অগণিত ফ্যান ঘুরছে। হাজার হাজার মানুষ যাচ্ছে আসছে। সবগুলি নতুন মুখ। জামিল জীবনে কখনও একসঙ্গে এতোমুখ দেখেনি। সবাই ব্যস্ত। কেউ এক মিনিটও অপেক্ষা করছে না। জামিল একা ঘুরে ঘুরে দেখছে। কখনও দাঁড়িয়ে কখনও বসে। একটা পানির বােতল কিনল। একবারেই সমস্ত পানি গিলে ফেলল। বােতলটা ছুড়ে মারল। একজন টােকাই এসে সেটা ধরল আর জামিলের দিকে তাকাল। আরোক জন টােকাই এসে ওর হাত থেকে বােতলটা কেড়ে নিতে চাইল। জামিল তাকে একটু ধমক দিল। সে বােতলটা রেখে চলে গেল।
ঢাকা বিমান বন্দর রেল স্টেশনে জামিল আগে কােন দিন আসেনি। এখানে যে এতো মানুষ জামিল তা কােন দিন কল্পনাও করতে পারতো না। যদি না আজকের পরীক্ষাটা বিকেলে না হতো। জামিলের জীবনে কখনও বিকেলে চাকরির পরীক্ষা দেয়নি। এটাই প্রথম।
পরীক্ষা বিকেল তিনটায়। এখন সবেমাত্র একটা বাজে। জামিল হেটে হেটে উত্তর দিকে গেল। সামনে একটুখানি জায়গা আছে। জামিল ফিরল। আবার দক্ষিণে এলো। একটা ফ্যানের নিচে বসল। একটা মেয়ের দিকে তাকাল। বয়স অনেক কম। তাই বলে যে তাকানোর মত নয় তা না। শরীরের গড়ন অনেকটা ঝাউগাছের মত দুলে দুলে উ?ছে। জামিল আরো খানিক তার দিকে তাকাল। মেয়েটার চােখে চােখ পড়তে সে একটু হেসে দিল। জামিল মনে ভেসে এলো বহু পুরোতন একটা ঘটনা।
ভালোবাসা কয়েকভাবে হয়। মনে মনে, চােখে চােখে এমনকি স্পর্শে। ভালোবাসা সৌন্দর্য, গুণ এবং অনুভবের। কােন কােন ভালোবাসা শুরুতেই গুণে হয়। গুণের ভালোবাসা পরিচিত মানুষের সাথে হয়। চােখে চােখে হয় অপরিচিতদের সাখে। তবে দুটি অচেনা মনের ভালোবাসাই বেশি অনুভবের। সেদিনের ঘটনাটা ভােলার নয়।
জামিল ল্যাব এইডে অপেক্ষা করতে ছিল কখন তার বােন ভগ্নিপতি তার বোনের শ্বাশুড়িকে নিয়ে ল্যাব এইডে আসবে। অনেকক্ষণ পরে তারা এলো। লিফ্টে দােতলায় এলো। টিভির সামনে বসতে গিয়ে হঠাৎ নজর পড়ল একটা মেয়ের দিকে। জামিল তার দিকে তাকিয়েই থাকল। মেয়েটা একটু হাসল। হাসিটা যেন তার সমস্ত মুখখানা উচ্ছ্বাসে ভরে দিল। তার চােখে জামিলের চােখ আটকে গেল। জামিল যেন নীরব প্রাণি হয়ে গেল।
মেয়েটার চেহারাটা লােভনী। চােখ দুটো আরো আকর্ষণীয়। চুলগুলো এমন ভাবে গােছানো যে চােখের কাজল আরো ফুটে উঠছে।
জামিল পর পর পাঁচ দিন এলো ল্যাব এইডে। ল্যাব এইডের মালিক তাকে অপমান করে বের করে দিল। জামিলের চােখে সে দুটি চােখ যেন এ চােখে ভেসে উঠছে।
মেয়েটি সামনে দিয়ে চলে গেল। জামিল আবার উঠল। আরো অনেক সময় বাকি। আবার উত্তর দিকে হাঁটল। হাঁটতে হাঁটতে শেষ মাথায় এলো। এক মহিলা বসে আছে। জামিল তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চােখ থমকে গেল। একি কাণ্ড, কােন নাটকের শেষ দৃশ্য।
“আমি ফারজানা।”
জামিলের মুখে একটু হাসি ফুটল। ঠোঁট বড় হয়ে গেল দাঁত বের হলো না।
“মনে পড়ছে? সেই ল্যাব এইডে।”
জামিল দাঁড়িয়েই রইল। জামিল কখনও নামটি জানতে চায়নি। কি চেয়েছিল তাও মনে নেই। সেই লাজুক চােখ আজ কেনো নির্লজ হলো শুধু সেই কথা ভাবছিল। সেই মেয়েটি এসে বলল, “মা, বাবাকে কােথাও পেলাম না।
জামিলের বয়স এখন সাইত্রিশ। এমন একটা মেয়ে তারও থাকতে পারতো। নেই। বিয়েই হয়নি। প্রাইমারিতে চাকরি করে। এসেছিল উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পরীক্ষা দিতে। তাও হলো না। পরীক্ষার সময়টুকু রেল স্টেশানে কেটে গেল।
২৯ এপ্রিল ২০১৬ইং
মৈনারটেক, উত্তরখান, উত্তরা, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০১