somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাব

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাজার করার অভ্যাস আমার বহু দিনের । সেই ছোট্ট বেলায় থলে হাতে বাবা-চাচার পিছু পিছু হাটে গিয়েছি। গিয়েছি বাজারে । থলে টেনে আনতে পারতাম না । বাবা বা চাচা কেউ একজন থলে বয়ে আনতেন। আমি এক কোনায় হাত ঠেকিয়ে রেখে তাদের সাথে সাথে হাটতাম । তাতেই সুখ, সুখ এই ভেবে যে আমি বাজার করে নিয়ে এসেছি। আর সেই থলের ভিতর হতে যখন বিভিন্ন জিনিস লাফিয়ে লাফিয়ে বের হত তখন কি আনন্দ! কোন জিনিসটা কোথায় কিনেছি, কার কাছ থেকে কিনেছি আর কত দিয়ে কিনেছি ইত্যাদি বলতে বলতে সময় কাটত। বিভিন্ন রকমের মাছ আসত, আসত বিভিন্ন রকম ফলমূল-তরকারী । বাবা ছিলেন ভোজন বিলাসী। হরেক রকম জিনিস না হলে তার খাওয়া হত না । বাছাই করা খাবার ছাড়া তার মুখে রুচত না । মাকে দেখেছি সমস্ত দিন হেসেলে কাটাতে। কেননা বাবুর্চির হাতের খাবার খেতে বাবার আপত্তি না থাকলেও তিনি আরাম পেতেন না । আর তাকে আরাম দিতে গিয়ে মা তার বিশ্রামকে হারাম করে দিয়ে সমস্ত দিনই পঞ্চ ব্যঞ্জন তৈরী করতে ব্যস্ত থাকতেন। কাজেই বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা,আমার জিহবার অবস্থা। এহেন ভোজন প্রিয় বাবার আর রাধূনী মায়ের হেফাজতে থেকে আমার অভ্যাসটা কতখানি বিগড়ে গিয়েছে, রসনার বৃদ্ধি হয়েছে কতখানি?
আল্লাহর দেয়া জিহবাটাকে পঞ্চ ব্যঞ্জনের স্বাদে অভ্যস্থ করে তুলেছিলেন বাবা আর মা কিন্তু এই আক্রার বাজারে যে পরিমান চাকতির দরকার তাত তারা যোগান দিতে পারছেন না । আমি নিজে যা কিছু রোজগার করছি তাতেও কুলাচেছ না। কুলাবে কি করে বলুন? সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দ্বিগুন, তিনগুন, চারগুন তারও বেশি কোন কোন ক্ষেত্রে। তাই মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে রোজগার বাড়েনি বলে তাল সামলাতে পারছি না ।

আগেই তো বলেছি খাওয়ার শখ আমার সেই ছোট বেলা হতে আর এক শখ বাজার করার। এ দুটো আমার উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া । বাবা বলতেন- নিজের হাতে বাজার না করলে খেয়ে সুখ নেই। তাইত আজও আমি বাজারে যাই । রোজই একবার যাই । আগের মত কিনতে পারিনা, তবুও বাজারের এমাথা সেমাথা বার কয়েক ঘুরে ঘুরে দেখি । বিভিন্ন জিনিসের দর দস্তর করি । কিনতে সাধ্যে না কুলালে সে সব জিনিসের গায়ে হাত বুলিয়ে দেখি । খাওয়ার সাধ না মিটলেও কিছুক্ষন উত্তাপ অনুভব করি । মনে মনে তৃপ্তি পাবার চেষ্টা করি । তারপর দেহে ও মনে ক্লান্তি অনুভব করলে বাসায় ফিরি । কোনদিন শুণ্য হাতে, কোনদিন অখাদ্য কুখাদ্য কিছু একটা নিয়ে।

অনেকেই থলে ভরে কিনছেন । তাই দেখে মনে হয় আমিও কিনব, কিনতে পারব । সেই আশায়ইতো রোজ বাজারে যাই।

এইতো সে দিন বাজারে গিয়ে দুর থেকে রূপালী ইলিশ চকচক করতে দেখে মনে পড়ল অনেক দিন ইলিশ খাওয়া হয়নি । ভাবলাম এগিয়ে গিয়ে দেখি কিনতে পারি কিনা । কাছে এগোতেই দেখলাম মেছোর ডালার সব কয়টি ইলিশই যেন আমার পানে তাকিয়ে আছে । আর মিটি মিটি হাসছে । ভাবখানা এই যে - রূপালী ইলিশ কিনবে, রূপোর চাকতি আছে তো? না থাকলে কেটে পড়, মানে মানে সরে দাড়াও । ওদের মিটি মিটি হাসি যেন আমাকে পাগল করে তুলল । কানে বাজছে ছোট ছেলেটির মুখের সেই আধো আধো কথা "বাবা ইলিশ খাবো । সম্বিত ফিরে পেতেই মেছোকে জিজ্ঞেস করে জানলাম সব চেয়ে ছোট ইলিশটির দাম দুইশত ষাট টাকা। ভাবছি অতটুকু ইলিশের এত দাম! কষ্টে সৃষ্টে কিনতে পারলেও ত তা ছয় জনের পাতে পড়বে না। কিনে কি করব? মেছোর সাথে দরাদরি করতে যেতেই ব্যাটা আমাকে একটি চকচকে চাকতি ধরিয়ে দিয়ে বলল আপনি সাহেব ইলিশ খাইবার পারবেন না । দেখলাম চাকতির একপাশে এক ইলিশ আকা আর অন্য পাশে লেখা ২৫ পয়সা । ছেলেকে গিয়ে এই ইলিশটাই দেব ভেবে চাকতিটা পকেটে পুরে রাখলাম। পাশ কেটে সামনে এগোতেই দেখলাম এক মেছোর ডালায় বোয়াল হাঁ করে আছে । ভাবখানা এই - পছন্দমত লোক না হলে কাছে এলেই গিলে খাবে। টাকার ঝন ঝনানি থাকেত এগোও, নাহলে খবরদার এগিয়ো না যেন। সাহস পেলাম না । নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে দাড়ালাম। দেখলাম সামনের ডালায় ছোট ছোট পুটি নিয়ে সাত আটজন গলা ধরাধরি করে বসে আছে, কোন দিকে খেয়াল নেই । আপনমনে গল্পে মশগুল। জিজ্ঞেস করে শুনলাম দর্শনী পচিশ টাকা পেলে ওনারা থলেতে চড়ে আমার বাড়ীতে তশরীফ আনতে রাজি। হঠাত পুটিগুলি ফরফর করে নড়ে উঠল যেন বলতে চাইল যাদের এতদিন ছোট ভেবেছ তাদের দিন বদলেছে, মান বেড়েছে যা তা দাম বলে অপমান কোরনা যেন। ফিরে এলাম।

ছোটদের বইতে সেই গল্পটা পড়েছেন? নাকের ডগায় মূলো বেধে রেখে এক ব্যবসায়ী তার গাধাকে দিয়ে বোঝা টানাত । আমার অবস্থাও অনেকটা সেইমত হয়েছিল । তরকারীর বাজারে ঢুকতেই দেখলাম দোকানীরা মূলো নিয়ে বসে আছে দাম জিজ্ঞেস করতেই শুনলাম কেজি তিরিশ টাকা। ভাবলাম সামনের দোকানে দেখি, তারটা আরও দু টাকা বেশী । এ দোকান সে দোকান ঘোরা হল । কিন্তু মূলো কেনা আর হলনা। পাশের ডালায় দেখলাম নব বধুর লজ্জায় ঘোমটা টেনে বসে আছে পাতা কপিরা । ভাবলাম পাতা কপিই কেনা যাক। ও বাব্বা হাতে তুলতেই দেখলাম যাকে এতন নব বধু ভাবছিলাম আসলে সে নব বধু নয় । ঘোমটা খুলতেই বেড়িয়ে পড়ল ফোকলা দাতের থুত্থুরী এক বুড়ী । দোকানী বলল অনেক দূর থেকে আনতে হয় বলে ওর চামড়া শুকিয়ে অমন হয়েছে। দাম কিন্তু কমেনি - কনে কনে গন্ধ এখনও পাওয়া যায় । আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম লজ্জাবতী নারীর রক্তিমাভ গালের মত লাল টুকটুকে এক ঝাকা টমেটো, কিনতে মন চাইলো। দোকানী দাম হাকল আশি টাকা কেজি। মনে হল রাস্তায় দেখা ষোড়শী সুন্দরী যুবতীর মত ইহাও নাগালের বাইরে। বুক চাপা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনে এগোলাম। দেখলাম অন্য এক দোকানী বসেছে বেগুন নিয়ে। আগুনে ঝলসে চটকিয়ে খেতে খুব স্বাদ। মনে করলাম বেগুনের দাম নিশ্চয়ই কম হবে। কিন্তু ওরও যে হঠাত গুন বেড়েছে তাত বুঝিনি। দোকানীকে জিজ্ঞেস করতে দাম হাকল চল্লিশ টাকা কেজি। ও জিনিসটার প্রতি আমার একটু ঝোক আছে । আমারও কোন গুন নাই অর্থাত আমিও বেগুন। সে কারনেই ঝোকটা একটু বেশি কিনা জানিনা, এক কেজি কিনেই ফেললাম । সামনের দোকানে কাচ কলা দেখে কিনতে গেলাম কিন্তু ও যে দশ টাকা দাম হেকে আমাকে কাচ কলা দেখাবে তাত ভাবিনি ।

মশলার বাজারে ঢুকে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। আপনি কোনদিন পিয়াজের ছোবড়া ছাড়িয়েছেন বা শিল নোড়ায় ঘষেছেন? যদি এ কাজ করে থাকেন তবেই বুঝবেন যে ওর রসে কি ভাবে চোখ জ্বালা করে । কিন্তু বিশ্বাস করেন ওর দাম শুনেই আমার চোখ জ্বালা শুরু হয়েছিল । দোকানী দাম হাকল ষাট টাকা । জিজ্ঞেস করলাম হঠাত দাম বৃদ্ধির কারন। দোকানী হেসে বলল মওকা বুঝে আড়তদাররা দাম বাড়িয়েছে আমরা খুচরা দোকানীরা কি করতে পারি বলুন? সত্যিইতো, ওরা কি করতে পারে। যা কিছু পারি আমরা খদ্দেররা।

চোখ ঘসতে ঘসতে বাসার পথে পা চালালাম । রাস্তার পাশে ফলের দোকান। মনে হল যেন অভিমানী মেয়ের মত গাল ফুলিয়ে সূতোয় ঝুলে দোল খাচ্ছে আপেলগুলো। ইচ্ছে হল একটু পরশ পেতে। এগিয়ে গিয়ে গায়ে হাত বুলিয়ে ওর মধুর পরশ অনুভব করলাম। দোকনীকে জিজ্ঞেস করে শুনলাম মূল্য একশত ষাট টাকা কেজি। আঁতকে উঠে হাত সরিয়ে নিলাম । পাশেই আঙ্গুর ফল ঝুলছিল 'আঙ্গুর ফল টক' প্রবাদটি মনে পড়তেই আস্তে করে একটি ঢোক গিলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম । ফিরাতেই দেখলাম গুটিকতক কমলা। প্রতিটির দাম দশ টাকা, বড়টি বার টাকা । ভাবলাম খাওয়া যাবেনা । আফসোস হল, হঠাত মনে পড়ল কবিরা কমলার কোয়াগুলিকে যেন কিসের সাথে তুলনা করেছেন না? ভাবছি বাসায় ফিরে তাই খাব । দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাব।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ১:৪৩
৩১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×