মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নাই। কিছুদিন পর পর নতুন নতুন ছবি, ফটোশপ ছবি, ভিডিও, ফটোশপ ভিডিও দিয়ে ছয়লাভ হয়ে যায়। অনলাইন-অফলাইনের সেলিব্রেটি টাইপের মানুষেরা তর্ক করে করে হয়রান হয়। কখনো হিমু, তো কখনো ফিউসন ফাইভ। আর এ সবের সর্বশেষ সংযোজন হইল আমার ব্লগ, বোয়ান টাইপের প্রিন্ট মিডিয়া '৭১টিভি'র একটা রিপোর্ট। যদিও অনলাইনে লোকে অনেক আগেই দেখে ফেলছে জিনিসটা। মুসা'কে প্রতারক, জালিয়াতি, জাতীয় বেঈমান অনেক কিছুই বলা হইছে এবং হবে।
মুসা কি এভারেস্ট জয় করছে কি না এটা আজীবন একটা বিতর্কই মনে হয় থেকে যাবে। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে আদৌ গিয়েছে কি না সেইটা নিয়েও কত লোকের সন্দেহ, আর এইটা তো বঙ্গভূমি'র মুসা।
আমাদের এই বঙ্গভূমি'র বুকে প্রতিটি আনাচে-কানাচে, অফিস-আদালতে, জনসভায়-রাজপথে, গ্রামে-শহরে, বেডরুমে-বাথরুমে কত কত প্রতারণা যে হয় তার কতটুকু নিয়ে আমরা সচেতনা দেখাই?
এই অতিসাম্প্রতিক কালে দেশের সোনার সন্তানরা ফেবু'র মাধ্যমে ফাস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিল। পরীক্ষার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে প্রশ্ন ছাপিয়েও সোনার ছেলেদের দাবিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ইন্সাল্লাহ্, ওরা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করে এ-প্লাস নিয়েই আসবে। আবার এই ছাত্রদের যারা পড়াচ্ছেন, সেই শিক্ষকেরাও কম যান না। এই তো সেদিন দেখালাম এক শিক্ষকের পরিচিতি লেখা এস।এস।সি(ডাবল), এইচ।এস।সি(ডাবল)। আবার কেউ কেউ ছাত্রদের শর্ট সাজেশন দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে বাহবা পান। কেউ ছাত্রীদের সাথে পরিমলগিরি করেন।
আছে খুচরা ব্যবসা আর ধর্ম নিয়ে প্রতারণা। গুলিস্তান, ফার্মগেটের ফুটপাতে দশ টাকার জিনিস ধরিয়ে দিবে দু'শো টাকায়। আবার আখিরাতের লোভ দেখিয়ে আপনার কাছ থেকে মসজিদ নির্মাণের খরচ আদায় করবে। কেউ কেউ আবার মাজারে শিন্নি দিবে, পীর বাবা'র পায়ের কাছে পরে থাকবে, কিছু লোক বেহেস্তের লোভে "জিহাদে" ঝাঁপিয়ে পরবে। পত্রিকা, নিউজ চ্যানেলে চলবে প্রতারণা। নিজের মত করে একটা নিউজ করে সকলের বাহবা নিবে। আবার কারো সাথে বনিবনা না হলে তার নামে মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে তাকে নিঃস্ব বানিয়ে ছেড়ে দিবে। আবার এক পত্রিকার সাথে আরেকটার বিরোধ হলে তো কথাই নেই। উনাদের কল্যাণে ডাক্তারের হাতে উঠে আসবে লাঠি। আবার সময়ে সেই ডাক্তার মানুষকে পথের ফকির বানিয়ে ছেড়ে দিবে, তবু রোগ ভালো হবে না।
একটা প্রতারণা তো আমরা প্রতি পাঁচ বছরে দেখি যেটা হল উন্নায়নের প্রতারণা। মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে যাবে উন্নায়নের জোয়ারের আশ্বাস। কিন্তু একবার ভোটে জেতার পর আমরা পাব দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, বিদ্যুত-বিভ্রাট, বিদ্যুত-তেল-গ্যাস-খনিজের দাম বৃদ্ধি, যানজট, যানজট কমাতে ফ্লাইওভারের জন্য আরো যানজট, ডিজিটাল দেশের ডিজিটাল ব্যান্ডউইথ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভারতে রপ্তানী,--- এত সব কিছুর পর যখন পদ্মাসেতু নিয়ে চিল্লাচিল্লি হয় তখন আমরা জানতে পারি একটা না, দুই-দুই'টা পদ্মাসেতু হচ্ছে।
এরই মাঝে আমরা শুনতে পাই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়ে গেছে! এত বিদ্যুৎ তারা রাখবে কোথায় তা-ই ভেবে পাচ্ছে না। শেষে সেই বিদ্যুৎ পাঠিয়ে দেয়া হয় রাস্তার লাইটনিং-এ, শাহজালাল বিমান বন্দরের "ওয়েলকাম" আর "থেংক ইউ"-এ, পুলিশ বক্সের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে।
ডেসটিনি'র মত এমএলএম'গুলো প্রতারণা করে তরুন সমাজকে টাকার লালচ দেখিয়ে এটা-সেটা বিক্রি করে যায়। কখনো নাইজেলা তেল, কখনো পায়ের ব্যায়ামের যন্ত্র তো কখনো সর্বরোগের কুইক মহৌষধ-রুপে বিশেষ প্রকৃতির ব্রেসলেট। আর সেইসবের খবর আমাদের প্রশাসনের কানে পৌছায় প্রায় দশ বৎসর পরে। আর এদিকে সকলের নাকের ডগা দিয়ে চলে হলমার্কের কেলেংকারী।
এই সব প্রতারণার সর্বশেষ সংযোজন হল দেশের জিডিপি। বলা হল দেশের জিডিপি রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে এসেছে জোয়ার, জলোছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, সুনামী!! কিন্তু গত কয়েকদিনের আলোচনা থেকে আমরা জানি এটা শুধু ধনীদের উন্নতি, গরীব আরো বেশি গরীব হয়ে চলেছে দিন দিন। জিডিপিতে এইসব ধরা পরছে না। অর্থাৎ, এটা অর্থনীতিবিদদের ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এত সব কিছুর ভিতরে মুসা না হয় নিজের নাম ফুটানোর জন্য একটু প্রতারণা করলই। তাতে এত হাউকাউ-এর কি আছে? তারচেয়ে এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে দেশের নামটাও একটু ফাটল। কি বলেন??