এই উইক এন্ডে দুটি মুভি দেখলাম। গুঞ্জন সাক্সেনা ও শকুন্তলা দেবী।
মুভি রিভিউ কিভাবে লিখতে হয় আমার জানা নেই। তাই শুধুমাত্র ভালোলাগা থেকেই এসম্পর্ক কিছু আলোচনা করতে ইচ্ছে করলো।
গুঞ্জন সাক্সেনা ছবিটা দেখতে দেখতে নিজের ফেলে আসা কিছু ইচ্ছার কথা মনে পড়ছিলো খুব। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আকাশ পথে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো । রাস্তার পাশে বড় বড় বিলবোর্ড জুড়ে বাংলাদেশ বিমানের বিজ্ঞাপনে হাসিখুশি বিমান বালাদের সেবা দেওয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে এই আকর্ষণ জন্মেছিলো ।
বিমান বালা হওয়ার দূরনিবার ইচ্ছে নিয়ে ফর্ম যোগাড় করি ।কিন্তু বাসায় জানাজানি হওয়ার পর ভীষন আপত্তির মুখে আমার বিমান বালা হওয়ার স্বপ্ন ঐ ফর্ম জোগাড় করা পর্যন্ত । আমার দেখা জীবনের প্রথম স্বপ্ন ধুলিসাৎ হওয়াতে এখন আর আফসোস হয় না ।
ভীষণ রক্ষনশীল পরিবারে আমার বাপ ও মায়ের চৌদ্দ+চৌদ্দ আটাশ গুষ্ঠিতে এমন স্বপ্ন আর কেউ দেখেছে বলে মনে হয না। তবে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস কেনো হয়নি ? এটা মনে হয় আমার হাইট ফোবিয়ার কারনে। খুব উপর থেকে নীচের দিকে তাকাতে আমার খুব ভয় হয়।
একদিন মনের দুখের কথা কাছের বান্ধবী কে বলেছিলাম। উত্তরে সেই বান্ধবী সান্তনা দিয়েছিলো “তুই তো শাড়ী পরতে পারিস না । বিমান বালা হতে হলে অনেক সুন্দর করে টাইট ফিট শাড়ী পরা জানতে হয়।”
যাইহোক আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর কারোর হাত নেই। তিনি চাননা আমি বিমানে মানুষের সেবা করি। আমার মায়ের ভাষায় কাজের মেয়েদের মতন সবার ঝুটা থালা বাসন পরিস্কার করি। তবে মহান রবের ইচ্ছায় আজ আমেরিকায় আমার সথায়ী বসবাস। বিমান বালাদের সেবা নিয়ে ইউরোপ আমেরিকা এশিয়া ঘুরে বেড়াই । বিমান বালা পাশে এসে মিহি সুরে জানতে চায় “ ম্যাডাম উড ইউ প্লিজ লাইক জুস কফি ওর টি? “
নিউ ইয়রক থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক আকাশ পথে দীর্ঘ ভ্রমনের বিমান বালাদের আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যাই। দুবাই থেকে নিউইয়রক ১৪ ঘন্টার উড়ালে আমিরাতের বিমান জে এফ কে এয়ারপোরটে খুব ভোরে ল্যানড করে।প্লেন ল্যানডিংয়ের ঘন্টা দুয়েক আগে ঘুম ঘুম চোখে বিমান বালারা এতোগুলো মানুষকে ব্রেক ফাস্ট সার্ভ করে কি ভীষণ আন্তরিকতায় ! লম্বা ভ্রমনের ক্লান্তি নিয়েও তারা তাদের কাজে কোন রকম বিরক্তি প্রকাশ করেনা। হাসিমুখে দায়িতত পালন করে যায়।
এখন মুভি নিয়ে কিছু কথা । গুঞ্জন সাক্সেনার গল্পটা শুরু ভারতে জন্ম নেয়া এক মেয়ে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে আকাশে ওড়ার। প্রাইভেটে পাইলট ট্রেনিং নেয়ার সামর্থ্য পরিবারের নেই, তাই এয়ারফোর্সে যোগ দেয়া। সেখানেও সে টেকে না। ফিজিক্যাল ডিজেবিলিটির কারনে রিজেক্টেড হয়। স্বপ্ন ভাঙ্গে। পিতা এগিয়ে আসে কন্যার স্বপ্ন পূরনের বাহন হিসেবে। এক অসাধারন পিতা-কন্যার সম্পর্কের সিনেমা এটি। “গুঞ্জন সাক্সেনা - the Kargil girl" দেখা উচিৎ পিতা কন্যার সম্পর্কের জন্য। কন্যা সন্তানের প্রতি নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর জন্য।
এমন পিতা যদি দেশের ঘরে ঘরে জন্ম হয়, তাহলে উপমহাদেশের মেয়েদের ভাগ্য বদলে যাবে একশত ভাগ।
সিনেমাটি প্রতিটা মেয়ের দেখা উচিৎ, কিভাবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দিতে হয় এই প্রেরনার জন্য।পংকজ ত্রিপাঠি এবং জাহ্নবী কাপুরের অভিনয় ভালো লেগেছে।
এই ছবির একটি একটি চমৎকার সংলাপ মন ছুয়েছে। পংকজ ত্রিপাঠীর কণ্ঠে, "প্লেন ছেলে ওড়াক অথবা মেয়ে, দুইজনকেই "পাইলট" বলে। যখন প্লেনের কোন সমস্যা নাই তাকে কে ওড়াচ্ছে, তাহলে তোমার কী আপত্তি?" এই সংলাপটি ভীষণ সাম্যবাদী আর নারীবাদী মনে হয়েছে । আলাদা করে ধন্যবাদ জানাই এই সংলাপ রচয়িতা কে।
'শকুন্তলা দেবী' মুভিতে নাম চরিত্রে বোধ হয় বিদ্যা বালান ছাড়া অন্য কেউকে মানাতোই না। বাবা মা আর সন্তানের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখে নিজের ফেলে আসা অনেক অতীত মনে হয়ে চোখ ভিজে পানি গড়িয়ে পরেছে। অনুভব করলাম অনেক কিছু। নিজে বাবা - মা না হলে এই যন্ত্রণা উপলব্ধি করা যায় না। জীবন সত্যি খুব বেশী জটিল হয় কখনো কখনো। এই ছবিটার কোনও অংশেই নেই একঘেয়েমি।
Rabiya Rahim
নিউ ইয়রক
ইউ এস এ
১৭/০৮/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩