রাত গভীর হয়ে আসছে। তখনো ঢাকার রাস্তা প্রায় জেগেই আছে। রাতের ঢাকা কখনো ঘুমায় না, মাঝে মাঝে তন্দ্রা যায়।
হঠাৎ আকাশের দিকে অবাক চোখে তাকায় সবাই। সেখানে আলো, অন্যরকম আলো! এমন আলো তারা আগে দেখেনি। এটা কি ভীনগ্রহবাসীদের স্পেস শিপ নিয়ে বুঝি ঢাকার উপর ল্যান্ড করতে যাচ্ছে। পুরো পৃথিবী রেখে এই ঢাকার প্রতিই তাদের নজর পরল?
আর তখনি চারদিক থেকে ঠাঁঠাঁ গুলির শব্দ হতে থাকে। রাউন্ডের পর রাউন্ড গুলি চলছেই, বিরতি নেই।
এশার নামাজ শেষে মোসলেম সাহেব যখন বাড়ি ফিরছিল, তখন বৃষ্টির মত গুলি বাতাসে এক আলোড়ন তুলেছে। সেই বাতাসের আলোড়নে তার মাথার টুপি উড়ে গেল। তখন অন্ধকারের বুক চিরে দেখা দিল সারিবদ্ধ হানাদার বাহিনী। তাদের ঠিক মাঝখানে নেতা গোছের একজন উর্দুতে কথা বলে উঠল, - সব বাঙ্গাল কো খতম কর্ দো। হামে বাঙ্গাল নেহি চাহিয়ে, মিট্টি চাহিয়ে মিট্টি!
প্রফেসর সাহেবের পাশে পাশে হাটতে থাকা ফারুক কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা গুলি তার বা হাতের কনুইয়ে লাগে। এক গুলিতেই হাত উড়ে যায়। তীব্র ব্যাথায় চিৎকার করেও প্রফেসর সাহেবের দিকে তাকিয়ে সে থমকে যায়। প্রফেসর মস্তিষ্ক সহ মাথার অর্ধেকটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুহুর্তের জন্য, তারপর ধপ্ করে পরে গেল।
ওদিকে এক হানাদার মৃত এক লাশের উপর বেয়নেট চার্জ করেই যাচ্ছে। খোঁচাতে খোঁচাতে নাড়ি ভুড়ি সব বেরিয়ে গেছে। পাশের আরেক হানাদার উর্দুতে বলে, - এ কি করছ তুমি? জবাবে সে জানায়, - গুলি বাঁচাচ্ছি।
ওদিকে আরেক হানাদার একটা "মৃত" বাঙ্গালী নারীকে ধর্ষণ করেই যাচ্ছে।
আজমল সাহেব এই সব দেখে পাগলের মত বলতে থাকে, - তোরা কি মানুষ? তোদের মনে কি দয়া মায়া নাই? আল্লাহ্র ভয় নাই? তোরা কি একেকটা শয়তান?
এই কথায় হঠাৎ সবাই কেমন নিরব হয়ে যায়! চুপ করে থাকা একদল হানাদারকে ডিঙ্গিয়ে আসে নেতা গোছের লোকটা। তারপর আজমল সাহেবের দিকে তাকিয়ে উর্দুতে বলে, - আমাদের শয়তান বলেছ? এসো দেখাই শয়তান কাকে বলে।
এই কথা বলে হানাদারদের নেতাটি কোথা থেকে একটা নকল শ্বদন্ত নিয়ে উপরের পাটির দাঁতের সাথে লাগিয়ে নেয়, তাকে তখন ভ্যাম্পায়ারের মত দেখায়। তারপর সে আজমল সাহেবের গলায় ভ্যাম্পায়ারের মত কামড় বসিয়ে দেয়। এরপর চুষে চুষে রক্ত খেতে থাকে। এভাবে এক পর্যায়ে আজমল সাহেবের দেহটা চিমশে গিয়ে কংকালের মত হয়ে গেলে সে ছেড়ে দেয়। আজমল সাহেবের চিমশানো দেহটা লুটিয়ে পরে।
রাস্তার উপর তখন এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রক্তের ডোবা। কিন্তু অণর্গল রক্তের ফোটা বৃষ্টির মতই ঝরে পরছে ডোবাগুলোতে। তাই এমন ঢেউ উঠেছে সেখানে যে রক্ত জমাট বাঁধার সময় পাচ্ছে না।
ওদিকে দুটি তরুন হানাদার মধ্যে কথা হচ্ছে।
- ইস্, সেই কখন থেকে শুধু গোলাগুলি করেই যাচ্ছি। এখন বড় খিদে পেয়েছে, পেটে ছুচো নাচছে। খাবার পাই কই?
- আরে বোকা! এখানে এত খাবার পরে আছে আর তুই খাবার খুজস!
- ভালো কথা মনে করেছিস তো!!
বলেই সামনের একটা গুলিবিদ্ধ মরা লাশের উপর ঝাপিয়ে পরে এবং মাংস চিবোতে শুরু করে দেয়। কিছুক্ষণের ভিতর সেই লাশের শুধু হাড্ডি ছাড়া বাকি সব শাবাড় করে দেয়।
ওদিকে আরো কম বয়সী দুই হানাদারের খেলার শখ পেয়ে বসেছে। একটা মানব-হৃৎপিন্ড নিয়ে তারা বল খেলছে।
দুটো ছোট্টশিশু ভাবল এ নতুন কোন খেলা বুঝি। তাই কৌতূহলী হয়ে সামনে আসে। এ সময় এক হানাদার ওদের চকলেট দেখিয়ে ডাক দেয়, - চকলেট খাবে!! শিশু দুটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে। আর ঠিক তখনি হানাদারটি দু'জনকে একসাথে বেয়নেট বিদ্ধ করে শূণ্যে উঠিয়ে ধরে। বাচ্চা দুটো হাত-পা ছুড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। আর তা দেখে হানাদার হাহাহোহো করে অট্টহাসি দেয়।
এদিকে এক ছাত্র দুটো হানাদারের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছে। হানাদারদের একজন উর্দুতে বলে, - কি আমাদের দেখেই এত ভয়!
অপরজন বলে, - দাঁড়াও তোমার সব ভয় দূর করে দিচ্ছি।
এই বলে ওরা দু'জন দু'পাশ থেকে বেয়নেট দিয়ে ছাত্রটির দুই চোখ গেলে দেয়।
রাত বাড়তে থাকে। এক সময় কার্ফিউ ঘোষণা দেয়া হয়। ভয়ংকর গণহত্যার উল্লাসে মত্ত হানাদারগুলো শান্তির ঘুম দেবার মত সামান্য ফুসরত পায়।
ভোরের কিছু আগে এক মসজিদের ছাঁদে দাড়িয়ে মুয়াজ্জিন ফযরের আজান দিতে শুরু করেছিল "আল্লাহু আকবার" বলে। শয়তানের দোসর হানাদারগুলো এই "আল্লাহ্র নাম" সহ্য করতে পারে না। বিরক্ত হয়ে একজন গুলি করে দেয়। মুয়াজ্জিনের লাশটা মসজিদের ছাঁদ থেকে রাস্তার উপর লুটিয়ে পরে।