ব্লগে লিখার মত বিষয় না, তারপরেও কাছের কিছু ব্লগারের অনুরোধে গতকালের ক্যান্ডেল ডিনার, মেয়ে দেখা ও তার সাথে কথোপকথোনের চৌম্বক অংশগুল এখানে লিখলুম।
ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং
:হ্যালো?
:আমি নীলা।
:কে লিলা?
:হ্যা।
:সুদু লিলা? আগে পিছে কিছু নেই? ঠিক চিনতে পারছিনা।
:মানে?
:মানে লিলার সাথে বতি, লীলাবতী বা এই টাইপের কিছু।
:এক্সকিউজ মি। আমি লিলা না, নীলা। নীলা চৌধুরী। এখন চিনতে পারছেন?
:জি পারছি। আজ আপনার সাথে আমার “ক্যান্ডেল ডিনার করার কথা”।
কিছুক্ষন নিরবতা
আমি:হ্যালো।
:জি, তবে গুলশানে পারছি না, আমরা যদি ধানমন্ডির কথাও বসি তাহলে কি আপনার আপত্তি আছে? এবং সেটা যদি হয় রাত :আট’টায়?
:নাহ।
:ঠিক আছে, ভাল থাকবে।
_______
হ্যা, আমি নীলাকে চিনি। তার নম্বর আমার মোবাইলে সেভ করাই ছিল। যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব আমার একজন প্রিয়া মানুষ এনেছেন, তার নম্বর সেভ করা থাকবে না তা কি করে হয়??। তাছাড়া যারা আমাকে ডিনারে দাওয়াত দেন তাদের নম্বর মুখাস্ত করা তো আমার ফরজ।
একটু দেরি করেই রেস্টুরেন্টে আসি, কারন কোনো মেয়ে নির্দিস্ট সময় আসবেন সেটা মনে করা আহম্মকের কাজ। আর আমি তো রীতিমত একজন গিয়ানি মানুষ।
কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমান করে “সে” আগেই বসেছিলেন নির্দিস্ট টেবিলেই। আমার আরো একটি ধারনা ভুল হল, আমি ভেবেছি এই জাতীয় ডিনারে মেয়েরা সাধারনত “শাড়ী চুড়ি” পরবে, মানে ১০০% “বাঙালি ললনা” হবার চেস্টা করে। কিন্তু এই মেয়ে এসবের ধার ধারে না। সে বোরখা পড়েছে তবে মাথার স্কার্ফ খুলে রেখেছে। রেস্টুরেন্টের হাল্কায় আলোয় কালার’টা ঠিক বুঝতে পারছিনা না তবে মনে হচ্ছে ব্লু বা গ্রিন।
আমিঃ হায় স্লামাইলাইকুম, আ’ম জনি, নাইস টু মিট ইউ ম্যাম.
:অলাইকুম আস সালাম, সেম টু ইউ মিঃজনি।
:ওহ ইটস মাই প্লেজার ম্যাম।
:এত দেরি করলেন কেন?
:ইয়ে মানে.....
:প্লিজ, ট্রাফিক জ্যামের অজুহাত দিবেন না। বাংলাদেশে লোডশেডিং ও ট্রাফিক জ্যাম একটি কমন ব্যাপার, এটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।
:হে!! হে!! আমার ডান হাত, বাম হাত, দুই হাতই আছে সুতরাং অজুহাত দিচ্ছিনা না। আমি ইচ্ছে করেই দেরি করে বাসা থেকে বের হয়েছি। এখন কি “কান ধরে” সরি বলব? হে: হে:
:ওফফ!! ম্যান!! কান ধরবেন কেন?
:না মানে “আপনার কানের” দুলটা অসম্ভব ভাল লাগছে তাই। (হা: হা: হা: আবারো আমার বিখ্যাত অট্রহাসি দিলাম)
:প্লিজ!! এই রকম সস্তা জোক্স আমার সাথে করবেন না।
ক্রিং ক্তিং আমার মোবাইল বেজে উঠছে, ১মিনিট কথা বলে এবং মোবাইল’টা আবার পকেটে রাখতে গিয়ে টেবিলে চোখ পড়ে, দেখি “উনি” উনার “আই ফোন”(সম্ভাবত) টেবিলের উপরে রেখেছেন, (যেটা আমি চরম অভদ্রতা মনে করি) এবং আমার মনে হল উনি ইচ্ছা করেই রেখেছেন, যেন আমি তার লেটেস্ট মোবাইল’টা দেখতে পারি। আমিও ইচ্ছা করে এই অভদ্রতা’টা করলাম। আমার অতি নগন্য মানে আড়াই হাজার’র টাকা দিয়ে কেনা নকিয়া ডুয়েল সিম মোবাইলও টেবিলে রাখি। (উনি আড় চোখে দেখলেন)।
আমার হাতে একটি মেনু কার্ড দিলেন এবং উনি একটি নিলেন। অর্ডার দিতে গিয়ে দেখা গেল আমাদের দুজনেরই পছন্দ অনেক খানি সেম (আরে সেম না হয়ে যাবে কই, আমি তো খাদক। যা পাই তাই খাই)
শুরু হল টুকটাক আলাপ,
নীলাঃ কিছু বলছেন না যে? আপানার বাসার সবাই ভাল আছেন?
:হুম
:আপনার কাজ কেমন চলছে?
:মোটামুটি
:আচ্ছা আপনাকে দেখা করতে বলায় আপনি রাগ বা অবাক হয়েছেন?
মনে মনে চিন্তা করতেছি, খাবার আসতে এত সময় লাগে কেন) নাহ।
৫ মিনিট নিরিবতা ( খাবার সার্ভ হল, আমি খাবারের দিকে মন দিলাম)
:আচ্ছা জনি সাহেব….
:এক্সকিউজ মি, জনি’র সাথে সাহেব মা মিস্টার যোগ না করে সুধু জনি, চাইলে এস আর যোগ করতে পারেন।
:ওকে। আমি একটা কমন প্রশ্ন সবাইকে করি, মানে এটা যদিও আমাদের আজকের ইস্যু’র সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তার পরও করছি, আপনি কি আপনার প্রফেশন ও সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে স্যাটেসফাইড। মানে আপনি আর কি হলে বা কি পেলে বা কি কি চান লাইফে।
:ইয়েস, আ’ম সাটেসফাইড, আমি আমার অবস্থান সুধু নয়, আমার সম্পুর্ন জীবন নিয়ে খুশি এবং আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত শুকরিয়া আদায় করি।
:মানে ?? আপনার কি কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।
:আপনি কি সেই সুখি মানুষের গল্পটা শুনেছেন? এক রাজ্যে রাজার ভীষণ অসুখ হয়, কবিরাজ তাকে একটি সুখি মানুষের “জামা”পরতে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে এক মাত্র সুখি যে ছিল তার কোনো জামা ছিলনা। এই গল্পটা ছোট বেলা থেকে আমার ভিতরে গেথে যায়, “বিলিভ মি ম্যাম”, আজ পর্জন্ত কোনো কিছু পাবার ত্রিব্য আকাংখ্যা আমি উপলব্দি করি নি।যা পেয়েছি তাই নিয়েই সব সময় সুখি হয়েছি।
:যখন আপনার গার্লফ্রেন্ড চলে যায় তখন কি নিজেকে সুখি ভেবছিলেন? সরি, আপনার সম্পর্কে প্রায় ৬ পৃস্টার এক ডাটা আমার কাছে আছে, সেখান থেকেই এই তথ্য পেয়েছি। আর আমি আশা করি আপনি রাগ করবেন না এই প্রশ্নে, আর তাছাড়া এই প্রশ্ন করার অধিকার আমার আছে।
:হা হা । এত সিম্পল বিষয় নিয়ে “অধিকারের” কথাটা বলা আমার কাছে হাস্যকর। শুনুন আমার গার্ফ্রেন্ড আমাকে ছেড়ে যায় নি, আমি তাকে চলে যেতে বাধ্য করেছি। কারন আমার অক্ষমতা। অক্ষমতা ছিল আর্থিক,সামাজিক, বয়সের ইত্যাদির। একটা কলেজ পড়ুয়া বেকার ছেলের যত রকম অক্ষমতা থাকতে পারে, সে সবই আমার ছিল।
(দির্ঘক্ষন আবার নিরবতা।)
( আমি সুপ ও অনথুনের বাটি খালি করে এবার মুল মেনুতে মন সংযোগ করলাম।)
:আপনার অবসর কাটে কি ভাবে??
:সাধারনত চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে, বিড়ি টেনে।
দেখুন, আপনি নিজেকে সুখি, চায়ের দোকানে আড্ডা, এ গুল বলে কি হিমু হিসেবে নিজেকে জাহির করতে চাচ্ছেন। হিমুগিরি দেখাবেন না। এক দম পছন্দ করি না। এই সব বাস্তবে হয় না।
:হিমু!!! ও মাই গড!!! আপনি কার সাথে কার তুলনা দিচ্ছেন??? হিমু’র মত মহান হতে পারলে আমার জীবন ধন্য হত।।। ।। ওকে, বাদ দিন। অন্য কথা বলি। বাই দা বাই, আপনি এখন কি করছেন?
:তেমন কিছু না, মার্চেন্ডাইং কোর্স করছি, একটি বায়িং হাইজ দেবার চিন্তা আছে।
:ওয়েল। ভাল সিধ্যান্ত।
:সিধ্যান্ত নিয়ে কি হবে, আব্বু তো বিয়ে দেবার জন্যে অস্থির হয়ে আছে। আব্বু যে কি ভেবে আপনাকে এত পছন্দ করছে, সেটা ভেবে পাচ্ছি না।
:হুম, আপনার ফাদার একটি “গৃহপালিত” জামাই চায়। আমি হয়ত তার চোখে “গৃহপালিত” হবার জন্যে পার্ফেক্ট।
:ও, আপনি “গৃহপালিত” হবেন!!!!
:হুম, আপনার মত সুন্দরি স্মার্ট মেয়ের সাথে ফ্রি একটি ফ্লাট পাচ্ছি। “গৃহপালিত” হওয়াটাই স্বাভাবিক।
:বাহ!! আপনি ফ্লাটের জন্যে বিয়ে করতে চান, আবার বলছেন আপনার কোনো চাহিদা নাই, আপনি সুখি মানুষ!!!!????!!!
:হা হা হা। (আবারো আমার বিখ্যাত অট্রহাসি দিয়ে খাবারে মনঃসংযোগ করলাম।)
:এ রকম বিশ্রী ভাবে হাসছেন কেন??
:এমনি। আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। আপনি শেষ কবে প্রান খুলে হেসেছেন বলেন তো?
:মানে??
:আপনি কি কখনো বৃষ্টি’তে ভিজতে ভিজতে রাস্তা দিয়ে হেটেছেন? বা শীতের সন্ধ্যায় আইসক্রিম খেয়েছেন অথবা কড়া দুপুরে ফাস্ট ফুড না খেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে ঝালমুড়ি-চটপটি খেয়েছেন?? যদি বাংলাদেশে জন্ম হয়ে এ গুল না করে থাকেন তাহলে “সুখি”হবার সংজ্ঞা’টা আপনি জানেন না। তাই আমার হাসির অর্থ আপনি বুঝতে পারছেন না।
:মিঃজনি, আমি যতটুক তথ্য আপনার সম্পর্কে জানি তার সাথে আপনার এই “হেয়ালিপনা” মিলছে না। আপনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন আপনাকে ভয় পায়, আপনার সহকর্মি বা প্রফেশনের অন্য লোকজন আপনাকে যথেস্ট সমীহ করে। তারা আপনাকে সিরিয়াস টাইপের রোবট হিসেবেই জানে। কিন্তু আপনে এখন যা বলছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমার জানামতে আপনি যথেস্ট রেসপন্সিবল, বাস্তববাদী, সাংসারিক ছেলে। আমার মনে হয় আব্বু এই গুল জেনেই আপনাকে পছন্দ করছে।
:হতে পারে। কিন্তু আপনার কি মনে হচ্ছে আমাকে দেখে??
:আ’ম কনফিউস।
:হ্যা, এখানেই সমস্যা। আমাকে যারা দেখেছে তারা “দিনের আলোতে” দেখেছে। অর্থাৎ তারা আমার বাহ্যিক রুপ দেখেছে। আসলে ঘরে সংসার করা, আর বাহিরে অফিস করা এক নয়। বাহিরে আমাদের অনেক “ফর্মালেটিজ ম্যেন্টেন” করতে হয়, যেটা ব্যাক্তিগত জীবনে করি না।যেমন আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না, আপনার পছন্দের অন্য মানুষ আছে। আজ এখানে দেখা করা ছিল আপনার জন্যে “ফর্মালেটিজ ম্যেন্টেন” করা।
:মানে আপনি জানতেন??
: হ্যা ম্যাম, আমি জানি। আমি এও জানি আপনি এখানে একা আসে নাই। আমাদের ডান পাশের টেবিলে আপনার কাজিন, তার স্ত্রী ও আপনার ছোট ভাই বসে আছে।
(ডেজার্ডের বাটি’টা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলি)
:আপনার সাথে আমার পার্থক্য অনেক। উধাহরন দেই, যদি আমার টাইপের কোনো মেয়ে আজ আসত তাহলে নিশ্চিত সে শাড়ি পড়ত, হাতে কাচের চুড়ি। কোনো গয়না পড়ত না, সেখানে বেলি বা গোলাপ ফুল থাকত। কিন্তু আপনি বোরখা পড়েছেন তবে মাথার স্কার্ফ খুলে রেখেছেন, যাতে আপনার কানের ও গলার দামি “গয়না-গাটি” আমি দেখতে পাই। পার্থক্য আরো আছে, আপনি ও আপনার পরিবারের সাথে আমার মত্যপার্থক্য অনেক। আপনার বাবা যে “রাজনৈতিক” দলের সমর্থক, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সেটাকে ঘৃণা করি। আপনার বাবা যদি জানতে পারে তার প্রিয় দল’টাকে বাংলাদেশ থেকে “বহিষ্কার”করার জন্যে আমি “শাহাবাগে” আন্দোলনের সাথে সুর মিলিয়েছি, তাহলে আমাকে আর “ভাল ভদ্র” ছেলে হিসেবে দেখবে না। এই রকম দুই মেরুর দুই বাসিন্দা এক সাথে সংসার তো দুরের কথা, ভাল বন্ধুও হতে পারে না। আপনি আপনার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতে পারবেন। আমাকে নিয়ে আপনার আব্বু ঝামেলা করবে না। আমি আমার সিধ্যান্তের কথা অলরেডি “ভাইয়াকে” জানিয়ে দিয়েছি। আপনার ফাদার আজ রাতেই জানতে পারবেন।
শুভ রাত্রি, ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
ও,হ্যা। থ্যাংস ফর ডিনার।
_______________ এরপর মুখ মুছতে মুছতে বাহিরে এলাম আর বেন্সন এন্ড হেজেসের সাথে লিফ কিস করতে করতে বাসার দিকে হাটা ধরলাম।