আবার এলাম কিছু প্রবাস জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে। মানব জীবনের গতিপ্রকৃতি কিভাবে পরিবর্তন হয় তার গল্প!
এন্ড্রো, জাতিতে হিস্পানিক, পুয়ের্তো রিকোর অধিবাসী। তার সাথে পরিচয় হয় ম্যানহাটান এর ৪২ নং স্ট্রিট - গ্রান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন এ। জরুরি দরকার ছিলো বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যাওয়া। আমাদের সব করিৎকর্মা লোক বসে আছেন আর কাজ করছেন খোশমেজাজে এ! তো কাজকর্ম সেরে দুপুর হয়ে গেলো, মনে করলাম যেহেতু আবার একই স্টেশন দিয়ে ফেরত যাবো, কিছু খেয়ে নিলে মন্দ হয় না। একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে চিবুচ্ছি আর বেচারার আগমন।
- তোমার কাছে কিছু খুচরো হবে? বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। আমি বললাম বেশ তো, চলো তোমাকে একটা স্যান্ডউইচ খাওয়াই। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি আমি এরকম করে কেউ চাইলে সাধারণতঃ আমি খুচরো দেয়ার চেয়ে তার প্রয়োজনটুকু পূরণ এর চেষ্টা করি সাধ্যেমতো। যাহোক খাওয়া শেষ করে আমার কিছু সময় ছিল আর তার সাথে গল্পে মত্ত হলাম। কথাবার্তা শুনে কিছুটা শিক্ষিত মনে হলো। জিজ্ঞেস করতে বলে হাই স্কুল পাশ করে নি। চার ভাই, তিন বোন। মা - বাবার কোনো খোঁজ নাই। জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না, তাই ভবঘুরের জীবন বেছে নিয়েছে। আরো জানালো তবে সে কাজ করতে চায় যদি সেটা ভালো লাগে। তার সাথে আরো কিছু গল্প করে ফোন নম্বর নিয়ে চলে এলাম। আমার এক পরিচিত কোম্পানির মাধ্যমে তাকে জেফকে এয়ারপোর্ট এ পরিষ্কারক (Janitor) এর কাজের প্রস্তাব দিলাম। ইন্টারভিউ, সিকিউরিটি চেক সব কিছুতেই সে উৎরে গেলো আর কাজ এ যোগদান করে ফেললো! ব্যস্ততার কারণে আমিও ভুলে গিয়েছিলাম তার কথা সময়ের পরিক্রমায়।
বছর ছয়েক পরে একদিন আবার দেখা হলো এক ম্যাকডোনাল্ডস এর পার্কিং লট এ। আমাকে দেখেই ছুটে এলো আর এতো খুশি যে সে যেন চাঁদকে খুঁজে পেয়েছে। অনেক কথা হলো আর যা বললো তাতে আমি সত্যিই বিমুগ্ধ। সে পরিষ্কারক এর কাজ এর পাশাপাশি পড়াশুনা করে ব্যাচেলর সম্পন্ন করে ফেলেছে। তারপর ইন্টারভিউ দিয়ে কর্নিং (Corning) কোম্পানি তে সফটওয়্যার ডিজাইনার হিসেবে চাকুরী করছে, বছরে $১৩০,০০০ এর মতো তার উপার্জন! আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে সে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো সেও চেষ্টা করে তার কমিউনিটি তে বেশ কিছু যুবক/যুবতী দের কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করছে যাতে সমাজে বেশ ভালো অবস্থান এ থাকতে পারে। বেশ খুশি হলাম তার এই প্রচেষ্টায় আর ভালো লাগলো যে সে নিজের চেষ্টায় সফল হতে পেরেছে।
ভালো লাগে যখন দেখি মানুষ জীবনে চেষ্টা করে, অধ্যবসায়ে সফলতা আসবেই সেটা যেভাবেই হোক না কেন।
এবার আমার এক স্মৃতি শেয়ার করি। আমি সাধারণতঃ গাড়ি বেশ জোরে চালাই। বেশ কয়েকটা টিকেটও খেয়েছি আর ইন্সুরেন্স তা বেশ উচ্চমূল্যে আমার জন্যে। যা হোক এটি গতি সংক্রান্ত একটি ছোট ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ড্রাইভ করে যাচ্ছি নিউ জার্সি তে। রাত বাজে ৩:৩০ মিনিট। উইলিয়ামস বার্গ ব্রিজ তা পার হলাম ৫৫ মাইল গতি তে। যথারীতি পুলিশ এর সাইরেন আর থামানো আমার গাড়ি।
- তুমি যে ব্রিজ তা পার হলে পঙ্খিরাজ এর মতো, তোমার বান্ধবী অপেক্ষা করছে তোমার জন্যে? গতি সীমা ৩৫ মাইল সে কি তুমি জানো না?
- অফিসার, আরো দুটি গাড়ি তোমার সামনে দিয়ে চলে গেছে ৬৫ মাইল গতিতে অথচ ওদের আটকালে না, আর আমাকে আটকালে? কেন আমি বাদামি চামড়া বলে? তোমার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি আমি একটা জরুরি কাজ (ইমার্জেন্সি) আই - ৮৭ এ হয়েছে আর তুমি সেটা না জানলে টিউন করো চ্যানেল ১৩ এ।
- তো তাতে তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি যদি না যাই, পোর্ট অথরিটি কে কোস্ট গার্ড $২৫০০০ জরিমানা করবে প্রতি ঘন্টায়, তুমি কি সেটা চাও? যদি না চাও, তো আমাকে তাড়াতাড়ি বিদেয় করো।
- আগে বলবে তো, তুমি এই জন্যে যাচ্ছ? তোমার ক্লেয়ারেন্স কেন আগে দেখালে না? কোনো সমস্যা নেই, জলদি যাও।
অতঃপর, আমি চলে গেলাম আমার গন্তব্যে!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৪