আহা! বছরের একটা দিনই তো মাত্র! পাঁচন গেলার মত করে ব্যাপারটা নিঃশব্দে হজম করে নিলেন না কেনক্কপ্রাণায়াম- যোগ- কুস্তি দিবসের মতো বিশ্ব অহিংসা দিবসের স্বার্থে একটা দিন একটু অহিংসার অনুশীলন করলেন না কেন? বাপুর জন্মদিনে এটুকু করতে পারবেন না? রোজই তো হিংসার ষোলো কলা পূর্ণ করে আপনি সুখে থাকার অভিনয় করে চলেন৷ একটা দিন না হয় একটু অসুখী থাকবেন! নাকি ভাবছেন, থাকবেন কী করে?
রোজ সকাল থেকেই তো শুরু হয়ে যায় আপনার হিংসুটেপনা৷ মিনিবাসে লেডিজ সিটের পাশটিতে দাঁড়িয়ে তক্কে তক্কে থাকেন৷ তারপর সুযোগ পেলেই ছুটে গিয়ে বসে পড়েন সিনিয়র সিটিজেনের সিটে৷ দিব্যি চোখ সরিয়ে নিলেন সামনে দাঁড়ানো পাকা চুলের লোকটির দিক থেকে৷ যতক্ষণ না কেউ আপনাকে মনে করিয়ে দেয়, এটা তো আপনার মনেই পড়বে না৷ উল্টে মনে মনে আপনার তখন প্রচুর য়ুক্তি সাজানো চলছে৷ অফিসে গিয়ে টানা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে বসের ফাইল দেখে দিতে হবে৷ কাউন্টারের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে অফিস কলিগ মিনি, দেবারতিদের ক্যাশ টাকাগুলো গুনে দিতে হবে৷ তার জন্য এই মিনি বাসের দু’দণ্ড বসাটুকুই কত না শান্তির!
বলছেন, আপনি একা হিংসুটে নন৷ আপনার ঠিকে ঝি থেকে শুরু করে শাশুড়ি, সকলেই হিংসুটে দ্য গ্রেট৷ মেয়েদের হিংসুটেপনার প্রথম পাঠটাই তো শুরু হয় শ্বশুরবাড়িতে৷ কথায় কথায় বাপের বাড়ি তুলে এটা-ওটা শোনানো তো আপনার শ্বশুরবাড়ির মজ্জাগত অভ্যেস৷ সে তো অবশ্য নিরূপমার যুগ থেকেই চলে আসছে, আপনি তো কোন ছার! মহিলা নিগ্রহ তো হাল আমলেও সেই একই আছে৷ বরং নিগ্রহের ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে৷ ঘর ছেড়ে বাইরে এসে পড়েছে সে ঢেউ৷ দিল্লি থেকে কামদুনি, রানাঘাট সর্বত্র এক ছবি৷ সবচেয়ে মুশকিল হচ্ছে, কে যে হিংসুটে আর কে যে হিংসুটে নয়, এটাই বোঝা যাচ্ছে না৷ টিভিতে ‘শাস-বহু’ সিরিয়ালের হিংসুটে শাশুড়ি বৌমা তো অহরহ ঘরোয়া বিষ ছড়াচ্ছে মানুষের মনের ভেতর৷ যদিও সেটা থেকে বাঁচতে সাবধানতার পথ নেননি আপনি৷ বরং আপনি সাবধানতা নিয়েছেন সোয়াইন ফ্লু, আর্সেনিকের ভাইরাস থেকে বাঁচার৷ কিন্তু লক্ষ করেছেন কি আপনার চারপাশটা আরও সঙ্কটজনক?
হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করেননি কি কখনও কখনও রাস্তার চাউমিনের মত আমাদের চিন্তাভাবনা বিবেকটুকুও কেমন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে৷ নইলে কি সাইকেল চোর সন্দেহে ১২বছরের কিশোরকে গণপিটুনি দিয়ে খুন করতে পারা যায়ঞ্জ কিংবা আম পাড়ার অপরাধে প্রতিবেশিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কি করে রক্তাক্ত করে ফেললেন জনৈক ভদ্রলোক? ভেবে দেখেছেন কি, এই হিংসার ভাইরাসটা থেকে বাঁচতে কোন সাবধানতা অবলম্বন করবেন?
এই ভাইরাস তো আমাদের সভ্যতার মজ্জায়৷ শ্রমিক ছাঁটাই, কর্মী অসন্তোষ, লক আউট কি আর আজকের ব্যাপার? মিটিং- মিছিল- দাঙ্গা- মাথা ফাটানো তো শিক্ষিত, সুসভ্য নাগরিকের সভ্যতা দেখানোর জায়গা৷ দেখাতে হবে না কতটা আঁতেল হয়েছেন তাঁরা! রাজনীতি আর ধর্মের নামে আবার কোন আঁতলামি দেখানো মানেই একশো শতাংশ স্বেচ্ছায় বাঁশের ডেলিভারি নেওয়া৷ সেটা পাবেন বিনামূল্যে৷ বরং রাজনৈতিক নেতা আর ধর্মগুরুরা তা আপনার বাড়িতেই পৌঁছে দেবেন৷ কাজেই ও ব্যাপারে কিছু না বলাই ভাল!
কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি সারা পৃথিবী ব্যাপী হিংসা তাড়িত একদল মানুষের শান্তি হবে কিসে? স্বাধীনতা, ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের রক্ত নিয়ে যারা হোলি খেলেন, তাঁদের এই উন্মত্ততা কমবে কিসে? কোন ভাইরাসের জন্য তাঁদের এমন অবস্হা? যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে আজ শরণার্থীরা যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, এ কথা কি মনে করিয়ে দিচ্ছে না বাংলাদেশের সেই দিনগুলোর কথা? বড় বড় কোম্পানির ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ নীতির পাল্লায় পড়ে কি আপনার পাশের বাড়ির লোকটি ক্রমশঃ হিংস্র হয়ে উঠছে না? প্রতিদিন চাকরি চলে যাওয়ার আতঙ্কে তার রোজ রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা, বউ পেটানো কি আপনার চোখে পড়ছে না?
সবই পড়ছে মশাই! কিন্তু তাতে কি এসে যায়! ঐ আপনি ব্যস্ত আপনার উন্নতির চিন্তা নিয়ে, আমি ব্যস্ত আমারটা নিয়ে৷ তার বাইরে কি থেকে কি আসে বা যায় থোড়াই কেয়ার৷
তাই বলছি সোজা পথটা হল দিনে নিয়ম করে নিঃশ্বাস ধরা আর ছাড়ার মত করে আপনিও অহিংসার একটু অনুশীলন করুন৷ চ্যারিটি বিগিনস্ অ্যাট হোম৷ দেখবেন মস্তিষ্কে মুক্ত অক্সিজেন ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা ভাবনার জটগুলো ক্রমশঃ খুলছে৷ পরের বছর বিশ্ব অহিংসা দিবস যাতে ভাল কাটে তার চেষ্টা করা যাক এখন থেকেই৷ খুব বড়সড সমাজসংস্কারক আপনাকে হতে বলছি না৷ গুচ্ছ গুচ্ছ কালোটাকা বিলোনোরও দরকার নেই৷ শুধু ঠিক করুন, এই মুহূর্ত থেকে আপনি সজ্ঞানে কারও ক্ষতি করবেন না, ক্ষতি চাইবেন না৷ ব্যস্, তাহলেই দেখবেন হিংসা অনেকটা পিছু হটেছে৷ ভালবাসার সুরভিতে ভুরভুর করছে চারপাশ৷
সোর্স: শপথ-নিতে-পারেন-সজ্ঞানে-কা
১. ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:২২ ০
এই প্রো-পিকটা "আমার ব্লগ"এ দেখেছিলাম; আপনি কি একই ব্লগার?