আসক্ত এক দৃশ্যের মুখোমুখি- আষ্টেপৃষ্ঠ অদ্ভুত অলংক্রিয়া, নিরপরাধ। নীরবতার শীতল শুভ্র বরফ গলে গলে পড়ছে চারপাশ জুড়ে । মৃত্তিকা নিজস্ব নীরবতা ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালো, সে আঁকলো আপন অবয়বে অজস্র মুখশশী মানব রূপ, চন্দ্র ঠেলে দিলো দেহগুলোয় একগুচ্ছ সোনালি কিরণ । আলো সংগোপন করে দেহগুলো যেন সাজলো রাত্রির পূর্ণাঙ্গ জ্যোৎস্নায় । পায়ের শিকল বন্ধনী ছিঁড়ে বাদ্যযন্ত্র সকল বেরিয়ে আসলো মৃত্তিকার দীর্ঘায়িত ফাটল আঁচড়ে । দৃশ্যমান- সুশৃঙ্খল দীর্ঘ বৃত্তান্ত- ধুলো মানব এবং ধুলো বাদ্যযন্ত্রের !
প্রথম নীরবতা এখনো ভাঙ্গে নি, এই নীরবকে সঙ্গী করে এতো আয়োজন হলো, যেন বহুদূর কোথাও শোরগোলের রাজ্যকে বেঁধে রেখে লুন্ঠন করা হয়েছে চির নিস্তব্ধকে ! থমকে আছে সবকিছু, কঠিনতর থেকে কঠিনতর । ধূলো মানব এক পা সামনে এগিয়ে উঁচুতে সমর্পণ করে রেখেছে, এ যেন অপেক্ষা হাত থেকে কোন শাদা রূমালের পতনে । ধুম ধুম... ধুম ধুম ! অতি সূক্ষ্ম মোহনীয়তায় ধীরে ধীরে দেহগুলো তাদের দোলাচ্ছে, ঠিক মিলিয়ে বাদ্য যন্ত্রের সুরের বিন্দু বিন্দু প্রতিটি ঝংকারের সাথে । দেহের সমগ্র ভাঁজে ভাঁজে সুগঠিত নৃত্য খেলা করছে !
মৃত্তিকার হৃদয় সুখে কাঁদছে, ধীরে ধীরে নৃত্যের বেগ বাড়ছে, দেহ বেয়ে ঝরছে ছাই রঙের জল । এ যেন মৃত্তিকা বহু শতাব্দী পর সময়কে কবজা করে উঠে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস জিজ্ঞেস করার সুযোগ এখনো হয়ে উঠে নি । আমি ছিলাম অধরা তাই তারা বেঁধে রেখেছে আমায় তাদের রাজ সিংহাসনে। উপভোগের কেন্দ্র বিন্দু শুধুই আমি । কর্ণের প্রতিটি শব্দ তরঙ্গের সাথে তাদের মোহনীয় নৃত্যের সুখ খেলা করে যাচ্ছে । আহা ! এমন সুখ কোথা থেকে আসছে, তারা কীভাবে এতো সঠিকভাবে সুখ দিতে পারে, যেখানে এক বিন্দু ঘোলা জল নেই ! আমি থাকতে চাই এখানে, আমি এখানেই থাকতে চাই, এভাবে বন্দি হয়ে অজস্রকাল ! আমাকে কেঁড়ে নেওয়ার রং কে আমি চিরতরে ভুলে যেতে চাই । হে মৃত্তিকা ! আমায় আপন করো তোমাদের সুখের অঙ্গে, তোমাদের এই নৃত্যাসরে, তোমাদের এই বিনম্র ছন্দের কোলাহলে....
খুলে যাচ্ছে আমার সকল বাঁধন ! না, না... খুলে যেও না হে বাঁধন, করুণা করো আমায়, আমি চাই না যেতে এই মায়া পূর্ণিমার যত্ন ফেলে ।করুণার তোয়াক্কা হয় নি, একে একে সকল বাঁধন খুলে শূন্যে ভাসিয়ে দিলো ওরা আমায় । তারা গহীন বুক উজাড় করে তাদের শেষতক সুখের যন্ত্রণা আমায় দিতে লাগলো, আমি চক্ষু প্রসারিত করে দু'হাত ঠেলে দিয়ে কপালের ভাঁজ খুলে উপভোগ করতে লাগলাম প্রাণময় এক অজানা বিস্তৃত উদ্যান ! আমি অনুভব করছি আমার দেহের প্রতিটি আস্তরণ খুলে পড়ে যাচ্ছে, সেখানে কোন হাড় নেই, নেই কোন খুলি, নেই কোন চামড়া আবৃত মসৃণতা, আছে শুধু ধূলার মৃত্তিকা । আমি মৃত্তিকার স্তূপ হয়ে সম্পূর্ণ আঁচড়ে পড়লাম শূন্যের এক অমীমাংসিত পেয়ালায় । চূর্ণ হয়ে রইলো আমার দেহের প্রতিটি সুখ ।
ওরা আমার স্তূপে খুঁড়ে খুঁড়ে কী যেন খুঁজেছিল, ওরা পেয়েছিলো একমুঠো কালো রং । ওরা বিস্বাদী যন্ত্রণায় তা বহুদূর ছুঁড়ে ফেলে দিলো, কান্নার জল গায়ে মেখে ওরা আবারও নিমজ্জিত হলো ওদের আদিম সজ্জায়, অজস্র অপেক্ষায় । ওরা পায় নি ঠিকানা খুঁজে আমার এ দেহে, ওরা খোঁজ করেছিলো একমুঠো সোনালী বর্ণের...
**একটি 'কল্পনাপ্রধান পাঠ' রচনা !
কিছু শব্দার্থঃ আষ্ঠেপৃষ্ঠ- সারা দেহ জুড়ে । অলংক্রিয়া- অলংকরণ বা সাজানো । মুখশশী- চাঁদের মত সুন্দর মুখ ।
ছবি কৃতজ্ঞতা- নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১৬