"হিজামা" কি? ----আমরা বাংলায় বলে থাকি ‘শিঙ্গা লাগানো"। আর আরবিতে বলা হয় ‘হিজামা’। আরবি ‘আল হাজম’ থেকে এ শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। হিজামা হল এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যে পদ্ধতিতে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে সুচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চুষে) নিস্তেজ প্রবাহহীন রক্ত বের করে ফেলা হয়। এই পদ্ধতিতে শরীর থেকে রক্তের টকসিন বের করা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশী,চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়।
এটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) নির্দেশিত একটি চিকিৎসাব্যবস্থা। হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সা) বলেছেন, “জিবরীল (আ) আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৭০
হিজামাকে নবীর দেখানো বা বলা চিকিৎসা পদ্ধতি বলা হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা) হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে উম্মতকে অবহিত করেছেন। তিনি নিজে এ পদ্ধতির চিকিৎসা ব্যবহার করেছেন এমনকি অন্যকে হিজামা পদ্ধতির চিকিৎসা নিতে উৎসাহিতও করেছেন। হিজামার ব্যবহার রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
আমাদের দেশে আঞ্চলিক ভাষায় "শিঙ্গা লাগানো’ বলতে বুঝি কাঁধে ঝোলা ঝুলিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের মহিলাদের হাতে গরুর শিঙয়ের মাধ্যমে এক প্রকার চিকিৎসা ব্যবস্থা। বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহরের অনেকেই এই ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন। আমার কৈশোর কালেও দেখেছি আমার আব্বা ও আম্মা কে পিঠে ব্যথা, হাটু ব্যথা ও কোমর ব্যথা কমানোর জন্য বেদে সম্প্রদায়ের মহিলাদের দিয়ে শিঙ্গা লাগিয়ে চিকিৎসা নিতে। আমার আম্মার বয়স এখন ৮০ বছর। খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে, এতটা বয়সে এসেও আমার আম্মার শরীরেএখন কোন ব্যথা নেই।
এদিকে আমি বেশ কয়েক বছর ধরে কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যথায় অসয্যকর যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম। দুই দফা "এম আর আই" করার পর বেশ কয়েক দফা ফিজিওথেরাপি নিয়ে নিয়ম করে প্রতিদিন এক ঘন্টা এক্সারসাইজ করে ব্যথা কিছুটা সহনীয় হয়েছিল। তবে পুরোপুরি সেরে উঠিনি। পরিচিত অনেকের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে ঢাকাতে বেশ কয়েকটি জায়গায় হিজামা কাপিং থেরাপি দেওয়ার সেন্টার চালু হয়েছে। আমার খুব কাছের কিছু আত্মীয় এই থেরাপি নিয়ে বেশ ভালো আছেন। তারাই আমাকে পরামর্শ দিলো এই থেরাপি নেওয়ার জন্য।
হিজামা কিভাবে করতে হয় -----
আরামদায়ক অবস্থায় শুইয়ে অথবা বসিয়ে যে স্থানে হিজামা করতে হবে শরীরের সে জায়গা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। হাতে গ্লাভস পরে নিয়ে জীবাণুমুক্ত কাপগুলো এক এক করে শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে নিতে হয়। অতঃপর হিজামার স্থানে ধারালো সুঁচ বা ব্লেডদ্বারা চামড়ার উপর হালকাভাবে ছিদ্র করে নিতে হয়। ছিদ্র করার সময় হাল্কা আঁচড়ের মতন ব্যথা অনুভব হয়। তবে ব্যথা তেমন কিছুনা। তারপর কাপ সেট করে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে দূষিত রক্ত বের হয়ে কাপে জমতে থাকবে। কোনো স্থানে কাপ সাধারণত পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি রাখা হয় না।
হিজামার পর ঐ স্থানে গোল চিহ্ন বা ফোলা অনুভব হয়। যা সর্বোচ্চ দুই বা তিনদিন থাকতে পারে। এটা দূষিত রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দে মিশরীয়রা কাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করতো। অনেকেই কাপিংকে চীনের চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপাংচারের সাথে মিশিয়ে ফেলছেন, যা আসলে কিন্তু একই না। আকুপাংচার পদ্ধতিতে সূঁচ ফুটানো হলেও কাপিং পদ্ধতিতে কাপের মাধ্যমে রক্ত শুষে নেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে বিশেষভাবে তৈরি কাপ কাঁচের তৈরি হয়ে থাকে। যা শরীর থেকে রক্ত শুষে নেয়। হিজামার পর ত্বকে গোলাকার লালচে অস্থায়ী কিছু দাগ দেখা দেয়।রক্ত শুষে নেওয়াতে এই দাগ হয়। এই দাগ দুই/তিন দিন পর চলে যায়।
সিভিয়ার পেইন থাকলে ব্যথার জায়গায় দুই থেকে তিন বার হিজামা নিতে হয়।
আমার কাঁধের আর ঘাড়ের ব্যথা একবার হিজামা করিয়েই প্রায় ৯০ ভাগ ভালো হয়েছে। আমি ফেব্রুয়ারির দুই তারিখে নিউইয়র্ক ফিরে আসি। তাই বাংলাদেশে আর নিতে পারিনি।
জানুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে আমার কাধে আর ঘাড়ে ১৫টি কাপ লাগিয়ে হিজামা করাই। প্রতি কাপের দাম ১০০ টাকা করে ১৫ টি কাপের হিজামা খরচ আসে ১৫শত টাকা। মহিলাদের জন্য মহিলা থেরাপিস্ট থাকেন। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য একটাই যে অনেক পুরনো এই চিকিৎসা পদ্ধতির নতুনরুপ সম্পর্কে সবাইকে জানানো।
ব্লগার নীল আকাশের করা মন্ত্যব্যর প্রেক্ষিতে আমি বেশ কিছু পয়েন্ট খুজে পেলাম। ধন্যবাদ নীল আকাশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরার জন্য।
এখন আপনি কেমন ফীল করছেন?
উত্তর-- আমার ছিল সিভিয়ার পেইন। ডান হাত দিয়ে আমি তেমন কিছুই করতে পারতাম না। ডান হাতে ১৩ বার ও বাম হাতে ও ঘাড়ে নয় বার অত্ত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পর ব্যথা কিছুটা কমেছিল। তবে প্রতিদিন রুটিন করে আমাকে এক ঘন্টা এক্সারসাইজ করতে হত। কাজের চাপে বা অন্য কোন কারনে যদি ব্যায়াম করতে ভুলে যেতাম তবে খুব পেইন শুরু হত কাধে আর ঘাড়ে। ব্যথায় ঘুমাতে কষ্ট হত। শোয়ার সময় সটান শুয়ে থাকতে হত। ডান বা বাম পাশ ফিরে শুতে পারতাম না।
ডান দিকে ব্যথা বেশী হওয়াতে ডান কাতে কখনোই শুতে পারতাম না। ঘুমের ভেতর কখনো ডান পাশ করলে ব্যথায় সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে যেত। তবে এখন আল্লাহর রহমতে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছে। জানুয়ারির ২৪ তারিখের পর থেকে এই পর্যন্ত একদিনও ব্যায়াম করতে হয়নি। সে হিসেবে বলবো আমি আগের তুলনায় এই থেরাপি নিয়ে অনেক ভালো আর হাল্কা ফিল করছি।
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন স্টেরয়েডের কথা সেটা আসলে ঠিক না। পুরো ব্যাপারটা আমার সামনেই হয়েছে। আমার সাথে আমার বড় বোন ছিলেন । তেমন কিছু ইঞ্জেক্ট করলে অবশ্যই তার বা আমার নজরে আসতো ।
হিজমা করার জায়গাগুলির স্কীন কী এখন ঠিক হয়ে গেছে?
উত্তর-- হিজামা করার জায়গার স্কিন তিন দিন পরেই আগের মতই হয়ে গেছে।
আপনার ব্যাথা কী কমেছে?
উত্তর-- আগের তুলনায় অনেক ভালো আছি। হাতের ব্যথায় হাতে চুড়ি বা ঘড়ি পরতে সমস্যা হত । এখন চুড়ি আর ঘড়ি পরাতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা। তাই মনে হচ্ছে ব্যথা নেই।
আপনি কী এই চিকিতসা নিয়ে সন্তুষ্ট?
উত্তর--আমি শতভাগ সন্তুষ্ট এই চিকিতসায় ।
এই চিকিতসা কী আপনি আবার নিতে চান?
উত্তর-- আবার নিলে মনে হয় শরীরের ভারি ভারি ভাব পুরোপুরি কমবে। আমি আরেকবার নিতে চাই। নিয়ম হোল ব্যথার জায়গায় দুইবার হিজামা করানো । আমি এখন বাংলাদেশে নেই তাই খুব সহজে এই পদ্ধতিতে চিকিতসা নিতে পারছিনা। তবে অনলাইন সার্চ করে নিউয়রকের ব্রুকলিন এলাকায় এমন কয়েকটি সেন্টারের ঠিকানা পেয়েছি। আমি ব্রুকলিন সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করবো ।
১০ এর মধ্যে একে আপনি কত রেটিং দিবেন?
উত্তর-- দশে আমি দশ দিতে চাই। কারন আমি শতভাগ সন্তুষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৭