একে প্রচন্ড গরম তার ওপর লাগাতার হরতাল টানা লোডশেডিং, জীবনটা একেবারে অতিষ্ট করে ছাড়লো। হরতালে কাক ভোরে অফিসে যেতে হয়। এত ভোরে যেয়ে কি করি। তাই ভাবলাম হাঁটা যাক। হাঁটলাম বেশ কিছুক্ষণ। হাঁটতে যেয়ে ঝড়া বকুলের সাথে দেখা হল, কদমের গাছে গুটি ধরতে শুরু করেছে, আরেকটু পর কাঠ গোলাপের মাতাল মাতাল গন্ধ ভেসে এল দূর থেকে। কি মিষ্টি একটা সকাল! এরপর ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে নাস্তা সেরে অফিস শুরু। বেশ ভালই লাগছিল। এত ভাল সইবে কেন। শুরু হয়ে গেল ঘন্টা দুঘন্টা সময় নিয়ে চলা লোডশেডিং। পাম্পটেস্টের একটা এক্সপেরিমেন্ট দেখার জন্য আমরা সব্বাই যেয়ে দাঁড়ালাম মাঠে। উহ গরম কাকে বলে। সবাই ঘেমে নেয়ে একাকার। রোদে চোখ খুলে রাখা কঠিন। এমনি করে কাজটা শেষ হল।
প্রতিদিন এমন করেই কাটে। প্রচন্ড গরম তার ওপর বিদ্যুৎ নেই। এর মাঝেই কাজ করে যেতে হয়। মাঝে মাঝে এই খরতাপে পোড়া সময়ে দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হয়, কেমন সব নিঝুম চুপচাপ লাগে। আজ বিকেলে বিদ্যুৎ যখন নেই, চার্জার ফ্যানটার বাতাসে কুলাচ্ছিল না। দখিনের জানালার পাশের টেবিলটাতে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। ঝিরঝির বাতাস আসতে লাগলো, বেশ ভালই তো।
একসময় চোখ গেল পেছনে মাঠ জুড়ে ঘাসের ফুল ফুটে আছে। দেখতে কাশ ফুলের মতন। সারা মাঠ সাদা হয়ে আছে। এই ফুলগুলো আমাকে ঘোর লাগিয়ে দেয়। আগেও যখন এই দিগন্ত জোড়া ঘাসফুল মোড়ানো মাঠ দেখতাম আমার ইচ্ছে করতো ওখানে খানিকটা গড়িয়ে আসি। এই অদ্ভুত শখটা আমার প্রায়ই হয়। চেরী ব্লসম দেখলেও মনে হয় ভেসে যেয়ে চেরীর বনের উপর শুয়ে থাকি। একই রকম হয় কৃষ্ণচূড়া আর মে ফ্লাওয়ার দেখলেও। হয়তো অলস মানুষ বলেই শুধু গড়ানোর ভাবনাই আসে মনে। গ্রীষ্মকালটা কি ভীষণ চরম ভাবাপন্ন একটা সময়। অথচ প্রকৃতি দুহাত দিয়ে রাঙিয়ে রেখেছে তাকে এই সময়টাতে। চারদিক জুড়ে লাল (কৃষ্ণচূড়া), হলুদ (রাধাচূড়া, সোনালী), বেগুনী (জারুল), হালকা গোলাপী (মে ফ্লাওয়ার)। আর সাদা সাদা ঘাসফুল। বিকেলে কাজের ফাঁকে একটা ছোট্ট সময় সাদা সাদা ঘাসফুল আমাকে বিষন্ন করে দেয়, উদাস করে দেয়, আবার মন ভালও হয়ে যায়। ল্যাপটপে তখন নিচুস্বরে বেজে চলেছে একটা প্রিয় গান। কি ভীষণ সুন্দর একটা দিন।
আবার হরতাল শেষে বাড়ী ফেরাটাও সহজ হয়, রাস্তায় সেই চিরচেনা যানজট নেই।
জীবনটা আসলেই কত সুন্দর!!!!!