দেশে আইএস এর অস্তিত্ব নেই। মন্ত্রীরা নিশ্চিত হলেন কীভাবে ? কীসের ভিত্তিতে তারা এটা বলছেন ? একসময় তো বলা হয়েছিল দেশে বাংলা ভাই বলে কিছু নেই, এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় নি। এখন কেউ আমাকেই বলতে পারেন, ভাই আপনিও তো বললেন এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারণা। হ্যা্, কিন্তু এটা তো ঠিক দেশে প্রতিনিয়ত ইসলামী মৌলবাদের চর্চা ও জঙ্গিগোষ্ঠি শক্তিশালী হচ্ছে। যেটা মন্ত্রীরা অস্বীকার করতে পারবেন না। যখন তারা ব্লগার হত্যার পর বিদেশিদেরও টার্গেট করছে তখন আইএস বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি আমরা। তখন জঙ্গিরা খোলস পাল্টানোর সুযোগ পাচ্ছে। এদেরই একটা অংশ আইএস নামে মাঠে নেমে পড়ছে। তাছাড়া দেশে আইএস মতাদর্শের গ্রুপ তো আছেই। যার ফলে দেখতে পাই পুলিশ আইএস এর প্রচার চালানো কর্মী গ্রেফতারও করেছে। এবার মন্ত্রীরা কী বলবেন ?
বস্তুত নব্বই দশকের পর থেকেই দেখা গেছে আমাদের মন্ত্রীরা নানা সময়ে অসংগতি মার্কা বক্তব্য দিয়েছেন। বিতর্কিত হয়েছেন। কৌতুকে পরিণত করেছেন নিজেকে। এর কারণ হল তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার যথেষ্ট অভাব। পাশাপাশি আরেকটি সমস্যা হল ইনফরমেশন গ্যাপ। যেকোন কথা বলার আগে সেটা নিয়ে একটু ভাবার দরকার এবং গঠনমুলক কথা বলা দরকার। কিন্তু তাদের সেই বোধটুকু নেই। তাই সহজেই তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়া মিডিয়ার সামনে অবান্তর কথা বলে ফেলেন। অথচ বাগাড়ম্বর না করে যেকোন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের মুরদ ওনাদের নেই।
যাহোক- মূল ব্যাপারটা হল দেশে আইএস সাংগঠনিকভাবে না থা্কলেও আইএস মতাদর্শের কর্মিরা রয়েছে। কারণ আইএস মানে কেবল ইরাক বা সিরিয়া থেকে আমদানিকৃত কেউ নয়, বরং এদেশেরই জঙ্গিরা। যারা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ পেয়ে বেড়ে উঠেছে। আর আজ তাদেরকেই আইএস এ রূপান্তর করে যুক্তরাষ্ট্র আঙ্গুল তুলছে।
ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র উগ্রবাদী ও আইএস দমনে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করতে প্রস্তাব দিয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের প্রশাসন, আমাদের ইন্টেলিজেন্স, আমাদের সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদের সঠিক বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক ব্লগার হত্যার সুরাহা করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রের এহেন কার্যকলাপে উগ্রবাদীরা উৎসাহ পেয়েছে। আমরা কি এখনও বুঝতে পারছি না আমাদের ভুলগুলো ? আমরা কি আঁচ করতে পারছি না দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে ?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৮