শাকিন আহমেদ লিখনের বয়স ১৩ বছর। দুরন্তপনায় তার নাগাল পাওয়া যাবে না, এটাই ছিল স্বাভাবিক। ক্রমেই সেই কৈশোরক দুরন্তপনা স্তিমিত হয়ে আসছে। ক্যানসার (নিউরো ব্লাস্টোমা) বাসা বেধেছে লিখনের শরীরে।
লিখনও কম যায় না। ইন্টারনেট ঘেঁটে কেমোথেরাপি, নিউরো ব্লাস্টোমা নিয়ে মোটামুটি গবেষণা করা শুরু করেছে। কিন্তু ইন্টারনেটের সব ভাষা বুঝতে পারে না। তাই তার যে আসলে কী হয়েছে তা-ও বুঝতে পারে না সে। মনের জোরে কেমোথেরাপি দিয়ে বাসায় গিয়েই ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা শুরু করে। এসব দেখে মা নাছিমা খাতুন ছেলের সামনে শক্ত থাকতে থাকতে এক সময় আর নিজেকে সামলাতে পারেন না। তখন শুধুই কাঁদেন।
রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিখন মায়ের কান্না নিয়েও প্রশ্ন করে। জানতে চায়, ‘মা তুমি শুধু কাঁদো কেন? ’ মা ছেলের এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেন না।
লিখন পরিবারের বড় ছেলে। ছোট ভাই পড়ছে নার্সারিতে। ছোট ভাইও অভিমান করে বড় ভাইকে বলে, ‘তুমি আমাকে স্কুলে ভর্তি করে এখন নিজেই স্কুলে না গিয়ে শুধু হাসপাতালে থাকো।’
সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টাইফয়েড জ্বর। বুক ফুলে গেল। তারপরে কিছুদিন লিখন হাঁটতে পারে না। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ৩১ মার্চ লিখনের মার সামনে চিকিৎসকেরা যে কথা বললেন তা হলো লিখন ক্যানসারে আক্রান্ত।
মা নাছিমা খাতুন ৩১ মার্চের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আরেক দফা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে বোর্ড বসে। রাত ১২টা বা সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসকেরা আস্তে আস্তে বলতে থাকেন-রোগটা কিন্তু খারাপ। মন্দের মধ্যে ভালো, ব্লাডে হয়নি। নাছিমা খাতুন বলেন, ‘চিকিৎসকদের মুখে এইটুকু শুনে আমি নিজেই মাথা ঘুরে পড়ে যাই। এরপর আর কিছু মনে নেই।’
ছেলের চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করেননি নাছিমা খাতুন ও লিখনের বাবা শামছুল আলম। ৩১ মার্চ থেকে পরিবারটির যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যুদ্ধের সঙ্গে যোগ হয়েছে ছেলের অসংখ্য প্রশ্ন।
নাছিমা খাতুন বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা লিখনকে এখন পর্যন্ত ওর যে ক্যানসার হয়েছে তা বুঝতে দেননি। ছয়টি কেমোথেরাপি শেষ হয়েছে। হাসপাতালে কেমো দেওয়ার সময় পাশের রোগীকে দেখিয়ে লিখন বলে-‘মা জানো, ওই রোগীর ক্যানসার হয়েছে। ক্যানসার হলে তো অ্যানসার নাই।’
লিখন পড়াশোনায় খুব ভালো। বয়স কম হলেও লিখন এখন থেকেই পরিবারের কথা চিন্তা করা শিখেছে।
লিখন ভালো হতে চায়, কিন্তু হাসপাতালে একদিন বেশি থাকতে হলেই বাবা মাকে অনেকগুলো টাকা গুনতে হবে সে চিন্তাও করে। ওর চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে দেখে জানতে চায়-‘মা টাইফয়েড হলে কী এত খরচ হয়? ’ ঈদের সময় নিজেই দামি কিছু কিনতে চায় না খরচের কথা চিন্তা করে।
লিখনের বাবা শামছুল আলম গুলশানে একটি বিদেশি বায়িং হাউসে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে কর্মরত। নাছিমা খাতুন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। এখন ছেলেকে সময় দেওয়ার জন্য চাকরিটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানালেন, ছেলের ছয়টি কেমোথেরাপির পেছনেই খরচ হয়ে গেছে আট থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা। সামনে এখনো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এখন পর্যন্ত আত্মীয়স্বজন, ছেলের স্কুল কর্তৃপক্ষসহ অনেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন।
লিখনের সব চুল পড়ে গেছে। স্বাস্থ্য শুকিয়ে গেছে। লিখনের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ওর বন্ধুরা বাসায় এসে লিখনের সঙ্গে খেলে। লিখনের বাবা মা হাল ছাড়তে রাজি নন। তাঁরা চান, তাঁদের ছেলে আবার স্কুলে যাবে। ক্রিকেট খেলবে। দুরন্তপনায় ছুটে বেড়াবে। তাই তাঁরা ছেলেকে নিতে চান ভারতের টাটা মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতালে।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিখনের বয়স একেবারেই কম। উন্নত এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে পারলে তাকে আর একটু ভালো রাখা সম্ভব হবে। দেশে বিদেশে ওর চিকিৎসা আছে। তবে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ওর বাবা মা ওকে দেশের বাইরে নিতে চাচ্ছেন। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে আসার পর আমরা তো আছিই। ওর পরিবারের মতো আমরাও চাই সবাই ওকে একটু ভালো রাখার জন্য সহায়তার হাতটি বাড়িয়ে দেবেন।’
লিখনকে ভালো রাখতে কেউ যদি সহায়তার হাত বাড়াতে চান তিনি সহায়তা পাঠাতে পারেন। বিকাশ নম্বর: শামছুল আলম—০১৮১৬৮৪৬৬৮৩, নাছিমা খাতুন-০১৮১৬৮৪৬৬৮৪২ এবং ০১৯৫৪৮৫৬১০৩২। এ ছাড়া নাছিমা খাতুন, সেভিংস একাউন্ট নম্বর-০০১১১০০১১৬৫২১, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী শাখা, ঢাকা অথবা ১০৩১৫১৪৯০৫৯, ডাচ বাংলা ব্যাংক, বনানী শাখায় সহায়তা পাঠাতে পারেন। তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫২