ছোট্ট মিলিতা তার আংকেল স্যাম-এর সাথে মিউজিয়াম ঘুরতে গেল। মিউজিয়ামটা ওদের ছোট্ট কলোনী থেকে বেশ দূরে শহুরে এলাকায়। শহর বলতে সেখানে কোন মানুষ বাস করে না, শুধু বড় বড় কারখানা আর ল্যাব-এ মানুষ আর এনরোয়েড কাজ করে আর মহামান্য সাংসদরা নানান বিষয়ে আলোচনা করে স্বীধান্ত নেয়। ওখানে বড় একটা ইউনিভার্সিটিও আছে যেখানে ছাত্ররা পড়াশুনা করে এবং গবেষণার কাজও চলে। সেই শহরে এমনি এমনি যাওয়া যায় না, মাটির নিচের বায়ুশূণ্য টানেলের ভিতর দিয়ে মাইল মাইল পথ চলে যায় টিউব নিমিষেই। সেই টিউবে চড়েই যেতে হয় শহরে।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে এই গ্যালাক্টিক মিউজিয়ামে একটুখানি সময় কাটানোর জন্য। মিলিতার কাছে এ যেন একটা স্বপ্নপূরণের মত, এই প্রথম সে এখানে আসার সুযোগ পেয়েছে। চারপাশে নানান জাতীয় নতুন নতুন জিনিস দেখতে পেরে তাই খুশিতে সে আত্মহারা হয়ে গেছে। এখানেই সে দেখতে পায় চাঁদ থেকে পাওয়া নূড়ি পাথর, মঙ্গল গ্রহের কমলা রঙের মাটি, শনির বলয় থেকে পাওয়া বরফ, পুরানো দিনের স্পেস সুট আরো কত কি?
কিন্তু এ সব কিছুর মাঝখানে সে আরো অদ্ভূত একটা জিনিস দেখতে পেল। সে দেখল একটা এক মানুষ সমান লম্বা বাক্স, সাদা রঙের। কাছে যেতে দেখল ওটার একপাশে কাচের জানালা মত। সেই জানালা দিয়ে একটা মানুষের মুখ উকি দিচ্ছে, হঠাৎ দেখে মনে হয় কেউ ওখানে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে, অনড়।
ঘুমিয়ে থাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে মিলিতা যেন থমকে যায়। প্রায় শোনা যায় না এমন সুরে বলে, - লোকটা কি মরে গেছে?
আংকেল স্যাম জবাব দেয়, - না, শুধু ঘুমিয়েছে একটু। কিন্তু এই ঘুম আজ ভাংবে না, আরো ষাট বছর তার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
বলতে বলতে স্যাম-এর কন্ঠ কেমন আর্দ্র হয়ে আসে। কি সুন্দর মসৃণ মুখ সেই ঘুমিয়ে থাকা যুবকটির, কেমন একটা হাসি হাসি মুখ, অল্পবয়সী একটা কমনীয় ভাব। দেখে মনে হয় সে এখনি ঘুম থেকে উঠে তার সাথে হ্যান্ড-শেক করবে। কিন্তু স্যাম জানে এটা কিছুতেই আর সম্ভব না। আরো জানে একে যত অল্পবয়সী মনে হোক না কেন, ওর বয়স স্যাম-এর থেকে অনেক বেশি।
নিঃসঙ্গ ক্যাপস্যুলে যাত্রা শুরু হল
সব রকম ম্যাডিকেল চেক-আপ শেষ। সময় ঘনিয়ে আসছে। আরনান'কে এবার ক্যাপস্যুলের ভিতর ডুকতে হবে। বড় অদ্ভূত উদ্ভাবন এই জিনিসটা। এর ভিতর শুয়ে পরলে তাকে পুরো একশ' বছর ঘুম পারিয়ে রাখা হবে। এই একশ' বছরে তার কোনকিছুর প্রয়োজন হবে না, খাবার কিংবা বর্জ্র নিস্কাশন এ রকম অতিজরূরী কাজও না। সে শুধু ঘুমিয়ে থাকবে একটা জড় পদার্থের মত, একটা লোহার খন্ডের সাথে তার খুব একটা পার্থক্য থাকবে না।
আর এই একশ' বছরের মধ্যে মহাকাশ যানে করে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে দূরের অজানা সেই গ্রহটায়, যেখানে আজ পর্যন্ত কোন মানুষের পা পরেনি, আগামী একশ' বছরেও পরবে না। সেই দূরবর্তী গ্রহে অবস্থান করবে আরনান যতদিন প্রয়োজন হয়। তারপর আবার রওনা দিবে ক্যাপস্যুলে করেই, মানে আরো একশ' বছর লাগবে পৃথিবী পৌছতে। মহাকাশ যান চালনায় তার প্রয়োজন নেই, সব অটোমেটেড। আর পৃথিবী থেকে তো পর্যবেক্ষণ চলবেই যতটা সম্ভব-- যদিও এটা খুব একটা কাজে আসবে না, তারপরও এখন যতটুকু প্রযুক্তি আছে তাই দিয়েই চলবে বিজ্ঞানের গবেষণা।
প্রায় দুশ' বছরের প্রোজেক্ট! কে জানে কতটা সফল হবে সেটা। হয়তো গন্তব্যে পৌছাতে পারবে না তার আকাশ যান। অনেক ক্যালকুলেশন আর বিশেষ সুপার কম্পিউটার ব্যবহারের পরও হয়তো দেখা যাবে কোন এক দলছূট উল্কার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে যান। হয়তো একটু ভুল কিংবা মহাকর্ষের কারসাজিতে দিক পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তখন একশ' বছর পর তার ঘুম ভাংবে কোথায়? অথবা দুশ' বছর পর যখন ঘরে ফিরবে, তখন পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে? হয়তো ততদিনে পৃথিবীর মানুষের গঠন, মুখের ভাষায় অদ্ভূত পরিবর্তন আসবে। হয়তো বিজ্ঞানের বদৌলতে তারা আরো উন্নত হবে। আচ্ছা, ততদিনে পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক অবস্থাও কি এমন থাকবে যেমন সে দেখে যাচ্ছে? তার বংশধরেরা থাকবে কি বেঁচে? নাকি যেমন ক্লোন শিশুর কথা শোনা যায় এখন তা একদিন সত্য হবে? পৃথিবীর সব মানুষ বাবা-মা ছাড়াই ল্যাবরেটরিতে জন্ম হবে? তখন তো বংশধরের বিষয়টাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে!
এমনি আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতেই আরনান ক্যাপস্যুলের ভিতর শুয়ে পরে। বিদায় পৃথিবী! বিদায় হে মহাবিশ্ব!!
যাত্রার শুরুতেই বিভ্রাট
মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রজেক্ট ডাইরেক্টর গ্রাউস বসে বসে ঘামছেন। মাথার চুল ছিড়তে বাকি রয়েছে শুধু তার। আর তা হবে না কেন? তার সময়ের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট যার মেয়াদ প্রায় দুশ' বছরের সেটা এখন ভেস্তে যাবার পথে, তাও আবার একেবারে শেষ মুহুর্তে! যেন তীরে এসে তরী ডোবার মত।
সব কাজ ঠিকঠাকমত শেষ করে যখন মহাকাশ যানটি যাত্রা শুরু করতে যাবে তখনই একটা খুত্ ধরা পরে। যানের সুপার কম্পিউটারে কি একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, ওটা কমান্ড দিতে পারছে না সঠিকভাবে। এখন এটা সারানোর কোন উপায় নেই। আপাতত বছর কয়েকের জন্য এই প্রজেক্টের নামও নেয়া যাবে না। ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতি!
কিন্তু গ্রাউস অন্য একটা কথা ভেবে আত্কে উঠছেন। তিনি তার ডেস্কের সামনে বসে থাকা বিজ্ঞানীকে চিন্তিত গলায় আবার প্রশ্ন করেন, - কিছুই কি করা যায়? ছেলেটা এভাবেই পরে থাকবে?
জবাবে বিজ্ঞানী বলে, - আপাতত কোন উপায় দেখছি না। ক্যাপস্যুলটা হাইলি অটোমেটেড। একশ' বছর পর ওটা নিজে নিজেই কাজ শুরু করবে, কিন্তু তার আগে কিছুই করা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, একটা কিছু বের হবেই।
- প্রয়োজনে ওটা ভেঙ্গে ফেল, তারপরও...
- এটা খুবই সাধারণ ভাবনা, এবং বিপজ্জনক! ছেলেটাকে কিছুতেই বাঁচানো যাবে না তাহলে।
গ্রাউস কিছি ভেবে পান না। ছেলেটাকে তার প্রয়োজনও ছিল। প্রজেক্ট যেহেতু বাতিল হয়েছে, আবারও কন এক সময় চালু হবে। কিন্তু তখন আরনান কন কাজে আসবে না। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই জেগে উঠবে, তখন আরো জটিলতার সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে সহজ কাজ হল তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে নয়তো অন্য কাউকে তার জায়গায় নেয়া হবে। কিন্তু তারপরই আসে মানবিক দিকটা। শুধু একটা ত্রুটির কারণে ছেলেটার একশ' বছর ঘুমিয়ে কাটাতে হবে! তারপর তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবার ব্যাপার তো আছেই!
আরনানের স্থান হয় এবার গ্যালাক্টিক মিউজিয়ামে। পাশাপাশি তাকে ম্যানুয়ালি জাগিয়ে তোলার জন্য গবেষণা চলছেই, কিন্তু কোন সমধান মেলেনি। তারপর এক সময়.......
আরনানের কথা
এ মনে হয় সত্য নয়, এটা স্বপ্ন! কিন্তু তা কি করে হয়? কিছু কিছু অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বুঝতে পারে সে স্বপ্নে আছে না জেগে। আমিও সেভাবে বুঝতে পারি এটা স্বপ্ন নয়, নিখাদ বাস্তবতা আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
আমি জেগে উঠি একটা ধ্বংসস্তুপের ভিতর। এটা কি পৃথিবী? যদি আমার চেনা পৃথিবী ভেঙ্গে পরে তবে সেটার চেহারা এমনই হবার কথা। নাকি অন্য কোন গ্রহে পৌছে গেছি, যেই সভ্যতা এখন ধ্বংসস্তুপ প্রায়? ঠিক সেই সময় লোকটার সাথে আমার দেখা হয়। বয়ষ্ক লোক, চল্লিশ তো হবেই। প্রথমে আমাকে অভিবাদন জানায়। ভাষাটা একটু অন্যরকম, উচ্চারণ অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। তবু আমার বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয় না। সেই লোকটাই জানালো কিভাবে আমি এখানে এলাম, কিভাবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একশ' বছর আগেই আমার মিশন বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এই জায়গাটা একটা মিউজিয়াম ছিল এক সময়, এর ভিতরেই আমি একশ' বছর ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। ভাবতেই অবাক লাগে!
ধ্বংসস্তুপের মাঝ দিয়ে হাটতে হাটতেই তার সাথে আমার কথা হয়। সে জানায় শুধু আমাকে অভিবাদন জানানোর জন্যই সে অপেক্ষায় ছিল এতদিন। সে জানায়,
- আমার মা প্রথম যখন আপনাকে দেখে তখন তার বয়স ছিল অল্প। দেখে সে আতকে উঠেছিল। আমিও দেখেছি বহুবার। আমার ভাবতেও অবাক লাগছে আপনার সাথে কথা বলতে পারছি বলে।
- আমার কাছেও অবাক লাগছে। তবে ভালো লাগছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতেই আছি, আর পৃথিবীতে এখনো মানুষ আছে। কিন্তু চারপাশে এমন বেহাল দশা কেন?
- সে এক বিরাট ইতিহাস....
কথার মাঝে সে বাধা পায় অদূরে কোথাও পটকা ফোটার শব্দে। আমি কিছুটা আতকে উঠি, তবে তাকে বিচলিত মনে হয় না। আমি জিজ্ঞেস করি,
- যুদ্ধ চলছে নাকি?
সে আমার দিকে ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,- যুদ্ধ? এখন পৃথিবী জুড়ে যে শান্তি চলছে, বিগত কয়েক হাজার বছরে তার ছিটেফোটাও ছিল না।
- সেটা কি রকম?
- তোমাদের সময় বা তার অনেক আগে থেকেই সাম্যবাদী সমাজ বলে একটা কথা প্রচলিত ছিল। এখন সেটা পূর্ণতা পেয়েছে।
- বলেন কি! কিভাবে হল?
- সেটাই বলছি। তোমরা সাম্যবাদ বলতে যা বুঝাতে বা বুঝতে, সেটা এখন অনেক পালটে গেছে। বিগত এক দশক ধরে আমরা সেই সাম্যের মধ্যেই আছি।
- একটু বিস্তারিত বলুন শুনি।
- মনে কর তোমাকে যদি কেউ আঘাত করে, আবার তুমি তাকে পালটা আঘাত কর, তবে কি একটা ভারসাম্যের সৃষ্টি হবে না?
- হতে পারে।
- ব্যাপারটা ঠিক সেরকমই। তোমাদের সময় শক্তিশালী কলোনীগুলো দুর্বলদের শাসন করত। কারণ তাদের ছিল ক্ষমতা এবং অস্ত্র। এখন এই ক্ষমতা এবং অস্ত্র যদি সবার সমান থাকে, তবে দুর্বল আর শক্তিশালী বলে কিছু থাকবে না। যেমন ধর এখন ছোট-বড় সব কলোনী পারমানবিক অস্ত্রে সম্মৃদ্ধ।
- বলেন কি! এতে তো শান্তি দূরের কথা,বরং আরো বেশি যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হবার কথা।
- এখানেই তো আসল ব্যাপারটা। এখন মনে কর সবার শক্তিই সমান পাল্লায় চলে গিয়েছে। একটা কলোনী যদি আরেকটাকে আক্রোমণ করে বসে, তবে মাত্র কয়েক মিনিটেই উভয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ কি চায় নিজে নিজে ধ্বংস হয়ে যেতে? কেউ চায় না। তাই পৃথিবীর কেউ আর যুদ্ধের কথা মাথায়ই আনে না।
আমি ভাবছি স্বপ্নই বরং ভালো ছিল। জেগে উঠে এসব আমি কি দেখছি! লোকটা এসব কি বলছে! এমন কথা কেউ কন দিন শুনেছে কি? এ সময় ভাবলাম একটু শুনি এখনকার বিজ্ঞানের অবস্থা কি, কি কি অগ্রগতি হল--- ভ্রুণ শিশু, উন্নত চিকিৎসা, অমরত্ব, অসীম শক্তির এক উৎস আবিষ্কার, সুপার কন্ডাক্টর.... মহাকাশ গবেষণারই বা কি অবস্থা?
আমার প্রশ্নে সে হেসে জবাব দেয়, - ধূর! ওসব নিয়ে এখন কারো ভাবার সময় আছে নাকি?
- মানে কি? বিজ্ঞান নিয়ে এখন আর কোন কাজই হয় না?
- কে বলল হয় না? তাহলে নিত্যনতুন বোমা-পটকা আসছে কোত্থেকে?
- বোমা-পটকা এগুলো আবার কেমন বিজ্ঞান?
- আরে বোকারাম, এটাই আসল দরকারী বিজ্ঞান। বাকীগুলোর প্রয়োজনীয়তা সেই কবেই ফুরিয়ে গেছে। মানুষ এখন বুঝতে পারছে এগুলো তাদের দরকার নেই, কোনকালে ছিলও না।
বলে কি লোকটা? এত এত বিজ্ঞানের আবিষ্কার, এগুলোর কোনটাই দরকারী নয়? লোকটা আমার অবস্থা দেখে বলে,
- অত অবাক হওয়ার কি হল? তোমাদের সময়ও তো শুধু গোলা-বারুদ আর মারণাস্ত্র নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে এবং যত ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে, অন্য কিছু ততটা ছিল না। সেকালের পরাশক্তি বিভিন্ন গবেষণার আড়ালে বোমাবাজী নিয়ে কাজ করত, কারণ তারা জানত সেটাই সবচেয়ে দরকারী। আমরাও সেই প্রয়োজনটুকুই এখন মেটাচ্ছি।
- বুঝলাম, কিন্তু বোমা-পটকা দিয়ে কি কাজ সেটা বুঝলাম না।
- শোন, এখন আর আগের মত বড় বড় যুদ্ধ হয় না। তাই বলে কি ছোট খাট হামলা মারামারি কি হতে পারে না?
- তাহলে শান্তির কথা বললেন যে!
- বুঝো নাই? ওরা আমাদের কলোনীতে পটকা মারবে, আমরাও পালটা আরেকটা পটকা মেরে দিয়ে আসব। বলেই হা হা করে সে উঠল, যেন খুব মজার কিছু বলেছে। তারপর বলল, - তাহলে আমরা সমান হয়ে গেলাম না? এটাই হল সাম্য আর শান্তির মডেল।
আমার সবকিছু কেমন ঘোরের মত লাগছে। এ কোন মুল্লুকে এসে পরলাম আমি? ইস্, এটা যদি স্বপ্ন হত!! স্বপ্নের কথা ভাবতেই ক্যাপস্যুলের কথা মনে পরল, নিঃসঙ্গ ক্যাপস্যুল। মনে পরে ভীনগ্রহ থেকে আবার ফিরে আসার জন্য আমাকে আবার একশ' বছর ঘুমোতে হত ক্যাপস্যুলে। এই অদ্ভূত মানুষদের সাথে থাকার চেয়ে আমি বরং ঘুমিয়ে থাকি, সেটা ভালো। একবার ঘুমোলে আমাকে আর পাবে কে? একশ' বছর কিছু কিছু হয়নি, বাকি একশ' বছরেও কেউ আমাকে জাগাতে পারবে না। আমি তাই ঘুরে হাটা দেয়ার চেষ্টা করি,
- আমি যাই।
- কোথায়?
- তোমাদের পৃথিবীর সাথে আমি টিকতে পারছি না। আমি বরং ঘুম দেই।
- বলো কি? তোমাকে আমাদের কিরকম ভীষণ দরকার জানো? স্বাদে কি তোমাকে খুজে বার করেছি?
- আমার আবার কি কাজ?
- কারণ আমরা অনেক চেষ্টা করেও অস্ত্র গবেষণার খুব একটা উন্নতি করতে পারছি না। আমাদের পূর্ব-পুরুষরা অনেক জ্ঞানী ছিল। কিন্তু মাঝখানে এক সময় এক ধ্বংসযজ্ঞের সময় তাদের সেই বিজ্ঞান হারিয়ে গেছে। সব বই নষ্ট হয়ে গেছে, ইন্টারনেট ব্যাবস্থা ভেস্তে গেছে, এভাবে সব হারিয়ে ফেলেছি আমরা। কিন্তু তুমি আমাদের পূর্ব-পুরুষদের আমলের মানুষ এবং বিজ্ঞানের লোক। তাই তোমার সাহায্য চাই আমরা।
- কি সাহায্য?
- যেই ভারসাম্যের কথা আমি বললাম, সেটা আমরা ভেঙ্গে দিব। তারপর আমরা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হব, পুরো পৃথিবী শাসন করব। শুধু আমাদের অন্যদের তুলনায় একটু শক্তিশালী হতে হবে, আরো উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র দরকার হবে। তোমার জ্ঞান কে আমরা কাজে লাগাবো।
আমি প্রমাদ গুনলাম। এই লোক যা বলছে তা হল আমাকে কাজে লাগিয়ে তারা একটা বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে। আমি এ কাজ করতে পারব না, এরকম একটা সংঘাতের সূচনা করতে পারব না। তাকে বললাম, - যদি আমি সাহায্য না করি?
সে হেসে বলে, - তোমাকে করতেই হবে।
আমি দেখি অদূরে কিছু লোক অদ্ভূত-দর্শণ কিছু অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা জোড় করে কাজ আদায় করে নিতে প্রস্তুত, এখন ছুটে পালিয়ে যাবার উপায়ও নেই।