পুঁথি- আষাঢ়ে গল্প
--- শ্রাবণ আহমেদ
.
শোনো পুঁথি শোনো সবাই
শোনো দিয়া মন।
আষাঢ়ে এক গল্প আমি
করি যে বর্ণণ।
প্রতি রাতে পাটি পেতে
উঠানে বসিয়া।
বলতো বাবা গল্প মোদের
হাসিয়া হাসিয়া।
একদিন ভোরে রবি'র চাচা
রবি'রে ডাকিলো।
অদূর হইতে তখন ওরে
শেয়ালে হাঁকিলো।
চাচায় বললো চলরে রবি
মাছ ধরিতে যাই।
রবি তখন ঘুমাচ্ছিলো
আপন বিছানায়।
চাচায় বলে, ওরে রবি
ভুলে গেলি নাকি?
সকাল হইতে এখনও বাপ
অনেক সময় বাকি।
তাড়াতাড়ি উঠ রে রবি
চলরে আমার সাথে।
বিলের মাঝে মাছ ধরিবো
পলো লইয়া হাতে।
ঘুম ছাড়িয়া উঠলো রবি
পলো লইলো হাতে।
ছুটিলো সে বিলের পানে
তাঁহার চাচার সাথে।
বিলের ধারে যাইয়া ও সে
জলে গেল নেমে।
চাচা কিন্তু নামিলো না
ডাঙায় গেল থেমে।
মাছ ধরিয়া রবি যখন
চাচার কাছে দেয়।
চাচা তখন সেই মাছগুলো
পেটে পুরে নেয়।
একটা সময় বুঝলো রবি
আসল কাহিনী।
চাচার রূপী জ্বীন গো সেই লোক
জ্বীনেরও রানী।
রবি'র বুকে সাহস ছিল
বড্ড অসামান্য।
বলিলো সে জ্বীনকে ডেকে
ডাকিলেন কী জন্য?
ভয় দেখাবার জায়গা আপনি
অন্যদিকে খুঁজেন।
আমি কিন্তু ভয় করি না
এটা আপনি জানেন।
মাছ মারিয়া দিলাম খেতে
এখন যেতে পারেন।
কৃপা করে এবার আমার
যাবার পথটা ছাড়েন।
ঠিক তখনি মসজিদ হতে
আজান কানে এলো।
জ্বীনের রানী সেখান হইতে
প্রস্থানও করিলো।
যাবার সময় বলে গেল,
প্রাণ না নিলাম তোর।
তোর বুকেতে ছিল শুধু
মায়ের দুধের জোর।
রবির তখন দুই পা হাঁটু
কাঁপছে থরথর করে।
যাচ্ছে পুড়ে শরীর তাঁহার
হঠাৎ আসা জ্বরে।
কোনো মতে কোনো ভাবে
বাড়ি সে ফিরিলো।
সেই থেকে সে শপথ করে
মাছ ধরা ছাড়িলো।
এটুকু বলে বাবা চুপ করে রইলেন। আমরা অধীর আগ্রহে চেয়ে আছি বাবার পানে। পাশে থেকে ছোট বোন বলে উঠলো, আব্বা তারপর?
তখন তিনি আবার শুরু করলেন। বললেন.....
ওরে,
আজকের মতো এখানেই শেষ
আষাঢ়ে এই গল্প।
এসব গল্প শুনতে হয় রে
করে অল্প অল্প।
রাত বুঝি আজ অনেক হলো
চলরে উঠি সবাই।
নতুন গল্প শোনার জন্য
থাক তোরা অপেক্ষায়।