বিয়ে
শ্রাবণ আহমেদ
.
ঘুমে মগ্ন আমি, হঠাৎ কে যেন দিলো ডাক।
উঠে দেখি ঘরের দরজা একহাত ফাঁক।
আয় হায় তবে কী কেউ করলো চুরি আমার ঘরে?
দামী জিনিস সব নিয়ে গেছে বোধ হয় বস্তা ভরে।
তাড়াতাড়ি উঠলাম বিছানা ছেড়ে,
খুজলাম আগে ফোন।
ঘরে ঢুকে Fardin বলে আরে বেডা
কথা আগে শোন।
খুঁজিস কী অমন করে?
হাঁপাচ্ছিস কেন এতো?
দরজা কেন খোলা রেখেছিস?
যদি ফোনটা চুরি হয়ে যেতো!
আমি তারে দিলাম দুইটা থাপ্পড়
বাঁ গাল বরাবর,
গালে হাত দিয়ে বেটা বলে, মারলি কেন?
আমি কী চোর?
বললাম আমি সংশয়ে ছিলাম
ফোন চুরির ভয়ে,
তার উপর আবার তোর ডাক শুনে
দরজার দিকে তাকিয়ে।
দেখলাম দরজার খিল খোলা, দরজা রয়েছে ফাঁক।
পরাণটা তখন উপুত কইরা ছাড়লো খানিক হাক।
যাক গে সে কথা, বল এবার ডাকলি কী জন্য?
খানিক ভেবে বললো সে, দোস্ত আমি আজ ধন্য।
বললাম, হঠাৎ তোর আবার হলোডা কী?
এতো খুশি খুশি কেন?
মনে হচ্ছে কোথাও মাগনা খাওয়ার
দাওয়াত পেয়েছিস যেন।
শুনে হ্লা কয়, তুই জানলি কেমনে
মাগনা খাওয়া কথা?
আমি বললাম, তোর ডাকাডাকিতেই
বুঝেছি আমি সেটা।
আর কোন কথা না বলে আমি,
ব্রাশটা দাঁতে ঘসে,
শার্ট, প্যান্ট আর জুতা পড়ে
দৌড় দিলাম দুজন কষে।
যাবো এখন Tanvir এর কাছে
তারপর Akash এর বাড়িতে,
হঠাৎই দেখলাম রাস্তার ধারে
দাঁড়িয়ে কেউ লাল শাড়িতে।
বললো Fardin দাঁড়া একটু
দেখে আসি মেয়েটা কে।
আমি বললাম আগে খাওয়া,
মেয়ে দেখা বাদ দে।
তবু সে ছুটলো মেয়ের কাছে,
দেখলো তাকে গিয়ে।
খানিক বাদে দেখলাম আমি,
আসছে সে মেয়েটাকে নিয়ে।
আমি তো পুরাই টাশকি, এটা তো Arika,
তাকে দেখে তো আমি শেষ।
জ্ঞান ফিরতেই খেলাম থাপ্পড়, বললো Fardin
বাহ থাপ্পড়টা দিলাম বেশ।
Arika হেসে কয়, ওই শ্রাবু
তুই এতো ক্রাশ খাইস কেন?
মনে হয় সব মেয়েরাই
তোর ক্রাশের পাত্রী যেন।
পাশে থেকে Fardin বলে, ঐ হ্লা তো লুচ্চা, ওর তো লজ্জ শরম কিছুই নাই।
ঝাড়ি দিয়ে বললাম আমি, বাদ দে সব লুচ্চামি, চল আগে ওদের বাড়ি যাই।
আমি আর Fardin হাঁটছি,
সাথে Arika ও হাঁটছে।
তারে হাঁটতে দেখে ভিতরটা
আমার ভীষণ ফাটছে।
আমি জানি এই মেয়ে সুবিধার না,
একগাদা খায় সে।
তাকে সাথে নিলে আমারা
পর্যাপ্ত খাবার পাবো না যে।
তবুও আর কী করার,
Fardin এর প্রেমিকা বলে কথা।
ওহ হো, ভুলেই গিয়েছি
Fardin এর প্রেমিকা কিন্তু মেয়েটা।
খানিক বাদে পৌঁছালাম আমরা
Tanvir এর বাড়িতে,
চোখ পড়লো পাশে থাকা একটা
কালো রংয়ের গাড়িতে।
ব্যাপার কী,
দামী গাড়ি আসলো কোথা থেকে।
Tanvirকে দেখে অবাক আমি,
হাজার হাসি তার মুখে।
বললাম, দাদা তুমি এই
দামী গাড়ি পেলে কোথায়?
আরেব্বা, নজরই দিলো না
সে আমার মূল্যবান কথায়।
পরে শুনলাম গাড়ীটা নাকি
ভাড়া করা বিয়েতে যাবে বলে।
কার বিয়ে কীসের বিয়ে, সেই চিন্তা
আমার মাথায় ঘুরে চলে।
জিজ্ঞেস করাতে বললো দাদা, বিয়ে নাকি তার।
অবাক আমি, এসব শুনছি কী! কানটা হলো ভার।
পাগড়ী, পাঞ্জাবি পড়ে দাদা বসলো গাড়িতে চেপে।
তারপর আমাদের সবার জন্য জায়গা দিলো মেপে।
এক গাড়িতে দশজন উঠবে,
মোট গাড়ি থাকবে পাঁচটা।
এমন ভাব ধরবে সবাই, যেন ভুল না হয়
বর বর সাজটা।
পরে বুঝলাম ভুয়া বিয়ে এটা,
তাদের উদ্দেশ্য বেগতিক।
বড়লোকের মেয়েকে আনবে তুলে,
বুকটা করছে ধিকধিক।
Akash আর Farabi এরা তো
আগে থেকেই সব জানে।
শুধু জানি না আমি,
কথাটা কেউ দেয়নি আমার কানে।
পাঁচটা গাড়িতে লোক সংখ্যা হলো
হাতে গোণা ত্রিশ জন।
Rasel আবির Emi Nawaz Soikot
আরো ছিলো অধিক জন।
মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে
বললো সৈকত ডেকে,
ফারাবী কষে পা রাখলো
তার গাড়িটার ব্রেকে।
শোন তোরা পৌছাবো কিন্তু
Nazim এর চাচার বাড়িতে গিয়ে,
তারই চাচার মেয়েকে আনবো তুলে,
নাম তার অগোছালো মেয়ে।
সবকিছু ফাইনাল করে চললাম
বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে,
ঘন্টা খানিক পর পৌঁছালাম
আমরা সেথায় অবশেষে।
হলো বিয়ের কাজ, মেয়েটার মুখে লাজ,
কাঁদছে দেখলাম সে।
খুঁশিতে গদগদ হবে তখন, পাত্র Tanvir
যখন এই কথাটা শুনবে সে।
খাওয়া দাওয়ার সে কী বাহার,
করলাম সবকিছু সাবার।
ভাবছি অন্য কোনোদিন অন্যকারো
বরযাত্রীর সাজ ধরবো আবার।
রাতে শোনা গেলো পাত্রীপক্ষের
লোকজন হতে,
মেয়ে বিয়ে দিয়েছে তারা অচেনা
কোনো ছেলের সাথে।
শুনে হাসি আসে, সৈকত বসে পাশে
হঠাৎই Nazim এর কল।
ফোনটা ধরেই হাসির রেওয়াজে বললাম,
কী বলবি তাড়াতাড়ি বল।
চিন্তিত কন্ঠে বললো সে আমার বোনের
ভুল মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে।
আমি বললাম, Tanvir এর সাথে বিয়ে দিলে ঠিক হতো, যা হয়েছে ঠিক হয়েছে।
একমাস পরে জানলো সবাই
আসলে সেই ঘটনা,
Tanvir আর অগোছালো মেয়ের বিয়েতে
কিছুরই কমতি ছিলো না।
শান্তভাবেই সমাপ্তি ঘটলো সবকিছুর,
পেলো দাদা মেয়েটাকে।
আমার জন্যও খুঁজবে তারা বলেছে আমায়,
সুন্দরী একটা মেয়েকে।