somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনকাহিনী দুবাই - একটি পাগলের সাথে সাক্ষাত

২২ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেজো মামা দুবাই থাকেন। পেশায় ডাক্তার। ওখানেই সেটলড। আমি আবার তার সবচেয়ে আদরের ভাগ্নে। সেবার দেশে এসে খুব করে ধরলেন, দুবাই শহর দেখিয়েই ছাড়বেন।

পাসপোর্ট করা ছিল। বন্ধুদের সাথে ইন্ডিয়া, নেপাল এর আগে গিয়েছি। বড়আপা এবং দুলাভাই নিউইয়র্কে থাকেন, ওখানেও গিয়েছি গতবছর মে তে। মামার বদৌলতে দুবাইয়ের ভিজিটিং ভিসা খুব সহজেই পেয়ে গেলাম। ট্রাভেল এজেন্সিতে পরিচিত লোক থাকায় টিকেট ওকে করতেও খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। এমিরেটসে চেপে দুবাই এয়ারপোর্টে যখন ল্যান্ড করি, রাত তখন ১০ টার মত।

মামা গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। গাড়িতে চড়ে রাতের দুবাইকে দেখে আমি অবাক হই। এই মরুভূমিকে কত যত্নে এরা সাজিয়েছে! একটানে বাসায় গিয়ে খেয়েদেয়ে ঘুম দেই। পরদিন বিকেলে মামা একটু আগেভাগে চলে আসেন। তার সাথে দুবাই শহর দেখতে বের হই।

ইউএইতে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশী লোকজনে গিজগিজ করছে। দুবাইয়ে বাংলাদেশীদের সংগঠনও আছে বেশ কয়েকটা। মামার সাথে বেরিয়ে স্যুট-টাই পরা এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়। মামা পরিচয় করিয়ে দেন, উনি খুব বড় একজন লেখক, দেশে একসময় একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। দেশের পত্রপত্রিকার সাথে আমার যোগ খুব এটা খারাপ না হওয়ায় উনার মত স্বনামধন্য সমপাদককে চিনতে না পারাটা কেমন যেন লাগে। বেশি মাথা ঘামাইনা এ নিয়ে। বিরাট বাংলাদেশের আনাচেকানাচে এরকম কত প্রতিভাই তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখহনও। আমি আর কতোটা জানি।

মামা উনার প্রশংসা করেন। বিরাট দার্শনিক। সক্রেটিস-আরস্ততল ভাজাভাজা করে খেয়েছেন। উনার ইংরেজি অ্যাক্সেন্ট শুনে লোকে নাকি তাকে ব্রিটিশ বলে ভুল করে ফেলে। আল-জাজিরা থেকে শুরু করে বিবিছি-ছিএনএন সব টিভি চ্যানেলই উনার সাক্ষাৎকার নিতে পিছনে পিছনে ছোটে। এই অসম্ভব মরুর দেশের গরমেও উনি তাই সর্বদা স্যুটেড-বুটেড হয়ে থাকেন। বলা তো যায় না, কখন কোন চ্যানেল চেপে ধরে!

উনার লিংক নাকি সেরকম। সাধারন দেশিদের সাথে তিনি মিশেন না। তার বন্ধুরা সব আরবীয়, তাদের সাথে হুল্লোড় করে আড্ডা দিলেও তিনি মদ এবং নারী ছুয়েও দেখেন না। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছেন। আমি তার কপালে তাকাই। হ্যা, দাগ সত্যই আছে। আরেকটু লক্ষ করতেই কেমন জানি সন্দেহ জাগে, এ দাগ ঝামায় ঘষে করা না তো! ধুর, তিনি কামেল লোক। আমিই সন্দেহ করছি - মনকে প্রবোধ দেই।

মামার সাথে সন্ধ্যাটা ঘুরে ঘুরে বাসায় ফিরছি। রাত কত আর হবে! ১০ টার কাছাকাছি। রাতের দুবাইয়ের রূপ আবার অন্যরকম। দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ব্যস্ত এই দুবাই নগরী। জ্যাম পড়ে গেছে। আস্তে আস্তে এগুচ্ছে গাড়ি। রেডলাইট এরিয়া দিয়ে যাচ্ছি। রঙবেরঙ সাজের ডানাকাটা পরীরা অলস ভঙ্গিতে পায়চারিতে ব্যস্ত। মামা এদিক-ওদিক তাকাতে নিষেধ করলেন। নিষেধ কে শোনে! কিছুক্ষণ পরে পরিচিত অবয়ব দেখে চোখ থমকে যায়। ভালো করে দেখে বুঝি, সেই লোক। কয়েকটি আরব ছোকরা তাকে ঘাড় ধরে ঠেলতে ঠেলতে থাপড় মারতে মারতে রাস্তায় এনে ফেলেছে।

মামা এড়িয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে চেষ্টা করলেন। সেই জ্যামের রাস্তায় বেশি বেগে চলা সম্ভব নয়। এখনও আরব ছোকরাগুলোর উচুগলার কর্কশ কথা ভেসে আসছে। আমি আরবী বুঝি না। মামা বললেন, ছোকরাগুলো লোকটাকে 'মিসকিন' বলে শাসাচ্ছে, আর কোনদিন রেডলাইট এরিয়ায় ঢুকতে দেখলে গোপনাংগ কেটে দেবে বলে অশলীল ভয় দেখাচ্ছে।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, মামা এই তোমার সেই বিখ্যাত লোক? মামা মুচকি হেসে বলেন, ওটা তো একটা বদ্ধ পাগল। পাগল খেপাতে নেই রে ভাগ্নে!
২৩টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×