বেড়ে উঠেছিলাম ঢাকার আলো বাতাসে। বোধ-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই ঢাকা ছিল আমার একান্ত আপন শহর। রাস্তার পাশে টং দোকানে উঠতি ছেলেদের ভিড়। ফুচকার গাড়ী। রিকশার টুং টাং শব্দ। ঝাল মুড়ি। রাস্তার মোড়ে ছোট্ট ঝুপড়িতে শীতের বিকেলে ধোঁয়া উঠা ভাপা পিঠা। কয়েক রকমের ঝাল ঝাল ভর্তার সাথে গরম চিতৈ পিঠা। এসবই ছিল একসময় দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে।
একদিন আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে প্রাণের শহর ছেড়ে অনেক অনেক দূরের অচেনা একটি শহরে চলে আসলাম। প্রথম তুষার দেখার আনন্দ অথবা মাইনাস ডিগ্রিতে তিন/ চারটা সোয়েটার মুড়িয়ে নেয়ার মাঝে আবিষ্কার করলাম ঢাকার রাজপথে ঝমঝম বৃষ্টিতে হুড খোলা রিকশায় দামাল হাওয়ায় ভিজে একাকার হওয়াতে সে কি ভীষণ আনন্দ থাকতো!
ঢাকা ছিল আমার প্রাণের শহর । কখনও এই শহর ছেড়ে দূরে থাকতে পারবো এই ব্যাপারটা ছিল খুব আবছা। ঢাকার ধুলোমাখা পথ। রাস্তার টং, ফুচকা, ট্রাফিক জ্যাম জীবনে এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে কখনো ভাবিনি এই অনুভূতিটা আবার কেমন! ঠিক যেন অনেকটা মায়ের আদরের মতন!
আটলান্টিকের এপারে অনেকটা বছর কেটে যাওয়ার পর সেই অনুভূতি একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসলেও প্রচণ্ড শীতে ভীষণ মনে পড়ে যায় আমার প্রাণের শহরটিকে।
ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। পাল্টে গেলো পরিচয়। এখন আমার কাছে চেনা শহর হলো যেখানে আমার সংসার, আমার পরিবার। আমার ব্যস্ত জীবন। তবুও প্রিয় শহরটিকে ঘিরে মনের গভীরে হুটহাট কতো ছবি, কতো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। টুকটাক স্মরণীয় হয়ে থাকা কেউকেউ মননে মগজে কড়া নাড়ে!
এখনো এতদূরে ব্যস্ততায়/ অবসরে ঢাকা শহরের মার্কেটে লাউড স্পিকারের শোনা কোন গান যখন কানে বাজে হৃদয়ের গহনে নীরবে নিভৃতে বয়ে চলা স্মৃতির গল্পগুলো কলকল শব্দ তুলে ছুটে বেড়ায় তুমুল বেগে!
ধূলায় ধূসরিত হয়ে আছে আমার প্রিয় শহর। ট্র্যাফিক জ্যাম আর ক্ষয়ে যাওয়া রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি। তারপরেও প্রিয় শহরটিকে দেখবো বলে ছুটে যাই, ছুটে যেতে ইচ্ছে করে অবিরাম।
ঢাকাকে আমি ধারণ করেছি বুকের গভীরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৫৬