somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই দিন দিন নয়

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভদ্রলোক হঠাৎ ঠাস্ করে একটা চড় কষালেন বালকটির গালে। কতইবা বয়স হবে ছেলেটির- খুব বেশী হলে সাত কি আট। ছেলেটির অপরাধ ভদ্রলোকের খাবার প্লেটের সামনে থেকে দুব্বা ঘাসের উপর ফেলে দেয়া মুরগীর হাড্ডিগুলো তুলে নিতে এসেছিল।

ভদ্রলোক চড় কষিয়েই ক্ষান্ত থাকলেন না। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শুরু করলেন। তার মুখে উচ্চারিত শব্দগুলোর সাথে তার চেহারা ও পোষাকের সাথে মিল ছিলনা। অমন ভাষায় গালাগালি সাধারনতঃ আমরা শুনে থাকি অশিতি কুলি মজুরদের মুখে। তাই উপস্থিত সকলে না হলেও বেশ কিছু সংখ্যক অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল।

ঐ ভদ্রলোক গিয়েছিলেন শহর থেকে কিছু দুরে। বন্ধু বান্ধব ও পরিচিত কিছু লোক নিয়ে গাড়ি সাজিয়ে দিনভর আনন্দ ফুর্তি করার জন্য। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে আমোদ- প্রমোদে যদি বাঁধা আসে তবে কে না রাগ করে? কার না মেজাজ খারাপ হয়, বলুন তো?

শহুরে লোকগুলো যখন গাড়ি হাকিয়ে, ঢাক ঢোল বাজিয়ে আমোদ ফুর্তি করার কারনে স্বল্পক্ষন হাজির হয় তখন তাদের দেখতে গ্রামের সাধারন মানুষগুলোর দৃষ্টি কাড়াই তো স্বাভাবিক। তাদের হৈ -হুল্লোর, খানাপিনার তেজী ঘ্রান ঐ অনাহার কিষ্ট, পান্ডুর চেহারার লোকগুলোকে ত আকৃষ্ট করারই কথা। ওরা অংশগ্রহনের জন্য নয়, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার কারনেও নয়, নিছক কৌতুহল বশত: এবং কিয়দাংশ হয়তবা আহারের সুঘ্রানে নিজের রসনাকে তৃপ্ত করতে সেখানে এসে ভীড় করে। কেউ দাড়িয়ে থেকে তামাশা দেখে। বেলেল্লাপনায় আহত হয়ে কিম্বা অধিক্ষন দেখে দেখে কান্ত হয়ে এক সময় ফিরে যায় বেশীরভাগ দর্শক। আর অনাহার যাদের নিত্য সাথী সেই সব পরিবারের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা খাবারের মৌ মৌ গন্ধে যেন জায়গা ছেড়ে যেতে পারেনা। ওদের রসনা সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের পরিচিত জীব বিশেষের মত কুঁই কুঁই করে ওরই আশে পাশে রসনা তৃপ্তির আশায় ঘুর ঘুর করতে শুরু করে। তাদের এ বেহায়াপনা বিরক্তির উদ্রেক করে ঐ সব শহুরে লোকদের - ক্রোধান্বিত করে। কোন কোন সময়বা হিংস্র হয়ে উঠতে বাধ্য করে।

এমন এক ঘটনাই ঘটেছিল সেদিন ঐ ভদ্রলোককে ঘিরে। রোজকার মত শহরের বাসার ছিমছাম পরিবেশে টেবিলে সাজানো পঞ্চব্যাঞ্জনে রসনা তৃপ্ত না করে শহরতলীতে গিয়েছিলেন ছায়াঘেরা, পাখির কল-কাকলীতে মুখর কোন জায়গায় কিছুনের জন্য ব্যতিক্রম খুঁজতে। অনেকগুলি মুরগী ও খাসীর জীবনাবসান ঘটিয়ে নামকরা বাবুর্চি সাথে নিয়ে ঐ ভদ্রলোক গিয়েছিলেন পিকনিক খেতে।

মাইকে গানের আওয়াজ আর তাদের হৈ-হুল্লোরে পাখিরা ভয়ে উড়ে পালালেও একদল লোক এসে উপস্থিত হয়েছিল তাদের রং তামাশা দেখতে এক সময় ভীড় পাতলাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছু সংখ্যক দর্শককে আকৃষ্ট করে ধরে রেখেছিল খাবারের মৌ মৌ গন্ধ।

পড়ন্ত বেলায় খাবার পরিবেশন হচ্ছে। দলের সবাই নিজ নিজ প্লেটে সুগন্ধি খাবার নিয়ে গ্রাস তুলেছে আর ঐ হাভাতেরা দূরে দাড়িয়ে থেকে ঘ্রান শুকছে আর দেখছে। অদৃশ্য আকর্ষনে পা পা করে খাবার পরিবেশনের জায়গায় এসে দাড়িয়েছে বেশ কয়েকজন। ব্যাস শুরু হল ধমকানি, গালাগালি, দু একজন তেঁেড়ও এলেন। ওরা দূরে সরে গেল। পরক্ষনেই আবার কি এক দুর্বার আকর্ষনে কাছাকাছি এগিয়ে গেল।

ওরা জানে এসব খাবার ওদের জন্য নয়। শবে বরাতের রাতে ওদের ভাগ্যে পান্তা ভাত আর মরিচ পোড়াই বরাদ্দ হয়েছে, তাই আফসোস থাকলেও কেড়ে খাবার ইচ্ছে নেই। তাই বলে ভদ্রলোকদের মাটিতে ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট হাড্ডি গুলো একটু চেখে দেখতে দোষ কোথায়?

আপত্তি নেই ভেবেই ছোট ছেলেটি ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্টে হাত লাগিয়েছিল। কিন্তু ভদ্রলোকের যে খাওয়া শেষ হয়নি তখনও। প্লেটের পাশে অমন নোংরা চেহারা আর জামা-কাপড় পরা ছেলেটির হাত পরবে ভাবা অসহ্য। তাইত ভদ্রলোক চড় কষিয়েছিলেন।

ছেলেটিরই বা দোষ কি বলুন? ভদ্রলোকেরা ত মাংস খেয়ে হাড্ডি ফেলে দিচ্ছেন। সেগুলি তুলে নিলে তাদের আপত্তি কোথায় - ছেলেটির মনে সেই প্রশ্ন। যাহোক হাড্ডি খেতে গিয়ে উপরি হিসেবে থাপ্পড়ও খেল। মন্দ কি?

সুধী পাঠক এমনটা হয় কেন বলতে পারবেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×