somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিন

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলে সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল একজন প্রতিবেশীর বাড়ির দিকে । লোকজন, হৈ চৈ তখনও বেশী না । তবুও হাবভাবে মনে হল সেখানটায় কিছু একটা হতে যাচ্ছে। কি হবে জানবার জন্য কৌতুহল হল । কিন্তু তখনই সে বাড়ির কাউকে হাতের কাছে পাওয়া গেলনা। তাই ব্যাপার কি জানা হলনা, কৌতুহল চেপে রেখেই প্রাত:কালীন কাযর্াদি সম্পন্ন করার জন্য চলে এলাম ভিতরে ।

কিছুক্ষন পরে আমার দরজার কড়া নড়ে উঠল । দরজা খুলে দেখলাম সেই বাড়ির এক ভদ্রলোক দাড়িয়ে । সম্ভা্সন বিনিময়ের পর তিনি ভিতরে এসে বসলেন, বসেই বললেন তিনি খুব ব্যস্ত, বেশীক্ষন বসবার সময় নেই । তাদের বাড়িতে সামান্য আয়োজন। গুটিকয়েক লোকজনের খানা পিনার ব্যবস্থা করা হয়েছে । বাড়ির কর্তা আমাকে আগেই খুজেছিলেন, দেখা হয়নি । আমি যেন তাদের সঙ্গে রাতে খাবার টেবিলে শরীক হই । ভাবলাম দাওয়াত খাব, কি সুখবর! বাড়ীতে যা খাই আজকাল, যাক অনেকদিন পর ভাল খাবার একটা সুযোগ এলো । এসব ভেবেই বললাম -এতো আমার সৌভাগ্য, নিশ্চয়ই যাব । ভদ্রলোক চলে গেলেন । আমি কিন্তু তখনই উঠতে পারলাম না । চিন্তায় পেয়ে বসল, আমি তো না হয় খাব , হয়ত পেট পুর্ইে খাব । ভাল ভাল জিনিস খাব । কিন্তু ছেলে মেয়ে গুলো? কতদিন ওদের ভাল মাছ খাওয়াতে পারিনি । খাসী , মুরগী যে খাবার বস্তু তা হয়ত ভূলেই গেছে । এইত সেদিন ছোট ছেলেটা খেতে বসে থালায় খানিকটা্ শব্জী দেখে গোস্বা করল । ওর মাকে বলল - কত দিন শুধু শব্জীই খাচ্ছি, এর কোন রকমফের হবেনা মা? - - - যা দেয়া হয়েছে তাই খেতে বলা হল । ছেলে কিন্তু রাজি নয় , বলল মাসের পর মাস শুধু শাক-পাতা খেতে ভাল লাগেনা । বাবাকে বলো মাসে অন্তত : একদিন মাছ গোস্ত খাওয়াতে। ওর কন্ঠে মিনতি ঝরল। কোন উত্তর না পেয়ে ছেলেটি অগত্যা সেগুলো গল:ধকরন করে উঠে পড়েছিল ।
হঠাৎ মনে পড়ল , হাতে অনেক কাজ , বসে থাকলে তো হবেনা , তার চেয়ে কাজে মন দেই গিয়ে । এই যা: ! উৎসব টা কিসের ? এত খানাপিনার আয়োজনই বা কেন? কিছু্ই জিজ্ঞেস করা হল না । যাকগে , সময়মত গিয়ে খেয়ে আসব , আর কি?

বেলা বাড়তে লাগল । উৎসব বাড়ীর উৎসবের পরিমান বাড়তে লাগল, লোকজন বাড়ল , বাড়ল হৈ চৈ। বাড়ী-ঘরকে সুন্দর করে তোলা হল । প্যান্ডেল পড়ল । রঙ্গীন বালবের আলোয় সমস্ত বাড়ী ঝলমল করে উঠল । যথাসময়ে টেবিলে খাবার পরিবেশিত হলো । রকমারী খাবার , প্রচুর খুশবু, খেয়ে সবাই তৃপ্ত। আমিও খেয়েছি খুব। অনেকদিন পর ভাল খাবার খেয়ে যেন একটু বেশী পরিমানেই খেয়েছি । এবার বিদায়ের পালা ।একে একে সকলে বিদায় নিয়ে চলতে শুরু করল । হঠাৎ কে একজন জিজ্ঞেস করল - অনেক খেলাম , প্রচুর আনন্দ পেলাম কিন্তু উৎসব টা কিসের তাতো জানা হলনা । যেন হঠাৎ মনে পড়েছে এভাবেই সকলেই বাড়ির কতর্াকে ধরে বসলেন । ভদ্রলোক নম্র ও লাজুক হেসে বললেন , এমন কিছুনা । জানেন তো আমার কোন ছেলে মেয়ে নেই । তাই গিনি্নর নানা শখ নানা বায়না । তেমনি একটা বায়না মিটাতেই আজকের এই আয়োজন । গিনি্ন একটা বিড়াল পোষেন , আজ তারই জন্মদিন । সকলে একবাক্যে গিনি্নর প্রতি কতর্ার ভালবাসা এবং দরাজ দিলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বিদায় নিল । আমিও বাসায় ফিরলাম।

ফিরে এসেই যত ঝামেলা, অমন সুন্দর খাবারটাও যেন আর হজম হবেনা । আমার সাত বছরের মেয়েটি তখনও ঘুমায়নি। ঢুকতেই জিজ্ঞেস করল , আব্বু কি খেয়েছ ? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারলাম না । কেমন যেন একটা সংকোচ আমার গলা চেপে ধরল । আপনারা না জানলেও আমার তো জানা আছে পুঁইয়ের ডাটা চিবিয়েই আজ ওদের রাতের খাবার শেষ হয়েছে । আমাকে ইতস্তত: করতে দেখে অতটুকু মেয়েও বুঝিবা ওর বাবার অসুবিধাটা বুঝতে পারল । সে তার প্রশ্নের জন্য চাপ সৃষ্টি না করে অন্য একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিল ।ওদের বাড়ীতে উৎসব কিসের ? বললাম - ও বাড়ীতে আজ বেড়ালের জন্মদিন। মেয়েটি জিজ্ঞেস করল জন্মদিন কি আব্বু? উত্তর দিলাম, কিন্তু তাতে ফ্যাসাদ বাড়ল । আমাদের তো ছেলে মেয়ে আছে , তবে আমরা ওদের জন্মদিন পালন করিনা কেন? সহৃদয় পাঠক , এ প্রশ্নের সদুত্তর কিসে হবে? ছোট ছেলেটি তখন ঘুমিয়ে , নইলে আরও কত প্রশ্নের উত্তর দিতে হত খোদাই জানেন।

তখনকার মত ঝামেলা থামল বটে । কিন্তু তার পরের দিন থেকে আর এক নতুন ফ্যাসাদ । কতন পর পর আমার মেয়ের প্রশ্ন সাতই সেপটেম্বর কবে? আর কদিন বাকি ? ও: বুঝতে পারছেন নাতো ! ওটা্ই আমার মেয়ের জন্মতারিখ । হাতের কড় গুনে সে যখন বুঝে ফেলল আর মাত্র চার দিন বাকি তার জন্মদিনের তখন এক নতুন প্রশ্ন করে বসল । আব্বু আমার জন্মদিন পালন করবে? আমাকে চুপ করে াকতে দেখে বলল - আব্বু , ওরা বেড়ালের জন্মদিন পালন করে আর তুমি আমাদের জন্মদিন পালন করনা কেন? আপনারাই বলেন - আমার এই অবোধ শিশুকে কেমনে বোঝাবো যে ওদের অনেক আছে , ওরা কথায় কথায় টাকা খরচ করতে পারে । কিন্তু আমরা ? আমরা যারা মাসে একবার বেতন পাই, উপড়ি প্রাপ্তিও যাদেও ভাগ্যে জোটেনা, তাদের ত দুবেলা মুখে পোরাই দায় তাদের এই সব উটকো কাজ করার সঙ্গতি কোথায়? ওসব ভাগ্যবানদের সাথে চলবার মতা আমাদের কতটুকু ? দুর থেকে ওদের জৌলস দেখে থমকে তাকানো, নিদেন পক্ষে ঈর্ষা করা ছাড়া আর কিইবা করতে পারি ? এসব আমি বুঝলেও আমার ছেলে মেয়েরা বুঝবে কেন? বিশেষ করে আমার সাত বছরের শিশু কন্যা । কাজেই তার আবদার চলতেই থাকল । মেয়ে আমার কেঁদে ফেলল । মেয়ের কান্না দেখে মেয়ের মা অর্থাৎ আমার গিনি্নও এগিয়ে এল বলল , মেয়েটি আজ কয়েকদিন থেকে বায়না করছে , আর এমন কিছু অন্যায্য বায়নাও নয়, করই না ওর জন্মদিনটা এবার। জীবনে তো কিছু করলে না, না করলে নিজের জন্মদিন না করলে আমার । নিদেন পক্ষে বিবাহ - বার্ষিকিটাও তো করতে পারতে এক আধবার। এই দশ বছর হতে না হতেই দিন তারিখ টা পর্যন্ত ভূলতে বসেছি। বললাম তথাস্থ , হবে। মা মেয়ে উভয়ই দেখি খুশি। ওদের মুখ দেখে আমিও খুশি হয়েছিলাম। মেয়েকে বললাম, মা-মনি তোমার জন্মদিন পালন করব ঠিকই তবে ওদের মত পারবনা । বাড়ি ঘর সাজানো হবেনা আর অনেক লোককেও দাওয়াত দিতে পারব না । আমরা নিজেরাই উৎসব করব, মাইক বাজবে না কিন্তু আমরা নিজেরাই গান করব । মেয়ে তাতেই খুশি। কি হবে না হবে তাতে তার ভ্রুপে নেই , ওর জন্মদিন পালন হবে এটাই ওর আনন্দ। দৌড়ে গিয়ে ছোট ভাই টাকে জড়িয়ে ধরল। জান ভাইয়া ! আমার জন্মদিন হবে। আমরা পেট ভরে খাব । কত মজা ! পোলাও কোরমার কথা শুনে ছেলেটাও খুশি । দুই ভাই বোনের সে কি আনন্দ ! দেখে আমারও খানিকটা তৃপ্তি লাগল ।

সাতই সেপটেম্বর এল। অনাড়ম্বর শুধু নয়, নিরাভরন আয়োজন করলাম। কোন অতিথি থাকলনা। মাইক বাজলনা। লাইট জ্বলল না। প্যান্ডেল হল না। বাবুর্চি এলো না। স্রেফ একটি মুরগী পোলাওয়ের ব্যবস্থা। ছেলে মেয়ে গিনি্ন আর আমি মিলে এই ব্যবস্থা। আর তাতে আমরা সবাই মেতে থাকলাম। পাকানো শেষে সবাই মিলে খেতে বসলাম। গিনি্ন ছেলে মেয়ে দুজনার পাতে দুটি রান উঠিয়ে দিতেই মেয়েটি ছোট ভাইকে বলল , আজতো আমার জন্মদিন, কোন মেহমান নেই , তুমিই যেন আমাদের মেহমান। আম্মু , ওকে একটু বেশী বেশী খেতে দিও । মেহমানদের যে আদর যত্ন করে খাওয়াতে হয়। আমি ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম। ও লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করল। পরক্ষনেই মুখ তুলে বলল আব্বু খাও, পোলাউ ঠান্ডা হয়ে গেল ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:৫৮
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×