সর্বশেষ আপডেটঃ আটককৃতরা সবাই ছাড়া পেয়েছেন।
আপডেটঃ
কনকো ফিলিপ্সএর সাথে চুক্তি বিরোধী আন্দোলনের সময়ই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে বিদেশী প্রভু এবং নিজেদের হালুয়া রুটির স্বার্থে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের ধার ধারেনা, বিনা অপরাধে দমন নিপিড়ন এবং গন গ্রেফতারের পথ বেছে নিতে তাদের কোন দ্বিধা নাই। যে কোন আন্দোলনকে একেবারে গোড়াতেই দমন নিপিড়নের মাধ্যমে শেষ করে দেয়াই তাদের পরিকল্পনা।
আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। জাদুঘরের সামনে পৌছে যখন দেখলাম শত শত পুলিশ আর প্রিজন ভ্যানে একে একে তোলা হচ্ছে জগন্নাথের ছাত্রদের তখন একিসাথে বহু ধরণের অনুভুতি আর চিন্তাভাবনা ভর করছিল মাথায়। অনলাইনে প্রচার পাওয়া এবং অনলাইনে সংগঠিত হওয়া একটা কর্মসূচী নিয়েও প্রশাসন এতটা আক্রমনাত্বক হয়ে উঠেছে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে, আমার ধারণা ছিল এই দিন বাংলাদেশে আসতে আরো সময় লাগবে। সেই সাথে সোসাল মিডিয়াকেন্দ্রীক গণ আন্দোলনকে যে জনস্বার্থবিরোধী শাসকগোষ্ঠী এরি মাঝে ভয় পাওয়া শুরু করেছে সেটাও পরিস্কার হলো। হতাশাবোধ করছিলাম এই ভেবে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের এই কর্মসূচীটাও বুঝি ভেস্তে গেলো। সিনিয়র এক ব্লগারের ফোনে জানতে পারলাম ৩টা থেকেই পুলিশ দখল করে নিয়েছে কর্মসূচীর স্থল আর ৩টা ৩০ থেকে শুরু হয়েছে গনগ্রেফতার। জানতে পারলাম ব্লগাররা সবাই মিলিত হচ্ছেন আজিজ সুপার মার্কেটে। একে একে আজিজ সুপার মার্কেটে জড়ো হতে থাকি আমরা, স্বিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করি পরবর্তি কর্মসূচীর। এটা পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে আমাদের। ৩ দিনমজুরদের একজন যিনি আজ উপস্থিত ছিলেন হঠাৎ বলে ওঠেন গ্রেফতার হলে হবো, আমরা সমাবেশ করবোই। গ্রেফতার হলে হবো, কিন্তু ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াবোনা এই স্বিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা রওনা হই শাহবাগে জাদুঘরের দিকে। শাহবাগে পৌছে এগোতে এগোতেই চোখে পরে বেশ কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্লগার, ছাত্রবন্ধুদের। পুলিশ আমাদের ভালো মতো খেয়াল করার আগেই আমরা হঠাৎ করেই ব্যানার মেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরি। চোখের পলকে চারদিক থেকে এসে জড় হয় বেশ কয়েকজন ছাত্র জনতা আর সেই সাথে টিভি পত্রিকার সাংবাদিকরা। মিডিয়ার এতগুলা ক্যামেরার সামনে দেখেই বোধহয় তরিঘরি আর কোন একশনে যেতে চায় নাই পুলিশ। এরপর আমরা শুরু করি সমাবেশ। একে একে বক্তৃতা রাখতে থাকেন বেশ কয়েকজন তরুন ব্লগার, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং জগন্নাথের কয়েকজন ছাত্র। দেখতে দেখতে সমাবেশটা বড় হতে থাকে। গ্রেফতারের ভয়ে চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ছাত্র, জনতারা আস্তে আস্তে এসে আমাদের চারপাশে জড় হতে থাকেন। ছোট্ট সমাবেশটা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ধিরে ধিরে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ব্লগার বাকী বিল্লাহ এবং ব্লগার ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফের আগুন ঝড়া বক্তব্যে এক পর্যায়ে সমাবেশটা পরিণত হয় এক গণ বিক্ষোভে। এরপর শত শত ছাত্র জনতাকে নিয়ে আমরা মিছিল করে এগিয়ে যাই রাজু ভাস্কর্যের দিকে। এতবড় গণবিক্ষোভ আটকানোর সাহস আর দেখাই নাই পুলিশ।
রাজু ভাস্কর্যে পৌছে আগামী মোঙ্গলবার শহীদ মিনারে পরবর্তি কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়ে আমরা আমাদের আজকের কর্মসূচীর সমাপ্তি টানি। এরপরের কাহিনী পুলিশের কাছ থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটককৃতদের ছারিয়ে আনার চেষ্টার। অনুষ্ঠানের শেষেই আমরা শাহবাগ থানায় পৌছাই। পুলিশের কাছে আমাদের দাবি ছিল যে আমরা এই কর্মসূচীর আহবান করেছি, এই ছাত্ররা তাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছিল। যদি গ্রেফতার করতে হয় আমাদের করুন, এদের ছেরে দিন, এদের বিরুদ্ধে তো কোন অভিযোগ নাই, এরা কিছু করে নাই। শুরুতে অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে তাদের ছেরে দেয়ার আশ্বাস দিলেও ঠিক কি বিবেচনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের আটকে রেখেছে সেইটা কোন সুস্থ্য যুক্তি বুদ্ধিতে বুঝে ওঠা কঠিন।
বিনা অপরাধে আটককৃত ২৯ জনের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।
আজকে আমাদের কর্মসূচী ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু আমরা সব বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচী সফল করেছি। জনগণ যদি একজোট হয় তবে কোন দমন নিপিড়ন তাদের দমিয়ে রাখতে পারবেনা, এইটা পরিস্কার। সহব্লগার বন্ধুরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে সংহতি জানানো অব্যাহত রাখুন। দাবি আদায়ে সফলতা আসবেই, বাধা যতই আসুক না কেনো।
--------------------------------------------------------------------------
পুরনো পোস্টঃ
বিগত ২০০৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালিন শাসক গোষ্টির হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক একখানা প্রকল্পের ফর্দ ধরায়া দিছিলেন বর্তমান দুনিয়ার পূজিতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক ডাকাইত দলের সুভদ্র মোড়ল বিশ্বব্যাংক। ব্রিটিশ আমলে ম্যাকলে প্রমুখ লাট সাহেবদের প্রদানকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক ফর্দ গ্রহন করার অভ্যাস বাংলাদেশের গনতন্ত্রী অথবা স্বৈরতন্ত্রী, কোন শ্রেণীর শাসক গোষ্ঠিই ছারতে পারেন নাই। তার উৎকৃষ্ট প্রমান হইল যে সকল প্রকার বাস্তবতা এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এই প্রকল্প বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যেমন সাদরে গ্রহণ করা হইছিল তেমনি বর্তমানে বিপূল গনভোট নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারও তা বাস্তবায়নে বধ্যপরিকর। আর তারই ফলাফল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সরকারের নিদারুন অবহেলা এবং কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক স্বিদ্ধান্ত এবং এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উত্তাল বিক্ষোভ। মোড়ল বিশ্বব্যাংকের ঐ ফর্দ ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সবগুলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলারে আস্তে আস্তে বেসরকারিকরণের প্রকল্প হাতে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই গত ৫ বছরে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বেতন অথবা ভর্তি ফি, রেজিষ্ট্রেশন, ক্যান্টিনের খরচ ইত্যাদির পরিমান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে। সরকারি ভর্তুকি ব্যাতিত এত দ্রুত গতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব তারও নানান তরিকা বাতলায়ে দিছেন মোড়ল বিশ্বব্যাংক। শোনা যায়, বেতন সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি বাদেও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে গরু ছাগল চাষাবাদ করার পরামর্শ এইসকল তরিকা সমূহের অন্যতম। আশংকা করিযে, সেইদিন আর দুরে নাই যেইদিন বাংলাদেশের ছাত্র শিক্ষক পড়াশোনা বাদ দিয়া ক্যাম্পাসের মাঠে গরু ছাগল চাষ কইরা কৃষিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখবে।
তবে মোড়লের দেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ না, এইটা বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠির অজানা না। আর এই কারণেই পুরানা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলার বদলে প্রকল্পের মডেল হিসাবে গ্রহন করা হইছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই কারনেই পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময়ই তাকে ক্রম বেসরকারিকরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা করতে হইছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিদের মধ্যে অন্যতম। তাদের না আছে পরিপূর্ণ আবাসন, না আছে যান বাহন, না আছে উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ, এর মাঝে যুক্ত হইছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার মরার উপরে খাড়ার ঘা। দেয়ালে পিঠ ঠেইকা যাওয়া এই পোলাপানগুলা জান প্রান দিয়া আন্দোলন করবে না তো করবে কেডা? সেই আন্দোলন করতে গিয়াও দোষ, আওয়ামী সরকারের ব্যাপক ব্যাকাপে নয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পেটোয়া পুলিশ বাহিনী আর সদা কামোত্তেজিত সোনার ছাওয়ালদের সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে লাত্থিগুতা খাইতে হয়, ন্যায্য দাবি চাইতে গিয়া জেলে আটক থাকতে হয়, শিবির ট্যাগ খাইতে হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থারে শুধুমাত্র বড়লোকের সম্পত্তি আর সৃষ্টিশীলতাহীন দাস শ্রেণীর শিক্ষা ব্যবস্থা বানাইতে বদ্ধপরিকর আওয়ামীলীগ সরকার যতই শিবির ট্যাগ মারুক না কেন, এই হাজার হাজার আন্দোলনকারী পোলাপাইন যে বিম্পি শিবিরের ভারাইট্যা লাইঠাল না তা বুঝবেনা বাংলাদেশের মানুষ এত ভোদাই না।
সারা দুনিয়াতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দুনিয়ার সব শতভাগ শিক্ষিত রাষ্ট্রগুলাতেও এখনো শিক্ষা খাতে বিপূল পরিমান ভর্তুকি দেয় সরকারগুলা। ইউরোপের বহু শিল্পন্নত এবং শতভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রেও এখনো বিনা পয়সার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করা যায়। গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাওয়া যেইখানে একটা ফকিরের পোলারও গনতান্ত্রিক অধিকার, সেইখানে এইসকল সরকারি ভর্তুকির বিকল্প নাই, বিকল্প নাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরও। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল এবং বিপূল পরিমান শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রে এর গুরুত্ব আরো বেশি। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়া বিশ্বব্যাংকের এইসব মোড়লগিরী আর যাই হউক, বাংলাদেশের মানুষের কল্লান চিন্তায় যে করা হয়না, সেইটা বুঝতে খুব বেশি চালাক হওয়ার দরকার পরেনা।
বাংলাদেশ এত ফকির না যে এত অল্প কয়েকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালাইতে পারবেনা। প্রতি বছর বলা হয় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি, তারপরে দেখা যায় সেই বাজেটের একটা বড় অংশই যায় সামরিক এবং অন্যান্য খাতে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ২০১০ সালে যেই বরাদ্দ পাইছে ৩০৬টা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সমান। সামরিক খাতে মাত্র ১ শতাংশ খরচ কমাইলে তা দিয়া ৩টা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পালা সম্ভব সরকারের পক্ষে। বাংলাদেশে যেইখানে আরো বেশি বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া দরকার, যেইখানে গবেষনা এবং অন্যান্য খাতে এইসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপূল পরিমান ভর্তুকি বৃদ্ধী করা দরকার সেইখানে সরকারের এই ধরণের আচরন আর যাই হউক জনস্বার্থের পক্ষে যায়না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী কইতে গিয়া এত কথা কওয়ার অর্থ একটাই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেফ শুরু মাত্র, এরপরে দেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়রে ধরা হবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারলে বাকিগুলাও আস্তে আস্তে করে ফেলা হবে। বাংলাদেশের বিপূল পরিমান জনগষ্ঠি যেইখানে এমনিতেই শিক্ষা বঞ্চিত সেইখানে এই জাতীয় প্রকল্প এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলার প্রতি এই জাতীয় আচরণ বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি হবে।
আমি তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পক্ষে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগ এলাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের পক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হইছে। এই সমাবেশে উপস্থিত থাইকা মত বিনিময় করবে এবং নিজেদের দাবি দাওয়া তুলে ধরবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দলোনরত শিক্ষার্থীরা। আমিও সেইখানে থাকবো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দলোনের সময় জন্ম নেয়া “জাতীয় স্বার্থে ব্লগার -অনলাইন একটিভিস্ট”এর ব্যানারে। এই ন্যায্য আন্দোলনে সংহতি জানাইতে সবাইকে আগায়া আসার আহবান জানাই। আপডেটঃ
কনকো ফিলিপ্সএর সাথে চুক্তি বিরোধী আন্দোলনের সময়ই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে বিদেশী প্রভু এবং নিজেদের হালুয়া রুটির স্বার্থে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের ধার ধারেনা, বিনা অপরাধে দমন নিপিড়ন এবং গন গ্রেফতারের পথ বেছে নিতে তাদের কোন দ্বিধা নাই। যে কোন আন্দোলনকে একেবারে গোড়াতেই দমন নিপিড়নের মাধ্যমে শেষ করে দেয়াই তাদের পরিকল্পনা।
আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। জাদুঘরের সামনে পৌছে যখন দেখলাম শত শত পুলিশ আর প্রিজন ভ্যানে একে একে তোলা হচ্ছে জগন্নাথের ছাত্রদের তখন একিসাথে বহু ধরণের অনুভুতি আর চিন্তাভাবনা ভর করছিল মাথায়। অনলাইনে প্রচার পাওয়া এবং অনলাইনে সংগঠিত হওয়া একটা কর্মসূচী নিয়েও প্রশাসন এতটা আক্রমনাত্বক হয়ে উঠেছে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে, আমার ধারণা ছিল এই দিন বাংলাদেশে আসতে আরো সময় লাগবে। সেই সাথে সোসাল মিডিয়াকেন্দ্রীক গণ আন্দোলনকে যে জনস্বার্থবিরোধী শাসকগোষ্ঠী এরি মাঝে ভয় পাওয়া শুরু করেছে সেটাও পরিস্কার হলো। হতাশাবোধ করছিলাম এই ভেবে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের এই কর্মসূচীটাও বুঝি ভেস্তে গেলো। সিনিয়র এক ব্লগারের ফোনে জানতে পারলাম ৩টা থেকেই পুলিশ দখল করে নিয়েছে কর্মসূচীর স্থল আর ৩টা ৩০ থেকে শুরু হয়েছে গনগ্রেফতার। জানতে পারলাম ব্লগাররা সবাই মিলিত হচ্ছেন আজিজ সুপার মার্কেটে। একে একে আজিজ সুপার মার্কেটে জড়ো হতে থাকি আমরা, স্বিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করি পরবর্তি কর্মসূচীর। এটা পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে আমাদের। ৩ দিনমজুরদের একজন যিনি আজ উপস্থিত ছিলেন হঠাৎ বলে ওঠেন গ্রেফতার হলে হবো, আমরা সমাবেশ করবোই। গ্রেফতার হলে হবো, কিন্তু ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াবোনা এই স্বিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা রওনা হই শাহবাগে জাদুঘরের দিকে। শাহবাগে পৌছে এগোতে এগোতেই চোখে পরে বেশ কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্লগার, ছাত্রবন্ধুদের। পুলিশ আমাদের ভালো মতো খেয়াল করার আগেই আমরা হঠাৎ করেই ব্যানার মেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরি। চোখের পলকে চারদিক থেকে এসে জড় হয় বেশ কয়েকজন ছাত্র জনতা আর সেই সাথে টিভি পত্রিকার সাংবাদিকরা। মিডিয়ার এতগুলা ক্যামেরার সামনে দেখেই বোধহয় তরিঘরি আর কোন একশনে যেতে চায় নাই পুলিশ। এরপর আমরা শুরু করি সমাবেশ। একে একে বক্তৃতা রাখতে থাকেন বেশ কয়েকজন তরুন ব্লগার, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং জগন্নাথের কয়েকজন ছাত্র। দেখতে দেখতে সমাবেশটা বড় হতে থাকে। গ্রেফতারের ভয়ে চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ছাত্র, জনতারা আস্তে আস্তে এসে আমাদের চারপাশে জড় হতে থাকেন। ছোট্ট সমাবেশটা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ধিরে ধিরে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ব্লগার বাকী বিল্লাহ এবং ব্লগার ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফের আগুন ঝড়া বক্তব্যে এক পর্যায়ে সমাবেশটা পরিণত হয় এক গণ বিক্ষোভে। এরপর শত শত ছাত্র জনতাকে নিয়ে আমরা মিছিল করে এগিয়ে যাই রাজু ভাস্কর্যের দিকে। এতবড় গণবিক্ষোভ আটকানোর সাহস আর দেখাই নাই পুলিশ।
রাজু ভাস্কর্যে পৌছে আগামী মোঙ্গলবার শহীদ মিনারে পরবর্তি কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়ে আমরা আমাদের আজকের কর্মসূচীর সমাপ্তি টানি। এরপরের কাহিনী পুলিশের কাছ থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটককৃতদের ছারিয়ে আনার চেষ্টার। অনুষ্ঠানের শেষেই আমরা শাহবাগ থানায় পৌছাই। পুলিশের কাছে আমাদের দাবি ছিল যে আমরা এই কর্মসূচীর আহবান করেছি, এই ছাত্ররা তাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছিল। যদি গ্রেফতার করতে হয় আমাদের করুন, এদের ছেরে দিন, এদের বিরুদ্ধে তো কোন অভিযোগ নাই, এরা কিছু করে নাই। শুরুতে অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে তাদের ছেরে দেয়ার আশ্বাস দিলেও ঠিক কি বিবেচনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের আটকে রেখেছে সেইটা কোন সুস্থ্য যুক্তি বুদ্ধিতে বুঝে ওঠা কঠিন।
বিনা অপরাধে আটককৃত ২৯ জনের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।
আজকে আমাদের কর্মসূচী ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু আমরা সব বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচী সফল করেছি। জনগণ যদি একজোট হয় তবে কোন দমন নিপিড়ন তাদের দমিয়ে রাখতে পারবেনা, এইটা পরিস্কার। সহব্লগার বন্ধুরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে সংহতি জানানো অব্যাহত রাখুন। দাবি আদায়ে সফলতা আসবেই, বাধা যতই আসুক না কেনো।
--------------------------------------------------------------------------
পুরনো পোস্টঃ
বিগত ২০০৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালিন শাসক গোষ্টির হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক একখানা প্রকল্পের ফর্দ ধরায়া দিছিলেন বর্তমান দুনিয়ার পূজিতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক ডাকাইত দলের সুভদ্র মোড়ল বিশ্বব্যাংক। ব্রিটিশ আমলে ম্যাকলে প্রমুখ লাট সাহেবদের প্রদানকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক ফর্দ গ্রহন করার অভ্যাস বাংলাদেশের গনতন্ত্রী অথবা স্বৈরতন্ত্রী, কোন শ্রেণীর শাসক গোষ্ঠিই ছারতে পারেন নাই। তার উৎকৃষ্ট প্রমান হইল যে সকল প্রকার বাস্তবতা এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এই প্রকল্প বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যেমন সাদরে গ্রহণ করা হইছিল তেমনি বর্তমানে বিপূল গনভোট নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারও তা বাস্তবায়নে বধ্যপরিকর। আর তারই ফলাফল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সরকারের নিদারুন অবহেলা এবং কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক স্বিদ্ধান্ত এবং এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উত্তাল বিক্ষোভ। মোড়ল বিশ্বব্যাংকের ঐ ফর্দ ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সবগুলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলারে আস্তে আস্তে বেসরকারিকরণের প্রকল্প হাতে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই গত ৫ বছরে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বেতন অথবা ভর্তি ফি, রেজিষ্ট্রেশন, ক্যান্টিনের খরচ ইত্যাদির পরিমান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে। সরকারি ভর্তুকি ব্যাতিত এত দ্রুত গতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব তারও নানান তরিকা বাতলায়ে দিছেন মোড়ল বিশ্বব্যাংক। শোনা যায়, বেতন সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি বাদেও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে গরু ছাগল চাষাবাদ করার পরামর্শ এইসকল তরিকা সমূহের অন্যতম। আশংকা করিযে, সেইদিন আর দুরে নাই যেইদিন বাংলাদেশের ছাত্র শিক্ষক পড়াশোনা বাদ দিয়া ক্যাম্পাসের মাঠে গরু ছাগল চাষ কইরা কৃষিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখবে।
তবে মোড়লের দেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ না, এইটা বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠির অজানা না। আর এই কারণেই পুরানা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলার বদলে প্রকল্পের মডেল হিসাবে গ্রহন করা হইছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই কারনেই পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময়ই তাকে ক্রম বেসরকারিকরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা করতে হইছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিদের মধ্যে অন্যতম। তাদের না আছে পরিপূর্ণ আবাসন, না আছে যান বাহন, না আছে উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ, এর মাঝে যুক্ত হইছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার মরার উপরে খাড়ার ঘা। দেয়ালে পিঠ ঠেইকা যাওয়া এই পোলাপানগুলা জান প্রান দিয়া আন্দোলন করবে না তো করবে কেডা? সেই আন্দোলন করতে গিয়াও দোষ, আওয়ামী সরকারের ব্যাপক ব্যাকাপে নয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পেটোয়া পুলিশ বাহিনী আর সদা কামোত্তেজিত সোনার ছাওয়ালদের সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে লাত্থিগুতা খাইতে হয়, ন্যায্য দাবি চাইতে গিয়া জেলে আটক থাকতে হয়, শিবির ট্যাগ খাইতে হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থারে শুধুমাত্র বড়লোকের সম্পত্তি আর সৃষ্টিশীলতাহীন দাস শ্রেণীর শিক্ষা ব্যবস্থা বানাইতে বদ্ধপরিকর আওয়ামীলীগ সরকার যতই শিবির ট্যাগ মারুক না কেন, এই হাজার হাজার আন্দোলনকারী পোলাপাইন যে বিম্পি শিবিরের ভারাইট্যা লাইঠাল না তা বুঝবেনা বাংলাদেশের মানুষ এত ভোদাই না।
সারা দুনিয়াতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দুনিয়ার সব শতভাগ শিক্ষিত রাষ্ট্রগুলাতেও এখনো শিক্ষা খাতে বিপূল পরিমান ভর্তুকি দেয় সরকারগুলা। ইউরোপের বহু শিল্পন্নত এবং শতভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রেও এখনো বিনা পয়সার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করা যায়। গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাওয়া যেইখানে একটা ফকিরের পোলারও গনতান্ত্রিক অধিকার, সেইখানে এইসকল সরকারি ভর্তুকির বিকল্প নাই, বিকল্প নাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরও। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল এবং বিপূল পরিমান শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির রাষ্ট্রে এর গুরুত্ব আরো বেশি। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়া বিশ্বব্যাংকের এইসব মোড়লগিরী আর যাই হউক, বাংলাদেশের মানুষের কল্লান চিন্তায় যে করা হয়না, সেইটা বুঝতে খুব বেশি চালাক হওয়ার দরকার পরেনা।
বাংলাদেশ এত ফকির না যে এত অল্প কয়েকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালাইতে পারবেনা। প্রতি বছর বলা হয় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি, তারপরে দেখা যায় সেই বাজেটের একটা বড় অংশই যায় সামরিক এবং অন্যান্য খাতে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ২০১০ সালে যেই বরাদ্দ পাইছে ৩০৬টা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সমান। সামরিক খাতে মাত্র ১ শতাংশ খরচ কমাইলে তা দিয়া ৩টা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পালা সম্ভব সরকারের পক্ষে। বাংলাদেশে যেইখানে আরো বেশি বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া দরকার, যেইখানে গবেষনা এবং অন্যান্য খাতে এইসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপূল পরিমান ভর্তুকি বৃদ্ধী করা দরকার সেইখানে সরকারের এই ধরণের আচরন আর যাই হউক জনস্বার্থের পক্ষে যায়না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী কইতে গিয়া এত কথা কওয়ার অর্থ একটাই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেফ শুরু মাত্র, এরপরে দেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়রে ধরা হবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারলে বাকিগুলাও আস্তে আস্তে করে ফেলা হবে। বাংলাদেশের বিপূল পরিমান জনগষ্ঠি যেইখানে এমনিতেই শিক্ষা বঞ্চিত সেইখানে এই জাতীয় প্রকল্প এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলার প্রতি এই জাতীয় আচরণ বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি হবে।
আমি তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পক্ষে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগ এলাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের পক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হইছে। এই সমাবেশে উপস্থিত থাইকা মত বিনিময় করবে এবং নিজেদের দাবি দাওয়া তুলে ধরবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দলোনরত শিক্ষার্থীরা। আমিও সেইখানে থাকবো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দলোনের সময় জন্ম নেয়া “জাতীয় স্বার্থে ব্লগার -অনলাইন একটিভিস্ট”এর ব্যানারে। এই ন্যায্য আন্দোলনে সংহতি জানাইতে সবাইকে আগায়া আসার আহবান জানাই।