একটা সময় ছিল দু চার পাড়া মহল্লা ঘুরে একজন লেখক কিংবা কবি পাওয়া দুষ্কর হতো। আর বই বের করার মত লেখক ছিলো হাতেগোনা। সে সময়কার একটা প্রবাদ ছিলো, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। কিন্তু আজকের সময়ে এই প্রবাদ কতটা সত্য তা আমার জানা নেই । তবে ভাবার্থে মানুষ বই কিনে যেমন দেউলিয়া না হওয়ার কথা বলা হয়েছে সে যায়গায় এখন বই কিনে মানুষ ঠকে এই কথাটার গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। কারণ এখন লেখক কবি ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে! প্রতি বই মেলায় শত শত বই বের হয় নতুন লেখকদের, বছরজুড়ে তো আরো কিছু বের হয়। এই দূর্মূল্যের বাজারে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিজ গরজে মেটাতে যে হিমশিম খেতে হয় সেখানে বইও অনেক হিসেব নিকেশ করে কিনতে হয়।এছাড়াও বছরজুড়ে অনেক পাঠ্যপস্তুক, খাতাপত্রতো কিনতেই হয় । এই শিক্ষিত হওয়ার দৌড়ঝাঁপের ফাঁদে পড়ে 'আউট অফ দ্যা বক্সের' বইপত্র ক্রয় করাটা হয়ে গেছে সামর্থের ব্যাপার ! তাই মানুষকে বই কিনতে হিসেব নিকেশ করতেই হয়! ধরুন দু'শত টাকা দিয়ে আপনি একটা বই কিনেছেন, যদি বইটা না কিনতেন সেই টাকা দিয়ে দেশের আর্থিক মাপকাঠির হিসেবে ৪ থেকে ৫ কেজি চাল কিনতে পারতেন। সেই চালে আপনার ৮ থেকে ১০ দিন চলতো। এক কেজি মাছ কিংবা মুরগিও কিনতে পারতেন, আট দশ কেজি আলুও কিনতে পারতেন। এতে আপনার পরিবারের পুষ্টি সাধন হয়। আপনার পরিবারের স্বাস্থের সুরক্ষা হয়। তাহলে শুধু শুধু একটা বই কেন কিনবেন?
মুলত বইয়ের ব্যাপারটা মানসিক স্বাস্থের সাথে সম্পর্কিত। আপনার পরিবারের মনস্ত্বাত্বিক পুষ্টির জন্য আপনি বই কিনবেন। কিন্তু যদি অনুরোধ রাখতে গিয়ে টাকা গচ্ছা দিয়ে মানহীন বই কিনে আনলেন। আদতে আপনার পরিবারের মানসিক পুষ্টি তো মিটলোই না উল্টো মানসিক পুষ্টিহীনতা দেখা দিলো! বইগুলো পড়ে আফসোসে ভুগলেন এই ভেবে যে অর্থটা জলে গেল এবং কিছুদিন পর পুরানো পেপার পত্রের সাথে বইগুলো কেজি দরে বিক্রি করে দিলেন! যে লেখক নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সখ আহ্লাদ মেটানোর জন্য কিংবা নিজেকে লেখকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য মানহীন একটা বই বের করলো তার খরচ হওয়া অর্থ উঠানোর দায়িত্ব আপনার না মোটেও। আমার মনে হয়, এমন অনুরোধ না রাখাতে কোন পাপ নেই। এর জন্য উল্টো ওই লেখকদের জবাবদিহি করা দরকার কেন তারা সাহিত্যের ক্ষতি সাধন করলো। তাই আমি মনে করি আপনার লেখক হওয়াকে যদি আপনি জরুরী মনে করেন সেক্ষেত্রে নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলুন। অন্যের পকেটের ক্ষতি সাধন করার জন্য লেখক হওয়ার দরকার নেই।
যাই হোক, এসব বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো আমাকে বই বের করা থেকে একশো হাত দূরে রাখে। লেখক হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা, যে ভাবনার বিস্তৃতি, যে কল্পনা শক্তি এবং যে ধৈর্য্যশীলতার দরকার এর কোনটাই তেমনভাবে আমার মধ্যে নেই। তাই ওইদিকে আগানো থেকে নিজেকে বিরত রাখি।
একদিন অথবা রাতে সামহ্যোয়ার ইন ব্লগের 'শায়মা' নক দিয়ে বললো, ওরা একটা সংকলন করছে আমার একটা কবিতা চাই। এটা শুনে আমি ঘাবড়ে যাই। সংকলনে আরো অনেকের লেখা থাকবে জানালো। সে আশ্বাস থেকে আমি তাকে স্বাধীনতা দিয়ে দেই যে আমার ব্লগের যে কবিতাগুলো আছে সেখান থেকে বেছে নিতে। এবং সে একটা বেছে নিলো 'হৃদয়ের খামে ফাল্গুন'। বেছে নেয়ার স্বাধীনতা তাকে দিয়েছি মূলত নিজে বাঁচার জন্য! হা হা! কারণ আমার লেখা সম্পর্কে আমার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। আমি যা লিখি তাই আমার কাছে মনে হয় ভালো লেখা হয় নি। কেন এমন মনে হয় তার সুনির্দিষ্ট কারণ আমার জানার বাইরে।
যখন বইয়ের সূচিপত্রের স্ক্রিনশট ফাঁস হলো তখন দেখলাম আরো যারা যারা লিখেছে তাদের মধ্যে অনেকের লেখা ব্লগ অথবা ফেসবুকে পড়েছি। সে লেখাগুলো আমাকে হতাশ করে নি, পড়ে আনন্দ পেয়েছি। ঠিক তখনি আমার মনে হলো যাক এই লেখিয়েদের লেখার ফাঁকে দিয়ে আমি বেঁচে গেলাম ! এবং মজার ব্যাপার হলো আমার কবিতাটা কবিতার লিস্টে সবার শেষে, তাই আমার ধারণা এর আগের লেখাগুলো পড়ে পাঠক আর্থিক দিক থেকে ঠকা থেকে রক্ষা পেয়েই যাবেন । আর আমার লেখাটা বোনাস হিসেবে লসের খাতায় গেলেও ব্যালেন্সশিটে তেমন একটা ইফেক্ট পড়বে না ! হা হা !
যে বইটা নিয়ে এতক্ষণ বললাম সে বইটার নাম '' লেখাজোকা সংকলন'' । সম্পাদনায় ছিলেন শায়মা এবং গিয়াস উদ্দিন লিটন যৌথভাবে । এই সংকলনের শুরুর দিকের গল্প নিয়ে কিছু পোস্ট এসেছে ব্লগে । এই সংকলন বের করার গল্পে আমার চরিত্রটি সম্পূর্ণ বেখালেই রয়েছে মানে দায়িত্বের কাজে কোন সম্পৃক্ততাই নেই ! ব্যাপারটা হচ্ছে অন্যের মাথার উপর কাঁঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার মত ! হা হা ! বইটা কোন এক বিকেলে আধো আলো আধো অন্ধকারের ভিড়ে 'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি' থেকে বগলদাবা করে এনেছি !
সম্পৃক্ত সকল স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি রইলো অশেষ ধন্যবাদ লেখালেখির একটা সম্মিলিত গল্পকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এবং আমার সংযুক্তির জন্য রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা । হ্যাপি রিডিং !
লেখাজোকা সম্পর্কিত পোস্টগুলোঃ
লেখাজোকা সংকলন
যাঁদের লেখা নিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে ‘সংকলন লেখাজোকা’।
" লেখাজোকা-১" নিয়ে যত লেখা
গ্রন্থমেলা বা বইমেলা ২০১৯ - আমার বই কঙ্কাবতীর কথা, আমাদের বই লেখাজোকা.....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:১১